যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
মিশরের পরে এবার যাওয়া যাক চীনের দিকে। চীনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। প্রায় হাজার পাচেক বছর থেকে চীনের ইতিহাস জানা যায়।
পৃথিবীর যেখানেই সভ্যতা সেখানেই নদী। তারই ধারাবাহিকতায় চীনে ইয়াং সিকিয়াং এবং হোয়াংহো নামে দুটি নদী আছে। মাঝ খানের সমতল ভূমিতে চীনারা বসবাস শুরু করল।
আস্তে আস্তে দেখা গেল দেশের লোকসংখ্যা বাড়ছে। নিয়ম শৃংখলা রক্ষার জন্য তারা একজন রাজা ঠিক করা।
রাজাকে তারা বলত ঈশ্বরের পুত্র। এখানে জাপানিদের সাথে তাদের একটি পার্থক্য আছে। জাপানিরা রাজাকে ঈশ্বরের পুত্র বলে পুজা করত কিন্তু চীনারা ঈশ্বরের পুত্র বলে আন্তরিক শ্রদ্ধা,ভক্তি করত কিন্তু পুজা করত না। ঈশ্বরের পুত্র হলেই যে ঈশ্বর হবে এমন ধারনা তাদের মধ্যে ছিল না অর্থাৎ তারা পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিল না।
চীনাদের এক রাজা ছিলেন নাম শি-হুয়াংতি,চীনের “প্রথম সম্রাট” বলে তাকে সম্মানিত করা হয়।
তাকে খেয়ালী রাজাও বলা যায়। তার হঠাত মনে হল চীনের যে ইতিহাস লিখা হয়েছে এগুলো লিখে রাখার যোগ্য কিছু না। সুতরাং তিনি ঘোষনা দিলেন চীনের সকল ইতিহাস বই পুড়িয়ে ফেলা হোক। ডাক্তারী,কৃষিবিদ্যা এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র ছাড়া সকল প্রকারের বই পোড়ানোর আদেশ দেয়া হলেও কিছু বই ততকালীন সময়ের পন্ডিতেরা সরিয়ে ফেলেন। তবে অধিকাংশ বই পুড়িয়ে ফেলেন এই রাজা।
শি-হুয়াংতি
এই শি-হুয়াংতি ই চীনের মহাপ্রাচীর নির্মান করেন। চীনের উত্তর দিক থেকে দুধর্ষ হুন নামক অসভ্য দস্যু জাতির আক্রমনের হাত থেকে বাচঁতে এই মহা প্রাচীর নির্মান করা হয়। দেড় হাজার মাইল লম্বা এই প্রাচীরটি ২৫ ফুট চওড়া। এর উপর দিয়ে ছয়জন অশ্বারোহী পাশাপাশি ছুটে যেতে পারত। কয়েক শতাব্দী সময় লাগে এই প্রাচীরের নির্মান কাজ শেষ হতে।
চীনা শব্দ চা য়ের সাথে সবাই কমবেশী পরিচিত। চা অতিথি আপ্যায়নের এক অপরিহার্য জিনিস। চীনারাও অতিথি পরায়ন জাতি হিসেবে পরিচিত। আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের একবার চীন ভ্রমনে গিয়েছিলেন । সঙ্গে ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রী ।
তখন আমের সময়। গাছে গাছে পাকা আম। কবিগুরু ছিলেন আমভক্ত মানুষ। চীন কর্তৃপক্ষ তাই আম নিয়ে গেল বাংলাদেশ থেকে । যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার কারনে আমের দীর্ঘমেয়াদী এই ভ্রমনে আম যেন পচে না যায় সেজন্য রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো হয়েছিল।
কিন্তু আম চীনে যেতে যেতে শুকিয়ে এক আজব বস্তুতে রুপান্তরিত হল । রবীন্দ্রনাথকে রুপান্তরিত আজব আম নামক বস্তুটি দেয়া হল। অতিথি পরায়ন চীনারা তো আর আম চিনে না, তারা কবিগুরুকে তার প্রিয় বস্তু আম দিতে পেরে মহা আহলাদিত হয়ে গালভর্তি হাসি নিয়ে পাশে বসে রইল। তাদের মনরক্ষার জন্য কবিগুরু ও শাত্রী মশাই দুজনই আম খেলেন।
এমন সময় কবিকে ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রী মশাই জিজ্ঞেস করলেন -"কেমন আম খেলেন গুরুদেব ? "
