শহর কুতুব
পড়, তোমার প্রভুর নামে। সমস্ত নারী-পুরুষ, পাঠ কর, অধ্যয়ন কর। পড়, সকল উৎস খুঁজে, খুঁড়ে দেখো। পড়ার জন্য পরিব্রাজক হয়ে ওঠ। কালামের ভেতরকার বাতেনি ও জাহেরি জ্ঞান জান।
কালামের অক্ষরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাও। আমি ইসলামি জ্ঞানের পোকা; কারণ, আমার প্রকল্প এবং প্রত্যয় ভিন্নতর। সাধন জ্ঞানের উৎস চেনা। ভবে এসেছি। বস্তুময় দুনিয়ায় ভাবের গেরস্থ হবার খায়েশ।
তাই ভাবে বস্তু চিনি। পদার্থের “পরম” নিয়ে ভাবার সময় আমার নাই। আমি শহর কুতুব। নগর দরবেশ। আমার ভাবের আয়নায় আমি আমার স্বরুপ প্রথম দেখি।
প্রতিটি আত্মানুসন্দ্ধান অপর অনুসন্ধানের প্রাথমিক পাঠ। এই জন্য জপ করি। অনেক দিন ধরে জপতপ করি। তপস্যা ছাড়া জপের ফল নাই। সুবিহ সাদিকের আগে অর্থাৎ ঢলপহরের বেশ আগে জিকির শুনলে, শ্রুতি সংক্রান্ত আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেবে।
শ্রুতি কেবল স্মৃতিসত্তার জ্ঞানতাত্ত্বিক পরম্পরা নয়, পরমের আরাধনার জন্য প্রস্তুতি। এই প্রশিক্ষণ কখনো শেষ হয় না। রুকু ও সেজদার চিহ্ন হাঁটু ও কপালে খচিত হয়ে গেলেও না। ইসলামের ‘আরবি’ ও বঙ্গীয় অভিপ্রকাশের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এই অঞ্চলে আমরা সকলেই কখনো হিন্দু, কখনো মুসলমান হয়ে উঠেছি।
বাংলার ভাবজগতে ভাণ নাই। ভান যা কিছু আছে শুধু লীলার দরকারে। যেমনি করে প্রকৃতির সাথে শাদি হয়, কুমারিত্ব-এর মোচন ঘটে।
যা কিছু উৎপাদন করে নাই, তা-ই কুমার, কুমারি। অপঠিত গ্রন্থ কুমারপ্রতিম।
গ্রন্থ যখন নিজে সাক্ষী তখন বড়ো বিপদ। সাক্ষিও প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতার হয়। হাজিরার দিনে হাজির হয়। বাংলাদেশের আদালতে সাক্ষিরা অনেক সময় মিথ্যা সাক্ষি দেয়। আর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সাক্ষিদের উপর হামলাও করে।
অনেক মানুষ আমাকে বলেছেন, তারা ঘরে ইসলামি বই পুস্তক রাখতে ভয় পাচ্ছেন। একসময় ঘরে লালবই রাখা নিষিদ্ধ ছিল। ২০১০ সালের ১৮ জুলাই বিবিসি খবর দিচ্ছে যে বাংলাদেশ সরকার মওদুদির বই নিষিদ্ধ করেছে।
পৃথিবীর বহু গ্রন্থাগার থেকে বাইবেল ও কোরান নির্বাসিত হয়েছে। ১৯২৬ থেকে ১৯৫৬ এই সময়ের মধ্যে তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের অসংখ্য লাইব্রেরি থেকে এই দু’টি ঐশী গ্রন্থ গায়েব করে দেয়া হয়।
