সরকারের সাড়ে চার বছরের মাথায় তাদের সাফল্য তুলে ধরার জন্য হঠাৎ একদিন সকালে রাজধানীবাসী বস্ফািরিত নয়নে দেখল বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে বিভিন্ন ধরনের ছবিসহ আওয়ামী লীগ সরকারের গুণকীর্তন। পরে অবশ্য সেগুলো নামিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে জানা গেল না, সরকারের কোন খাতের খরচে এসব বিলবোর্ড তৈরি, টাঙানো ও নামানোর কাজ সারা হলো। কয়েক দিন আগে পত্রপত্রিকার খবর থেকে জানা গেল যে সরকার বিলবোর্ডগুলো সাত দিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিল। ভাড়াও পরিশোধ করা হবে।
বিষয়টি আগে জানালে বিতর্ক কম হতো। সমালোচনা হয়েছে বাণিজ্যিক হোর্ডিং বা বিলবোর্ড জবরদখল করা নিয়ে। কাজটি যে ভালো হয়নি, তা এখন হয়তো সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও বুঝতে পেরেছেন।
এ ধরনের রাজনৈতিক প্রচারণা বর্তমান বিশ্বে নতুন নয়। তবে রাজনৈতিক প্রচারণার ভালো ও মন্দ দুটি দিকই আছে ।
ভালো হতো যদি শুধু সরকারের সাফল্যগুলো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রচার করা হতো।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ইতিবাচক বা উন্নয়নের সফলতা রয়েছে অনেক, সেগুলো ম্লান হয়েছে বেশ কিছু নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে, যা সরকার অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ফেলতে পারত। কৃষি ও শিক্ষা খাতে সরকারের যথেষ্ট কৃতিত্ব রয়েছে। এ সময়ে দেশে ডিজিটাল প্রসার হয়েছে। গ্রামগঞ্জে কম্পিউটার বা অনলাইন পৌঁছেছে।
কিছু সড়ক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এগুলো দৃশ্যমান। প্রচারণার তেমন দরকার ছিল বলে মনে হয় না।
নেতিবাচক প্রচারণায় হিতে বিপরীত হয়, এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। নেতিবাচক প্রচারণা তখনই হয়, যখন সরকারের ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি অন্য পক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
সরকারের যে সুবিধা রয়েছে, সম সুবিধাবঞ্চিত প্রতিপক্ষ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা, বিশেষ করে এ ধরনের বিলবোর্ডের মাধ্যমে খুব সুফল বয়ে আনে না। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এ ধরনের প্রচারণা দলের একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগালেও যেসব ভোটার নিরপেক্ষ অথবা কাকে সমর্থন দেবেন এখনো নির্ধারণ করতে পারেননি, তাঁরা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকেন, সে ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতির হার কমে আসে। এটা আমরা গাজীপুর নির্বাচনেও দেখেছি।
কানাডায় ১৯৯৩ সালে এবং ২০০৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে যে ধরনের প্রচারণা করেছিল, তার ফলাফল শুভ হয়নি। (কানাডিয়ান ফেডারেল নির্বাচন ২০০৬ দেখুন) যাই হোক, এ প্রচারণার ধরন আমাদের দেশে যে নতুন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে এর পেছনে গবেষণার কোনো বিষয় ছিল কি না, পরিষ্কার নয়। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ক্ষমতাসীন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেছেন
যে রাজধানী থেকে বিলবোর্ড অপসারিত হলেও এ ধরনের প্রচারণা বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে চলবে। আমার বিনীত নিবেদন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গবেষণা ও জনমতের দিকে নীতিনির্ধারকেরা নজর দেবেন, নয়তো হিতে আরও বিপরীত হতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।