আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্ধ্যাকালীন চিত্রায়নের দৃশ্যনাট্যের স্বল্পদৈর্ঘ্য মঞ্চায়ন

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
দৃশ্য ১: অন্ধকারের অনুস্বরে ঠোঁটপোড়ানো নেশাগ্রস্থরা সুযোগ পেলেই টার্নস্টাইল ঘুরে পার্কে ঢুকে যায়। বিষন্ন সন্ধায় পুকুর পারের মাচায়, যেখানে বিধবা মাছরাঙা আঁচল লুটিয়ে বসে আছে, পানিতে হেলেঞ্চার ফেনায় ডুবে আছে তেলমাখা ঘুড়ি। দুবাই থেকে আনা পিকনিক স্টেরিওতে বেদুইন কৃতদাসের গান। বালুতে টেনে নেয়া হজরত বেলালের আজানের ফিউশন। মাতালরা স্মৃতিকাতর হতে থাকে- কাঁদে, ক্ষোভে দু:খে দু'হাতে চুল ছিড়ে চিত্কার করে।

পেখম মেলা তাসের মতো বমি ছড়িয়েও তাদের নেশা ছুটে না। সেলোফিন চোখে ঢুলু ঢুলু চাউনিতে আকাশে তাকিয়ে থাকে স্বাদু খোরমার বীচির মতো সিক্ত কিন্তু দৃঢ় তাদের চাউনি। গান শুনে দু'চোখ ভিজে যাওয়া একটা ক্রনিক ডিসঅর্ডার। টোটকা একটা চিকিত্সা জানি, বেশ কাজের। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ঠান্ডা লাল পানির তাইমুম, তারপর টেবিলবাতিতে চুষে খেতে হবে স্কুপ স্কুপ উপন্যাস।

কিন্তু মাতালেরা উম্মী। মাতালদের ভিসাবেপারী মিল্কভিটা কলোনীতে থাকে। সেখান দোনলা প্রহরীরা গেটে বিশ্রামরত আর দেয়ালে ইতর শিশুরা এঁকেছে বিচিত্র হরতাল-ছবি, পালতোলা লাল গরু, সজনে পাতার মই, বলবিয়ারিং এর প্রাইভেট কার্ট এবং রিউম্যাটিক ফিভারের উদাস কিশোরী দৃশ্য ২: শিশুরা লোডশেডিং এর গল্পটা ভালবাসে- এক দেশে ছিল এক রাক্ষুসে মেয়ে। মেয়েটার ১২ হাত শাড়ি। ঘন্টায় ঘন্টায় হ্যাচকা ঝাঁকি দিয়ে ভিজা কালো জামদানী শাড়ি মেলে দেয় গীটারের তারের ট্রান্সফর্মারে।

আর অমনি শাড়িটা হয় ভুত। ভুতের পুরো সংসার উঠে এসেছে রেশমী চুড়ির ৬ তলা টাওয়ারের ছাদে। ছাদের ট্যাঙ্কিতে খিদে পেয়ে পা দোলাচ্ছে। উপরে আঁশ ছাড়ানো এলুমিনিয়ামের কাঁটায় স্বচ্ছ বৃষ্টির ঝোল মেখে আছে। বৃষ্টি শেষে লু হাওয়া যেন গরম কফির ধোঁয়া।

গরম উপেক্ষা করে কালাহারির মরুদ্যানে যাকাতের মিছিল। শুড়ওয়ালা মশা কান নাড়ছে। মশার পিঠে ডেকোরেটর চেয়ারে অর্বুদ অর্বুদ কালো মানুষ। বেগুনী কচুরিঝিলে আড়াইকাঠা দর্শকের চেয়ারে নিযুত মানুষ। বাদামভাজা বাতাসে এসিরীয় নক্ষত্রঘড়িটা টিকটিক করে।