মৃদু হেসে জবাব দিলেন কবি-"আম খেতে খেতে মনে হচ্ছিল এক রবীন্দ্রনাথ আর এক রবীন্দ্রনাথের দাড়িতে তেতুল গুড় মেখে চাটছে ।
"
তবু চীনাদের আতিথেয়তার তারিফ করতে হয়। তারা তো কষ্ট করে আম নিয়ে গিয়েছিল।
কনফুসিয়াস
চীনে জন্ম নেয়া মহাপন্ডিতদের একজন হচ্ছেন কনফুসিয়াস(খ্রীস্টপূর্বঃ ৫৫১-৪৭৯)। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যান, মা পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করেন। কনফুসিয়াস লু নামে একটা স্কুল খোলেন ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা শিখাবার জন্য।
তিনি চীনাদের আদব কায়দা, ভদ্র ব্যবহার শিখার প্রতি জোড় দেন। তার প্রধান শিক্ষা ছিল “ যে ব্যবহার তুমি অন্যের কাছ থেকে পেতে চাও না,অপরের সঙ্গে সে ব্যবহার কর না। "
কনফুসিয়াসের কবর
কনফুসিয়াস যে ধর্মমত প্রচার করেন তা এখনো চীনের কোটি কোটি(প্রায় ত্রিশ কোটির উপরে) মানুষ মেনে চলে।
লাওসে
চীনের আরেক মহাজ্ঞানীর নাম লাওসে(খ্রিস্টপুর্ব ৬০৪)। তিনি যে ধর্মমত প্রচার করেন তাও চীনে প্রসিদ্ধ।
সত্য ও প্রেমের বানী প্রচার করেন লাওসে। তিনি বলতেন” যদি কেউ তোমাকে আঘাত করে তাকেও তুমি ক্ষমা কর, তার সঙ্গে ভাল আচরন কর। "
লাওসে
এ ধর্ম অনেকটা বৌদ্ধধর্মের মত। পৌত্তলিকতা নেই, অহিংসা,ক্ষমা,দয়া ইত্যাদি প্রধান অঙ্গ এবং ঈশ্বর সম্পর্কে এ ধর্ম নীরব।
ঈশ্বরের কথা আসতেই একটা মজার ঘটনা মনে হল।
একবার পঞ্চম শতকের ধর্ম প্রচারক সেন্ট অগাস্টিনকে নাকি একজন প্রশ্ন করেছিল, আচ্ছা, স্বর্গ আর মর্ত তৈরী করার আগে যে অন্তহীন সময় ছিল-তখন বসে বসে সৃষ্টিকর্তা কি করেছিলেন ??
সেটা শুনে অগাস্টিন ভীষন চটে উত্তর দিয়েছিলেন, যারা এই ধরনের অবাঞ্চিত প্রশ্ন করে ,তাদের জন্য নরক তৈরী করেছিলেন
মার্কো পলো
চীনের সম্রাট কুবলাই খার আমলে বিখ্যাত ভেনিসিয় পর্যটক মার্কোপলো(১২৫৬-১৩২৩খ্রিপুর্ব) পোপ দশম গ্রেগরীর চিঠি নিয়ে চীনে এসেছিলেন। এই কুবলাই খা ছিলেন চেঙ্গিস খানের বংশধর। চেঙ্গিস খানের নামে এখন সস্তা দরের মদের বোতলের লেবেল বানানো হলেও তখন এই চেঙ্গিস খান ছিলেন এক মহা আতঙ্কের নাম। চীনের মহা প্রাচীর যে হুন জাতিদের আক্রমনের হাত থেকে বাচার জন্য নির্মিত হয়েছিল চেঙ্গিস খান ছিলেন সেন হুন জাতির এক দুদর্ষ যোদ্ধা। তিনি চীন আক্রমন করে বসলেন।
চীনারা পিকিং নগরীর সিংহদ্বার বন্ধ করে বসে রইল। কিন্তু জাতিতে জাতিতে যুগে যুগে বিশ্বাসঘাতক কিছু মানুষ থাকে। তেমনি কতিপয় বিশ্বাসঘাতক একটি গোপন দরজা খুলে দেয় এবং নারকীয় উল্লাসে চীনের পিকিং নগরীতে সদলবলে ঢুকে পড়েন চেঙ্গিস খান। চেঙ্গিস খান চীনে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে চলে যান পারস্যে। সেখানে ও তৈরী করে আসেন আরেক বিভৎস ইতিহাস।
চেঙ্গিস খান
চেঙ্গিস খান
চীনাদের তখন কার যুগে অর্থাৎ কুবলাই খার আমলের দিকে সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। কবি লি পো নামের একজন রাজসভার একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন।
