আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ইস্-কুল বেলা-২

মিনুর লেখালেখি

আমার ইস্-কুল বেলা-১ সাদা সেলোয়ার সাদা কামিজ নীল ওড়না আর নীল বেল্ট। সুন্দর একটা ড্রেস কিন্তু একটুতেই ময়লা হয়ে যায়। অন্যদিকে ছেলেরা পড়তো খাকি প‌্যান্ট আর সাদা শার্ট। আমাদের ক্লাশে একশোর মতো ছাত্র ছাত্রী ছিল। তিনটা কলাম ছিল টেবিল বেঞ্চ এর।

এর মধ্যে বাম দিকের একটা কলামে বসতাম আমরা আর অন্য দুটি বরাবরই থাকতো ছেলেদের দখলে। প্রথম দিন ক্লাশে গিয়েই যেটা ঘটলো একটা মজার ঘটনা। প্রথম ক্লাশ বাংলা, সিরাজুল স্যারের। তিনি এসেই ঘোষনা করলেন তোমাদের ক্লাশে দুইজন ক্যাপ্টেন থাকবে, একজন ছেলে একজন মেয়ে! তোমাদের ফাস্র্টবয় কে? সামনের সারি থেকে একটা ছেল উঠে দাঁড়ালো। পরিপাটি করে কাপড় চোপড় পরা, চুল আচড়ানো।

আমাদের ফাস্র্টবয়! - কি নাম তোমার? - মো: আরিফুর রহমান। ওরফে পাইলট। - আর মেয়েদের মধ্যে ফাস্র্ট কে? বলেই সামনের টেবিলের দিকে তাকালেন। আমি কখনো সামনে বসিনা। খুব অস্বস্তি লাগে।

২/৩ সারি পরে বসি। আমি উঠে দাঁড়ালাম। স্যার খুব বিরক্ত মুখে বললেন, পিছনে কেন সামনে বসো। তোমরা দুইজন এখন এই ক্লাশের ক্যাপ্টেন। তোমরা কখনো স্কুল কামাই করবা না, তাহলে আরেকজনকে ক্যাপ্টেন বানায় দিব।

এই মেয়ে তুমি সামনে আসো। কি নাম? - মিনু। - ভাল নাম নাই? - আছে স্যার। শারমিন নাহার। সামনে চলে আসলাম।

আসার পথে উঁকি দিয়ে লিটনকে দেখলাম একবার, মুখটা আমশি করে আছে। আহ, কি মধুর একটা জয় । তখনো ক্লাশ ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব কি জানি না। জানলাম টিফিনের সময়। টিফিনের ঠিক আগের ক্লাশ ছিল পন্ডিত স্যারের, তিনি বাংলা ব্যকরণ পড়ান।

তবে আমরা আগে থেকেই সাবধান ছিলাম, কারণ তিনি নাকি অকারণে কথা পছন্দ করেন না, আর পড়া না পারলে তো কথাই নাই, যখন তখন মারেন। বেত নিয়ে ক্লাশে আসেন। ভেঙ্গে গেলে আরেকটা আনতে পাঠান। টিফিনের ঘন্টা পরার দশ মিনিট আগে তিনি বললেন তোদের ক্লাশ ক্যাপ্টেন কে? আমি আর নতুন ছেলেটা উঠে দাঁড়ালাম। বললেন, যা টিফিন নিয়ে আয়।

কি করতে হবে বুঝলাম না। দেখলাম ওই ছেলেটা রওয়ানা দিয়েছে আমি ওর পিছু নিলাম। ক্লাশ থেকে বেড়িয়ে প্রথম যে কথাটা সে বলল তা হলো, তুমি খুব সুন্দর। উত্তরে আমি কি বলেছিলাম মনে নেই। প্রথম দিন ক্লাশে টিফিন নিয়ে এলাম।

দুইটা বড় সিলভারের গামলার মধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট প‌্যাকেট। স্যার বললেন, সবাইকে একটা করে দে। সবাইকে একটা করে দিয়ে দেখা গেল যে, গামলায় পড়ে আছে ৫টা প‌্যাকেট। স্যার বললেন, তোরা একটা করে নিয়ে বাকীটা দিয়ে আয়। আমি একটা নিলাম।

তারপর ফাস্র্টবয় গামলা দুটা দিয়ে এলো। স্যার চলে যাওয়া মাত্র শুরু হয়ে গেল পোটলা খোলা। পোটলার ভিতর কি আছে সবার মধ্যে কৌতুহলের অন্ত নেই। পোটলা খুলে দেখি দুইটা লুচি আর অনেকগুলো বুন্দিয়া। পিছন থেকে লিটন কানের কাছে এসে বললো, গাধী।

আমাকে একটা প‌্যাকেট বেশি দিলে তো এখন ভাগাভাগি করে খেতে পারতাম! নিমিষেই টিফিনের নতুন অভিজ্ঞতার আনন্দ নিভে গেল, চোখ মুখ শক্ত করে বললাম, ক্যাপ্টেন তুই না আমি? লিটন কোনো কথা বলে ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেল। আমিও টিফিনের পোটলা শেষ করে ক্লাশ থেকে বেড়িয়ে মাঠে এলাম। দেখি লিটন চালতার আচার খাচ্ছে। আমি এগিয়ে যেতেই বলল, ক্যাপ্টনরা চালতার আচার খায় না, না পায় না? লিটনের সাথে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল, ভাব হলো নতুন ছেলেটার সাথে। জানলাম ওরা অনেক বড় লোক।

ওর বাবা ফুডে চাকরী করে। ওর বড় একটা বোন আছে, মেডিকেলে পড়ে। ডাক্তার হবে। ডাক্তারদের নাকি অনেক দাম। তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম আমিও ডাক্তার হবো।

কিন্তু ডাক্তার হবার জন্য কি করতে হবে জানি না। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম একদিন, ভাইয়া বললো, ম্যাট্রিক ইন্টারে ভাল রেজাল্ট করতে হবে, তারপর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে...... কয়েকদিন পর যখন সকাল বেলা নিয়মিত ভাবে বকুল ফুল কুড়িয়ে এনে মালা গাথার দিন ফুরিয়ে গেল তখন ভুলে গেলাম ডাক্তার-টাক্তার। তখন শুরু হলো, ছেলেদের সাথে দিনভর খেলা। গ্রীষ্মের ছুটি। কেউ কিছু বলে না।

চারদিকে অজস্র আম-কাঠালের গাছ। যখন তখন কাঁচা কাঁচা আম পাড়ি ঢিল দিয়ে। তখন আমার সাথে একটা ছোট টিনের চাকু থাকতো কোমরে গুজানো আম কাটার জন্য। আর থাকতো লবণ-মরিচের মিশ্রণ। কাঁচা আম যে কি মজা ভাবলে এখনো জিভে পানি এসে পড়ে।

আর সারাদিন চলতো খেলাধুলা, একেবারে ধুলাবালি নিয়ে খেলা। কানামাছি, দাড়িয়া বান্ধা, গোলাছুট কিংবা ফুটবল-ক্রিকেট। হঠাৎ একদিন আমাদের ক্লাশের সেই পরিপাটী ছেলেটা আমাদের খেলার মাঝখানে এসে হাজির। দূর থেকে আমাকে ইশারায় ডাকলো, কাছে গেলাম। বললাম, কি? - তুমি খুব সুন্দর!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।