সময় হয়েছে আলো ফিরিয়ে আনার । বুড়ো বাতিওয়ালা মই বেয়ে স্কাইলাইনে উঠছে, বিউটেন লাইটারটা ঠুকছে । এখনই ঘীয়ের বাতি জ্বলবে। রাত ভুলে যাবে নেশাগ্রস্থরা। এভাবেই জুরাসিক দর্শকেরা ভুলে যাবে মেঘের হোল্ডারে ফিউজ হয়ে যাওয়া পুর্নিমার বাল্ব ।

নার্সারী পড়ুয়া হারিক্যান বালকেরা অবশ্য বোরিং চাঁদটাকেই খাতায় আঁকছে। পর্দা উঠে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বাইপাস বুড়োটা সেডিল ঘুম দেয়ার ভান করে। ডিম লাইটের আলোয় গোলাপী স্যান্ডেল দেখতে পায়, বোরকাবৃত নগদ চোখ দেখে। আর দেখতে পায় প্রথম প্রিয় নারীর খোঁপায় গুঁজে দেয়া ফনীমনসার পাপড়ী। প্রিজমের ফুলদানীতে সাজানো মেয়েদের সংখ্যায় আত্মতুষ্টিতে হেসে ফেলে।

ঘুমের মধ্যে মুখ হা করে তুড়ি বাজায়। সিল্করোডের আইল্যান্ড পার হতেই হঠাত্ পুলিশের বাঁশি শোনে । কারন সারি সারি টবে ঘুমাচ্ছে দুর্ধর্ষ ক্যাকটাস টোকাইয়েরা। এদিকে মাইকিং হচ্ছে ইটের তাবুতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ। কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকবে - ১।

রিচার্জেবল সঙ্গম ২। হোমিওপ্যাথি চুমু ৩। আন্ত:দরজা পায়চারী দৃশ্য ৩: কাকবিবাহিত পিতারা শিশুদের ডাকে অনুস্বর ফড়িং, দুর্বা-লতা বা সঞ্চিত গুচ্ছমূল। পুত্র হলে ক্যানভাসারদের পরামর্শে নাম দেয় পারদ, কন্যা হলে মায়াবতী ঘাস। কিশোরের প্যান্টের মাস্তুলে একদিন জলদস্যু শীষ দেয়।

ভাইকিং জলপিস্তল ছোড়ে। বিছানা ডিটারজেন্টে ম্লান হলেও জলদস্যুদের কেউ ঘাটেনা - পাতক বীজের এসকর্টে এরা অনেক বছর ধরে খুঁজছে মাটিচাপা মানিক । পায়নি । পাওয়ার কারণও নেই। অযথা পরিশ্রম দিয়ে ঝরে গেছে বালকের বিরহী দুই যুগ।

সেই সত্যযুগে শুধু বিনিময় প্রথা জানতো নার্সিসাস কিশোরীরা আর সেজন্য ত্বকের ভাঁজের বদলে ত্বক আর মনের বদলে মন লেনাদেনা করতো। মাঝে মাঝে কথার পিপাসাটা আগে ভাগে লিখে দিতো। তবুও লুকিয়ে মোহর চাওয়া শেখে নি। তারপর যখন বালকের মোহর এসেছে সখের সংগ্রহশালা ভরে গিয়েছে অফুরন্ত গোলাপী চপ্পলে। তারপর গল্পটা অন্য।

মনোহারী দোকানে সে সক্রেটিসের একটা নিউজপ্রিন্ট মুখোস পেয়েছিল । বহুজাতিকব্লেড কোম্পানী আয়োজিত সক্রেটিসের লুকএলাইক কনটেস্টে বিজয়ী হলে তার ব্যাপক সুনাম হয়। গণব্যালটে সক্রেটিসদের শিক্ষামন্ত্রী করতে যেন কারো দ্বিমত ছিল না। ফলে মুখোসটা মুখেই লেগে আছে। যদিও মুখোস পরে ঘুমানোর তৃতীয় একটা কারণ ছিল।

জারজ সন্তানেরা তাকে খুঁজেছে ফুটপাথের ঘাটে ঘাটে। এক্স থিউরীতে জারজদের বাবা নেই, কিন্তু থাকার কথা। পাঠ্য বই রিভিশন দেয়া হচ্ছে যাতে আর বাবা না লাগে। সংসদে বিলও আসছে। মাঠের কাগজে ঐশী বাণী ছাপা হয়েছে।