বাইবেলের অনেক সংস্করণ বহুবার বহু শাসক হুতাশনে নিক্ষেপ করেছে। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসের এক তারিখে বাইবেলের “জিওভা সাক্ষি” (Jehovah's Witness) রাখবার দায়ে শাস্তি দেয়া হয়েছিলো। বার্মার সামরিক একনায়কতান্ত্রিক সরকার আদিবাসি ভাষায় বাইবেল অনুবাদের উপর ২০০০ সালের দিকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যে কোন পোশাকই যেমন সামরিক পরিধান হয়ে উঠতে পারে, তেমনি যে কোন কিতাব কিংবা “কালামের” নিহিত অর্থ “শাসকশ্রেণির” জন্য কইলজা কাঁপানো হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
আমাদের যা কিছু এলেম (আমরা বলতে আমি ও আমার সাথিদের বোঝাচ্ছি) হাসিল করেছি তার উৎস লাল বই।
এংরাজ আমলে যে দু’চারখানা লাল বই পাওয়া যেতো সেগুলোতো নিষিদ্ধ ছিলোই, পাকিস্তানি আমলে লাল বই একেবারে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। লাল বই বিপ্লবের আয়াত। গণতন্ত্রীরা সকল “ বাতেনি” জ্ঞানের প্রতি প্রচন্ডরকম ক্ষ্যাপা। যে-ই গণতন্ত্রের জমানায় আমরা বাস করি, তা প্রাণ, প্রকৃতি ও মানুষের জন্য হুমকি। গণতন্ত্রের খাঁচা আছে, প্রাণপাখি উড়ে গেছে।
আজকে যাদেরকে আমরা “উদারনৈতিক গণতন্ত্রী” বলি, তারা হ’ল প্রকৃতপক্ষে যাত্রার বিবেক। তারা ভালো মানুষ। “নব্য রক্ষণশীলদের” সামরিক উন্মাদনার জমানায় তারা নুইঅর্ক বা বিলাতে শান্তিবাদী। যখন কালো সৈনিকদের লাশ আসে ইরাক কিংবা আফগানিস্তান থেকে- তখন তাদের মায়েদের অশ্রু মুছিয়ে দেবার কাজটি করে উদারনৈতিক গণতন্ত্রিরা।
২।
জেহাদি বই ও লাল বই
লাল বই আমি পড়েছি। আমি পড়ছি, মানুষের নামে। প্রভুর নামে পড়লেও কোনো অসুবিধা নাই। তবে কার নামে পড়ছি এটা ম্যাটার করে, কী পড়ছি, কেনো পড়ছি, তা-ও। এখানে যা বলছি তা হল, ঐশী জ্ঞানকে জ্ঞান দিয়েই আপনি প্রত্যাখান করতে পারেন।
উইকপিডিয়া মার্কা জ্ঞানের দোকানদারি আমরা করি না। বাজারে প্রকাশিত যে কোন পুস্তক নিষিদ্ধ করার আমরা বিপক্ষে। যে কোন লোককে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কতৃক যখন-তখন ধরে নিয়ে কথা আদায়ের স্বৈরাচারি আচরণের যেমন আমরা ঘোরতর বিরোধী। মৌলানা মওদুদির বইতে আর যা থাকুক, বিপ্লব নাই। শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই এটা অন্ততপক্ষে বোঝেন।
জামায়াতের মধ্যে ইরানপন্থি রাজনৈতিক ধারার পরাজয় ঘটেছে নব্বই দশকের মাঝামাঝি। এখন দলটি মার্কিনীদের পছন্দ যে রকমের ইসলাম, সেরকম করে বয়ান ও তাফসির করছেন। মার্কন সাহায্যপুষ্ট অনেক মৌলনা এখন অনেক বেশী বেশী করে শরিয়তপন্থি হয়ে উঠছেন। ফারায়েজী হবার তৌফিক আল্লাহ পাক তাদেরকে দেন নাই।
বই নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে এইসব টেক্সট পড়ার ব্যাপারে অনেক তরুণদের আগ্রহ বাড়াবে।
