আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাবাগৃহ ও হজের পটভূমি

Mahmood Khan

কাবা শরিফ আল্লাহর ঘর। একে বেষ্টন করে আছে মসজিদুল হারাম। দুনিয়ার মুসলমান যে যেখানেই থাক, কাবার সঙ্গে তার প্রাণের সম্পর্ক। মক্কার কাবা আর হৃদয় কাবা একাকার হয়ে আছে প্রতিটি মুমিনের মানসপটে। মহান স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের সংযোগ কেন্দ্র হচ্ছে পবিত্র কাবা।

দেহ আর আত্মার যে সম্পর্ক, ইসলামের সঙ্গে কাবার সেরূপ সম্পর্ক। মুসলমানরা ব্যাকুল হয়ে কাবার পানে ছুটে যান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য। পৃথিবীর প্রতিটি মুসলমান ‘কাবাতিশ শারিফাতে আল্লাহু আকবর’ বলে কাবার দিকে মুখ করেই নামাজ আদায় করেন। আল্লাহর প্রেমে পাগল হয়েই প্রেমিকরা হজে যান এবং তাঁর কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে কোরবানি করেন। ভৌগোলিক দিক দিয়ে মক্কা মুকাররমা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত।

মক্কানগর পৃথিবীর মধ্যস্থলে হওয়ায় আল্লাহ তায়ালা ‘বাইতুল্লাহ’ বা ‘কাবাঘর’ মক্কাতেই স্থাপন করেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা সর্বপ্রথম দুনিয়াতে কাবাগৃহ নির্মাণ করে এখানে ইবাদত করেন। কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লার ছায়াতলে সোজাসুজি সপ্তম আসমানে অবস্থিত সম্মানিত মসজিদে বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে ভিত্তি স্থাপন করা হয়। তাফসিরবিদদের মতে, মানবজাতি সৃষ্টির বহু আগে আল্লাহ তায়ালা কাবাগৃহ সৃষ্টি করেন, তখন জিন জাতি জমিনের একমাত্র বাসিন্দা ছিল। কারও মতে, আল্লাহতায়ালা বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন।

হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদুল হারাম। এরপরের মসজিদ হলো মসজিদুল আকসা। মসজিদুল হারাম নির্মাণের ৪০ বছর পর মসজিদুল আকসা নির্মিত হয়। ’ (মুসলিম) ইসলামে আবির্ভাবের আগে থেকেই কাবাঘর জিয়ারত ও হজ আদায়ের প্রচলন ছিল। তাই হজের একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে।

হজরত আদম (আ.) সর্বপ্রথম বাইতুল্লাহ শরিফের হজ আদায় করেন এবং আল্লাহর আদেশে কাবাগৃহ পুনর্র্নির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহ তাঁর বিভিন্ন নবীর ওপর ওহি নাজিলের মাধ্যমে কাবার নির্দিষ্ট স্থান জানিয়ে দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী কাবাগৃহের নির্মাণ ও পুনর্র্নির্মাণের কাজ চলেছে। এভাবে শত শত বছর অতিবাহিত হলেও আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতো, সেখানে সমবেত হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিত এবং আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা করতো। এরপর আল্লাহর নবী হজরত শিস (আ.) কাবাগৃহ পুনর্র্নির্মাণ করলেন। এভাবে দিন দিন একাত্মবাদীদের সংখ্যা বাড়তে থাকল।

অতঃপর হজরত নূহ (আ.)-এর যুগের মহাপ্লাবনে কাবা শরিফ ধসে যায়। আল্লাহর হুকুমে হজরত ইবরাহীম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাঈলকে (আ.) সঙ্গে নিয়ে কাবাগৃহের পুনর্র্নির্মাণ কাজসম্পন্ন করে সৃষ্টিকর্তার দরবারে আকুল প্রার্থনা করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর, আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এ কাজটি কবুল কর। ’ আল্লাহতায়ালা হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দোয়া কবুল করে নির্দেশ দিলেন, ‘হে ইব্রাহীম! তুমি মানুষকে হজের জন্য আহ্বান কর। ’ হজরত ইব্রাহীম (আ.) বললেন, ‘ হে আল্লাহ! সারাবিশ্বের মানুষ কি আমার ঘোষণা শুনবে?’ আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে ইব্রাহীম! তুমি ঘোষণা কর আর তা মানুষের কানে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার।

’ আল্লাহর আদেশে হজরত ইব্রাহীম (আ.) একটি উঁচু স্থানে আরোহণ করলেন এবং ডানে-বাঁয়ে, পূর্ব-পশ্চিমে ফিরে কাবাঘরের হজ (জিয়ারত) করার উদ্দেশ্যে লোকদের প্রতি আহ্বান করে হজের ঘোষণা করেন, ‘হে লোক সকল! বাইতুল্লাহ শরিফের হজ তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। ’ সেদিন হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ঘোষণা আকাশ ও জমিনের সবাই শুনেছে এবং ‘লাব্বাইক’ শব্দ বলে জবাব দিয়েছে। সেদিন যে যতবার ‘লাব্বাইক’ বলে জবাব দিয়েছে, সে ততবার হজ করার সৌভাগ্য লাভ করবে। আল্লাহর খলিলের সেই আহ্বান আজো যেন আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। হজের মৌসুম এলে সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাবাগৃহের পানে ছুটে আসেন লাখো প্রেমিক।

পরনে দুই খ- সাদা কাপড়, মুখে তালবিয়ার মুহুর্মুহু ধ্বনি, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’। বাস্তবে এটি ঐশীপ্রেমের এক অতুলনীয় নিদর্শন। লাব্বাইক ধ্বনি তুলে কাবাগৃহের চারপাশে প্রদক্ষিণ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, সাফা-মারওয়ায় সায়ী বা ছোটাছুটি, মিনায় গিয়ে শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা এসবই হজের কার্যক্রম। মূল লেখক: মুহাম্মদ এনামুল কবীর

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.