চীনাদের মধ্যে কিছু উপকথা ছড়িয়ে আছে। তারা মনে করে প্রাচীন কালে তাদের দেশে সুদূরের কোন ভীনগ্রহ হতে কিছু প্রানী আসে। আপনাদের যাদের ভ্রু কুচকে গেছে এই কথাটা শুনে তারা উপকথার পরের অংশ শুনে টাশকি খাবেন।
চীনারা বলে ভীনগ্রহের প্রানীরা এসে তাদের বলেছিল, আমাদের দেশে দূর্ভিক্ষ চলছে, আমাদের কিছু শষ্য দিয়ে তোমরা উপকার কর। আমরা তোমাদের অনেক জিনিস শিখিয়ে দিয়ে যাব। চীনারা এলিয়েনদের শষ্য দিয়ে সাহায্য করে এবং এলিয়েনরা তাদের বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে দিয়ে যায়। এভাবে তারা তৈরী করতে শিখে কাগজ এবং অন্যান্য নানা জিনিস। সাধারনভাবে মানুষের প্রকৃতিই আজব, সে সর্বদা রহস্য পছন্দ করে,চীনারাও তার ব্যতিক্রম নয়।
অসীম আগ্রহে মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে যা ভাবে তার অনেকটাই রহস্যে ঘেরা! হতে পারে যে জিনিস নেই তার প্রতি মানুষের আগ্রহই এর মূল কারন।
কিছুদিন আগে গত ৮ জুলাই চীনে নাকী একটা ফ্লাইং সসার দেখা গেছে। বিশাল আকাশের নীলিমায় ভীন গ্রহবাসীদের নিয়ে চীনের আকাশে এটি দেখা দিয়েছিল বলে অনেকের বিশ্বাস।
ছবি
ফ্লাইং সসার নিয়ে সবচেয়ে প্রাচীন বইটি লিখেছেন একজন চাইনিজ। তিনি হলেন বিজ্ঞানী সেন কু(১০৩১-১০৯৫ খ্রিস্টাব্দ)।
বইটির নাম ড্রিম পুল এসেস। এটি তিনি ১০৮৮খ্রিস্টাব্দে লিখেন। তিনি বইটিতে বলেছেন, আনহুই প্রদেশের একজন এবং জিয়াংসু প্রদেশে একজন লোক রাতের বেলা উড়ন্ত একটি বস্তু দেখেছেন। বস্তুটি এক দরজা বিশিষ্ট। তার মধ্যে থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছিলো উজ্জ্বল আলো।
এরপর অবশ্য অনেকবার এই ফ্লাইং সসার দেখা গেছে।
১। ১২৩৫ সালে জাপানে। এই বছর সেপ্টেম্বর মাসে জেনারেল ইয়োরিতসুমে আর তার সেনাবাহিনী কিয়োটোতে গোলক আকৃতির এক অস্থির আলো দেখেন।
২।
এরপর ১৫৬১ সালে। জার্মানির ন্যুরেমবার্গ। সেখানে তখন যুদ্ধ চলছিলো।
৩। ১৮৬৮ সালের জুলাই মাসে, চিলিতে।
চিলির কপিয়াগো শহরে অন্ কিছু গোলাকার অজানা বস্তু দেখা গিয়েছিলো। আর এর কিছুদিন পরেই এক ঝাক ফ্লাইং সসার দেখা গেলো সারি বেঁধে আকাশ পাড়ি দিচ্ছে। এই ঘটনার পর থেকেই বিজ্ঞানীরা ইউএফও দেখার ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করা শুরু করলেন।
৪। ১৮৭৮ সালে দেখা গেলো আমেরিকায়।
জন মার্টিন নামের এক কৃষক উড়ন্ত চাকতিটি দেখেন। তিনি বলেন, এটি কালো, বড়ো আর বৃত্তাকার দেখতে।
৫। ১৮৮৩ সালের আগস্ট মাসে মেক্সিকোতে। জোসেফ বনিল্লা নামের এক বিজ্ঞানী টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্য পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
এমন সময় তিনি মণির মতো রঙীন কিছু বস্তু দেখলেন। বস্তুগুলোর ছবিও তুলেছিলেন তিনি।
এরকম আরো হাজারো ঘটনা আছে ফ্লাইং সসার কে নিয়ে ।
বিজ্ঞানীরা এখনো খুজে যাচ্ছেন মূল বিষয়টা কি। সাধারনভাবে বলা যায়, প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে।
তাই সে সবসময় রহস্য সৃষ্টি করে রাখে। আর মানূষ পছন্দ করে রহস্যের আবহের মধ্যে থাকতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।