ইসলামি জ্ঞানের অধিকারি তরুণরা বিপ্লবি হয়ে উঠতে পারে। এ ঘটনার আরেকটি দিক আছে। লাল বই নিষিদ্ধ করার পর, কিছু কিছু লাল বই হাতে হাতে ঘুরত। তখন কি পড়বো সেটি নিরুপিত হত কী পাওয়া যাচ্ছে আর কি কি পড়লে সহসাই খাঁটি মার্ক্সবাদী হওয়া যাবে, সে-ই দিকে খেয়াল রেখে। বিচ্ছিন্ন, খাপছাড়া পড়াশোনার পরিণতি আমরা জানি।
গোটা আন্দোলনে মধ্যবিত্ত তরুণদের আত্মাহুতির গৌরব ও এতো বড়ো কলিজার জোর, সবকিছু থাকা সত্ত্বেও খুব বেশিদূর আগানো যায় নাই।
নেকাব, চাদর ও বোরখাঃ পোষাকের রাজনীতি
আমি নিজেকে ঢেকে রাখতে চাই। আমি আপনাকে দেখবো, আপনার চোখাচোখি হলে আমার আস্বস্তি হয়। কারণ, আপনি আমাকে নিয়ে কী ভাবেন আমি টের পেয়ে যাই। দুনিয়াব্যপী এখন পোষাকের রাজনীতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
মিসরের আলহাজার মসজিদের একজন ঈমাম ফরাসিদের সমর্থন করে বলার চেষ্টা করেছেন যে, পর্দা পরিহার করলে নাকি ইসলামের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।
তিনি বলেছেন, ইসলামে নিকাব-হিজাবের কোন অস্তিত্ব নাই। কোন কোন দেশে বোরখা ও নিকাব বহু আগ থেকেই নিষিদ্ধ। ২০১০ সালের গোড়ার কথা। ইসলামি দুনিয়ায় এই বিতর্ক আবার নতুন করে এর সমস্ত রাজনীতি নিয়ে হাজির হল।
ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ক্যুইবেক –এর আইনপ্রণেতাগণ বোরখা নিষিদ্ধ করে আইন জারি করলেন। ইতালিতে বোরখাওয়ালিদের ওপর রীতিমতো জরিমানার বিধান তৈরি হলো। আপাদমস্তক আলখেল্লায় পরিবৃত নানদের সহ্য করছে,বোরখা কিংবা মাথায় কাপড় দেয়ার আদলে স্কার্ফপরা নারীরা তাদের কাছে অসহ্য। বিশ্বাসের চিহ্ন পরা যাবে না। পশ্চিমা জগতে অনেক চার্চের দরোজায় তালা পড়েছে।
ওখানে এই মুহুর্তে চরম বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট চলছে, মনীষার আকাল। সকল ধরনের গণতন্ত্র কোম্পানির পায়রুবি করছে। বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ কোন না কোন কোম্পানির দালাল। এই সময়ে ইসলাম এর জীবন দর্শন তাদের কাছে ভীতির কারণ।
কালো পোষাক আমার প্রিয়।
বোরখাও কালো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। বোরখা ‘নারী স্বাধীনতার’ বিরুদ্ধে একটি প্রতিক, নিরাপত্তার জন্য হুমকি, যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা – এরকম যুক্তি দেখানো হচ্ছে। আমি এখানে বোরখার সুবিধা –অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে বসিনি। নিকাব ও বোরখার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবো।
টুপিওয়ালা ও টিকিওয়ালার পার্থক্য