উড়ন্ত চিলেরা আসতে যেতে সেই বাণী বানান করে পড়ে - হে অনুসারী বৃন্দ, হেলেন হোক আর সোনাভান হোক তোমাদের জন্য দুটি ভালবাসা যথেষ্ট। তোমরা ভালবাসার মান উন্নয়ন ঘটাও। হৃদ-উক(হৃদয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক লোভ-ডোজারে পবিত্র সংসারের উচ্ছেদ ঠেকাও । হে অনুসারীবৃন্দ, তোমরা সতর্ক থাকিও যাহাতে সন্তানেরা বখিয়া গিয়া মহামানব হইতে না চায়, না টানে চন্দ্রের নিকোটিন, না করে বই পান, অথচ শীর্ষসুখের আরাধনায় তাহারা রত হইবে, উষ্ণ কম্বলের উমে প্রস্তুত রাখিবে সভ্যতা বিমুখী দন্ডচুম্বক এবং বস্ত্র আচ্ছাদিত বিষাক্ত দেহের ভর। উক্তি লেখাটা বুড়োটা না মানলেও দলের লোকজন লেমিনেট করেছে তার নামে।

বহি:দ্বারে "কুকুর হইতে সাবধান" সাইনবোর্ড যাতে কুকুরদের শান্তিময় নিদ্রা লঙ্ঘিত না হয়। অথচ পাহারাদারকে ফাঁকি দিয়ে একটা জারজ টোকাই ঢুকে পড়েছে সেই মহাবাণীর মাঠে। ছড় ছড় অশ্লীল শব্দে ঘুম ভাঙে প্রহরীদের। অচ্ছুতেরা কি জলবিয়োগ করে বদলে দিচ্ছে পবিত্র বাণী? বলবিয়ারিং কাঠের গাড়ি। শিরীষ আঠার সীলগালা দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে সক্রেটিস বালককে।

মমীকৃত বুড়োটা বৃদ্ধ হয়নি। তবে পুকুর পারের মাচায় তাকে আমৃত্যু বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই। গল্পের ফ্লো নষ্ট করলেও তার সৌভাগ্য ইতিহাস আলো করে সক্রেটিসের মূর্তি হয়ে থাকবে সে। বৃহন্নলা সন্তানেরা উপার্জিত রয়ালিটি পিস পিস করে চেটে খাবে। আর ঘামে কেনা সুস্বাদু মাটিরকেকটিতে বিল্ডার দিয়ে বহুতল ভবন বানাবে।

দৃশ্য ৪: সময়কালের তিন বছরের চান্দ্রকালে মাঝে মাঝেই স্তব্ধতা নেমেছিলো অনিবার্যভাবে । অপলকতার নিরাবেগ কন্ঠস্বরে দোকানীদের কীনোট স্পীচ - গ্লিসারিনের ম্যানিকিন হয়ে আছে বিপননের আদর্শ মেয়েরা। সভাশেষে ডবলডিপ স্থবিরতা থেকে পরিত্রান পেতে এস্কিমো পুরোহিতেরা পয়সামিলাদ পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে । সহস্র মাইল দুরে কোন সমুদ্রের বিলাসে থেমে যাবে ওলন্দাজ পাল, মাছিধরা ট্রলার। ভেসে আসছে সারি সারি কাচের বোতল।

অবশেষে দর্শকেরা হাত তালি দিতে দিতে দেখবে মেসেজের বোতলে অক্ষত আছে হুরমতির কাবিননামা, ইন্টারভিউ জুতার ওবামা-বকলেস আর ভুলোমন ওমর খৈয়ামের মদের ক্যাশমেমো। (সমাপ্ত) -- অন্ধ আগন্তুকের সন্ধা পাঁচালীর স্ক্রিপ্ট শব্দ ও রঙ চুরি করে নির্মিত
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।