তেমন কিছু বলার নেই
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রাণীজ আমিষের প্রায় ৫৮% মাছ দ্বারা পূরণ হয়ে থাকে। এছাড়াও বিশাল এই জনগোষ্ঠীর আমিষ জাতীয় খাদ্য পূরণে প্রাকৃতিক উপায়ে আহরিত মাছ পর্যাপ্ত নয়। তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দ্রুতবর্ধশীল ও অধিক উৎপাদনশীল মাছের চাষ করা হয়ে থাকে। এেেত্র মাছকে আলাদা ভাবে খাবার সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে মাছের খাবারের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া চাষীরা লাভবান হতে পারছেন না।
এসব দিক বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তেমনি একটি উদ্ভাবন হলো পেরিফাইটন, যা মৎস্য উৎপাদনকে করেছে দুই থেকে তিন গুন। অথচ খরচ খুবই কম। সাধারন খামারীরা সহজেই এ পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সহজ স্বল্পব্যায়ের কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রিয় হচ্ছে নিচ্ছে দেশীয় উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিটি।
দীর্ঘ গবেষণার পর পেরিফাইন পদ্ধতিতে মৎস্য চাষের এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবণ করেছেন দেশের খ্যাতনামা মৎস্যবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল ওহাব।
পেরিফাইটন পদ্ধতিতে রুই মাছের উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১৯০০ কেজি সম্ভব। যেখান স্বাভাবিক পদ্ধতিতে উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১০০০ কেজিরও কম। এছাড়া তেলাপিয়া-চিংড়ি মিশ্রচাষে ১৪৫ দিনে সর্বোচ্চ মোট উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২৪৪৫ কেজি তেলাপিয়া এবং ১৪১ কেজি চিংড়ি পাওয়া গেছে।
প্রধান গবেষক ড. ওহাব জানান, স্বল্পমূল্যে এবং অল্প জমিতে অধিক মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে জনগণের প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণের ল্েয নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে শুরু হয় গবেষণা।
যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড ও ভারতীয় বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে ‘পেরিফাইটন ভিত্তিক মাছচাষ’ প্রকল্পের আওতায় গবেষণা শুরুর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর এ কাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন ।
তিনি বলেন, পেরিফাইটন এক ধরনের শৈবাল যা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন জলজ জীব-অনুজীবের জটিল মিশ্রণ এই পেরিফাইটন, যা জলাশয়ের পানিতে অবস্থিত কোন কিছুর গায়ে লেগে থাকে। এ সকল জীব-অনুজীবের মধ্যে রয়েছে- ব্যাকটেরিয়া, এককোষী প্রাণী, ছত্রাক, ফাইটোপ্লাংটন, জুপ্লাংটনসহ বিভিন্ন তলদেশীয় ও অমেরুদন্ডী প্রাণী। পেরিফাইটন বিভিন্ন মৎস্যকুলকে শুধু আকৃষ্টই করে না বরং এসব অনুজীব মাছ ও চিংড়ি জাতীয় মাছের খুবই প্রিয় এবং পুষ্টিকর খাবারও বটে।
সাধারণত যেসব মাছ গ্রেজিং বা কোনো কিছুর সাথে লেগে থাকা খাবার চেঁচে খায় সেসব মাছই পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য উপযোগী। দেশীয় মৎস্য প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউসসহ তেলাপিয়া ও চিংড়ি পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
পেরিফাইটন এক ধরনের শৈবাল হলেও সাধারন পানিতে এবং সব পরিবেশে এটা জন্মায় না। সাবস্ট্রেট বা ভিত্তিমূলের উপর পেরিফাইটন জন্মে থাকে। এেেত্র হিজল ডাল সবচেয়ে উপযোগী।
তবে বাঁশ, কঞ্চি, শেওড়া ইত্যাদি গাছের ডাল এমনকি পাটের খড়ি, গ্লাস রড, প্লাসটিক দন্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ডালপালা পুকুরজুড়ে বা ধান েেতর কোনে পুঁতে রাখলে তাতেই ওই শৈবাল জাতীয় জুপ্লাংটন বা ফাইটোপ্লাংটন জন্মে থাকে এবং সবুজাভ রঙের একটি আস্তরন পরে। এছাড়া অন্যান্য প্রানীজ খাবারও তৈরি হয়। ওইসব ডালপালার উপর জন্মানো আস্তরন বা শৈবালই পেরিফাইটন যা মাছের প্রিয় খাবার। খাবার প্রয়োগের বাড়তি খরচ লাগে না বিধায় গরীব খামারীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
একই পুকুরে একই বাঁশ বা কঞ্চি প্রায় তিন বছর ব্যবহার করা যায়। এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে মাছের বৃদ্ধির তুলনায় পেরিফাইটন প্রযুক্তিটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধবও বটে।
গবেষক ড. ওহাব প্রযুক্তিটির স¤প্রসারণের গুরুত্ব সম্পর্কে জানান, পরিবেশবান্ধব, ব্যায়স্বল্পতা এবং সহজে সম্পাদনযোগ্য প্রযুক্তিটি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বর্তমানে বিদেশের মাটিতেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যুক্তরাস্ট্র, হাইতি, ইসরায়েল, ঘানাসহ বেশ কয়েকটি দেশে পরীামূলক ব্যবহারও চলছে। তবে স¤প্রসারণ সুবিধার অভাবে দেশের অনেক স্থানেই যথেষ্ট সম্ভাবনাময় এ প্রযুক্তিটির ব্যবহার জানেন না অনেক মাছ চাষী।
এেেত্র সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।