বাঙালি মুসলমানের ঠেকা ছিল নিজেকে বাংগালি প্রমাণ করবার।
এই দায় এবং মোসলমান হবার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে নির্মমভাবে। এই নির্মমতার খবর আমরা রাখি না। আরজ আলি সাহেব এই ক্ষেত্রে নাস্তিকতাবাদী বাংগালি ও প্রগতিশীলতার সনদপত্র বিতরণকারী কমিউনিষ্ট বংশের বাম তরিকার কুলপন্ডিতদের কাছে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠলেন নিজেদের অসারতার, ভাবশুন্যতার আশ্রয়। টুপিওয়ালা ও টিকিওয়ালার পার্থক্য বোঝা চাই। নইলে অম্বেদকারের পাকিস্তান প্রসংগে বইখানার মর্ম না বুঝে বাঙালি হিন্দু ও বাংগাল মোসলমানের হাতের রাখি ডোর একাত্তরে হিন্দুস্তান ও সাধীনতাকামী “পূর্ববঙ্গের” করমর্দন কোনো কারণের মধ্যেই পড়ে না।
। তবুও আশ্রয়দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দরকার।
প্রতিকায়নের সংকটঃ আরক্তিম মুখ
ভারতীয় বাংলা সিনেমায় মোসলমান বলতে যা চিত্রায়ণ করা হয়- একগাছি দাঁড়ি, মাথার মাস্তুলে একটি টুপি। অন্তত মুসলিম কৃষককূল চেহারা মোবারক এইভাবেই আঁকা হয়েছে।
যে সকল মানুষের নিজেদের মুসলিম বলতে বাধে, জিহ্বা আত্মপরিচয়ের ভারে তোতলাতে থাকে, তাদের উদ্দেশে বলছি।
বিচার ভাবনা ও বিবেকের আঙ্গিকে নিজের আত্মপরিচয় লুকিয়ে ফেলা খুবই খারাপ। অনেকে বলে থাকেন, আমি একই সঙ্গে বাঙালি এবং মুসলমান। বাঙালি বলে বলে মুখে ফেনা না তুলে ফেলতে পারলে আপনাকে ‘ইসলামপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত করে সাম্প্রদায়িক বলার পুরানা কৌশল ‘বাম’রা নিতেই পারে। ‘ইসলাম’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীলতা’ এক অন্যের জাতশত্রু। চিরকাল তা-ই ছিল।
১৯৭১ সালে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, শত্রুমুক্ত করেছি। যে আকাংখা জনগণের মনে স্বপ্ন হয়ে উঠেছিল, তা’ নিমেষেই সকালের স্নিগ্ধ শিশিরের মত বেলা বাড়ার সাথে সাথে দিগন্তে মিলিয়ে গেলো।
মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়া হল। খান আতাউর রহমান ছবি বানালেন “আবার তোরা মানুষ হ”। নীতিবাগিশরা মাস্টারমশাইয়ের মতো বলা শুরু করলেন, সমাজের অবক্ষয় শুরু হয়ে গেছে।
শরৎবাবু বাঙালি মধ্যবিত্তের প্রেম ও বিপ্লবের ধারণাটি এতো নিঁখুতভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আমার মনে হয় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই শরৎ চোখে এইসব চরিত্র তাদের চারপাশে দেখা শুরু করলেন। অই সময়কার পল্লীর প্রকৃতি লড়াকু মানুষদের, গরীব-গুর্মাদের কথা শরতের বয়ানে একেবারে জীবন্ত। মানুষ আর প্রকৃতি আর আলাদা হল ১৯০৫ সালের দিকে। মানুষ যখন বিভক্ত, তখন বঙ্গজননী নামক এক বিমূর্ত ধারণার চারপাশে মিলনমৈত্রীর রাজনীতি শুরু হল। এই প্রথম মানুষের রাজনীতি আর প্রকৃতিবাদীদের রাজনীতি (কলকাতার গায়ক, লেখক আর কবি)মিলেমিশে “বাঙালি” নামক এক ‘বিমূর্ত” অভিন্ন জাতিগোষ্ঠির কথা উঠে এলো।
আমরা জানি রাজনীতি আর ইতিহাস এক কথা নয়। রাজনীতির সাথে ক্ষমতা দখলের বিষয়, বিভিন্ন শ্রেণীর ভেতর সমস্ত ঐতিহাসিকভাবে বিরাজমান সমস্ত কাজিয়া-কেরেঙ্গাল, লাঠালাঠি মারামারি,দখল-দমন –যা যেমন আছে, তার অবসান না ঘটিয়ে- এমন এক ভাবালুতা সৃষ্টি করা যাতে সকল নাগরিকগণ এই খোয়াব দেখতে থাকে যে, তারা মিলেমিশে সুখে শান্তিতে দিন গুজরান করতে পারবে।
হেগেলের Doctrine of State সংক্রান্ত মার্ক্সের আলোচনাটি এই ক্ষেত্রে খুবই প্রাসংগিক। মার্ক্স তার গুরুজিকে “uncritical mysticism” [p. 149] এর সমালোচনা করে যে প্রকল্প খাড়া করেন, তা নিয়ে বাংলাদেশ প্রসংগের মধ্যে ঢুকবো, আল্লাহচাহেত ফালা ফালা করে দেখব।
দেখি তো আয়না পড়া দিয়ে কতদূর দেখা যায়।
তার আগে কইয়া রাখিঃ চৈতন্যের “সংস্কার” করতে হলে জগতকে তার নিজের চেতনা সম্পর্কে হোশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
আমার মিছিল
এই মিছিলে ফকির-জকির সবাই আছে, দোয়া বেচা ফার্মগেটের লুলা আছে, বাকবিলাসী সকল ফকির, যাদের কাছে বসে থাকেন স্বয়ং সক্রেটিস: তারা আমার মিছিল করেন।
এই মিছিলে সবাই আসেন, অগ্রভাগে চতুর্থ শ্রেণী থাকেন... আমি মাঝে মাঝে ইতিহাসের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি
এই মিছিলে কালো ও হলুদ শ্রমিক নেতা থাকেন না, শ্রমিক থাকেন
এই মিছিলে পা বাঁকানো, চিররোগা থাকেন
যারা নগর খামার ব্যুলিবার্ডে মধ্যবিত্তের দোয়া আর তাবিজ- তুমার বেচেন.....
এই মিছিলে শিশু আছে, যাদের মায়া ফেরি করে ভাড়াটে মায়েরা
গুলশানেরই মোড়ে
এই মিছিলে নিত্য মরা মানুষ আছে, যারা মরণ খেলায় মেতে ওঠে
পেটের তাগিদে
যারা রোজ মরে যায়, আজরাইলও যাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে যায়
তারা আমার মিছিল ।
যারা তাদের মাঝে এরিস্টেটল, তারা আবার সব বুঝে যায়, সব জেনে যায়
নিদের ক্ষুধায় ঘুমি্য়ে থাকে সোনারগাঁয়ের মোড়ে
খিদার ঘোরে, কিংবা কোনো স্বপ্নহরা নদীর কথা ভেবে
স্বপ্নবৈভবে রাত কেটে যায়
নারী-পুরুষ ঘুমিয়ে থাকে একসাথে
স্বপন থাকে রোজ পাহারায়, পথ চিনে নেয় ইতিহাসের দুই আন্দ্ধাতে । ।
ফুটে থাকা ফল ইশারা
আমার আশালতায় ফুল এসেছে, রাত্রি নিজের রুপে পাগল
মানুষ খুঁজি, মানুষ ভজি___ মানুষের জন্য কাঁদি
আমায় অকারণে দু:খ দেবেন না, আমি এক ডাকে যাই তোমার কাছে
যখন আমি জাগনা থাকি, ঘুমিয়ে গেলে স্বপন আসে, তোমার সাথে রোদন লীলায় কখন যে হয় হাতেখড়ি___ বাচবিচারের সকল সীমা পার হয়ে যাই, কখন যে হয় দিগবিদিশা, আমার ভেতর আমি আর তোমার ভেতর আমি; কার বিহনে কালকরাতে বৃক্ষ যেমন কাটা গুড়ি, আমি তেমন ন্যাড়া বনে বনমোরগের পেখম খুঁজি। ক্লান্ত দুপুর ভ্রান্তি ছড়ায়, কেমন জানি লাগে আমার; এই যে দেখো_ তোমার খোঁপায় মেঘ জমেছে মেলা_ একটু দিও ঝড়ের আভাস, আমি যেন ঝড়-জখমে ডালেফুলে তোমার কাছে নুয়ে পড়ি। আমার বেলা পড়ে যায়, আমার যায় পড়ে যায় বেলা, আমার সকল খোয়াব সত্য হবে; যেমন ধরো, আমরা দু'জন খুব পড়েছি__ এই বসুধা বিদ্যা নিকেতনে। আমার বাঁশের কলম, শিমের কালি... কিংবা আমার ঝর্ণা কলম_ সব লিখেছে, শুধু তোমায় বলতে মানা প্রিয়তমা। ।
আমি কিন্তু কড়া কড়া আশালতার ডালে দিব্যি ফুটে থাকা ফল ইশারা
ঝড়ে দুলি ঝাড়ে- ঝাড়ে, আমার ভিতর নড়ে চড়ে, নিজের বাবু, দীপ্তিধারা
তরঙ্গে তার মন বসেছে, বৈঠা-বৈঠক জলের সাথে, মীনে ও ডলফিনে আজ কী খেলায় যে আত্মহারা। আমার কিন্তু হয় না পুরণ, পুরান কথার রকমারি
কী বিচিত্রা সাজাও তুমি, গল্প শুনি_ গফুর বাদশা বানেছা পরি, কেমন করে রোদের ছায়ায় সাজন-মাজন সকল সারি, খোঁজ পেয়ে যায় সুপ্ত প্রাণের গোপন জাগরণ। অভিমানি জুলেখারা প্রস্ফুটনের বিদ্যা জানে_ কেমন করে ছড়িয়ে দিলো মানববিদ্যা ফুলের মাঝে_ এটি আদি গল্প জানি, মনকুসুমের প্রথম পাঠ। এটি প্রথম কথা জানি, পুষ্প জানে মনের খবর। ।
কিংবা ধরো মনমঞ্জিলে কী বিধানে মকসুদ সব, আমার সাথে যায় খেলে যায় ছোটবেলার মার্বেল খেলা। গাঁতা থাকে গতির অপেক্ষায়: আমি তো আসমানে এক বৃষ্টিমাথায় রোদের সাথে, কুচিকুচি ঘাম-তুষারে তোমায় নিয়ে লুটোপুটি: কী খিলখিলে হেসে উঠি_ যখন দেখি তোমার শরীর, মেঘে-রোদে আদি নারীর, পুরুষ যখন হয়নি পরম, কিংবা স্বামী_ আমার কিন্তুক মন আছে এক ভীষণ হিংসুক: খেলো যদি রোদে পুড়ে, লাল হয় যদি মুখটা ঘুরে, আমি কিন্তু নিরুদ্দেশে যাবো চলে মেঘের সাথে।
চিরচেনা সাথী তুমি, জানো ? আমি কেমন করে বেঁচে থাকি_ বেহেশতের টিকিট বেচি। ফুটপাতে ফুল নিয়ে যারা বসে, তাদের ফাই-ফরমাশ খাটি;
কখনো এক চৌরাস্তায় ভিক্ষা করি মাগন ফকির হয়ে। কখনো ভাই বেঁচে থাকি গোটা দেশের মোট বয়ে।
কখনো ভাই অঙ্গধারি, যাই পড়ে যাই চোট খেয়ে। ।
আমার মুখের কস বেয়ে, গোঙানিটা যায় চলে যায় অনেক দূরে। আমি তোমার ঝুপড়ি ঘরের চালায় ফিরি যখন আমার বাই ওঠে, ঝাড়ে-বংশে খতম হবার আগে আমার বংশধারা চাই। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।