গত বছর শীত এ আমরা দুই দিনের জন্যে শান্তিনিকেতন বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমরা প্রায় বার জনের একটা দল ছিলাম।
কলকাতা থেকে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টার রাস্তা বোলপুর। দুপুর হয়ে গেলো পৌছাতে আমাদের। ছোট দিনের বেলা।
তাই হোটেলে সামান্য একটু বিশ্রাম নিয়েই আমরা রওনা হলাম শান্তিনিকেতনের উদ্দেশে।
তিনটা জিপ নিয়ে রওয়ানা হলাম। আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌছে গেলাম কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে। সত্যি যেন শান্তিনিকেতন। একটা অন্যরকম ভালোলাগায় ভরে উঠলো মন।
দুই পাশে ঘরবাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়। মাঝখান দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। চারিদিকে প্রচুর গাছ। তখন শীতের ছুটি চলছে তাই লোকজন কম। দুই একজনকে দেখলাম সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে।
শাড়ি পড়া মহিলারাও দেখলাম দিব্যি সাইকেল চালাচ্ছে। গাইড জানালো আজকে আমরা এখানে থামবো না। আজকে কোপাই নদীর পাড়ে বেড়াতে যাবো। কাল সারাদিন এখানে ঘুরবো।
মনে পড়লো---কবিগুরু এই পথ ধরে হাটতেন--এইসব পথের ধুলায় কবির পায়ের ধুলো মিশে আছে--মনে করেই কেমন শির শির করে উঠলো গা।
মনে হলো আলখেল্লা পড়ে, একটু বাকা হয়ে, সাদা দাড়িওয়ালা কবিগুরু সত্যি হয়তো হেটে হটে আসছেন ঐ দুরের মেঠোপথটা ধরে। ইচ্ছা করছিলো তক্ষুনি নেমে যেতে।
কিছুদুর যেতেই একটা গ্রামের পথ পেলাম। আমাদের দেশের মতই। গাইড জানালো এখানকার মাটি লাল।
আর এই লাল মাটি নিয়েই কবি গান বেঁধেছিলেন "গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ--------" আমরাও গেয়ে উঠলাম একসাথে ..."গ্রাম ছাড়া ঐ..।
কিছুক্ষন চলার পরে একটা নদীর কাছ এসে থামলাম। অনেক কষ্টে তাকে নদী বলা যায়। শীর্নকায়, হাটু পানি হবে বড় জোর। কিন্তু খুব স্বচ্ছ আর ঠান্ডা পানি।
ছোট্ট একটা সেতু। আমরা সেতুর উপরে গিয়ে দাড়ালাম। একটু একটু ঠান্ডা বাতাস। বিকেল তখন পড়ে এসেছে প্রায়। আসে পাশে কোন বসতি নেই।
সামনে একটা মাঠ আর দুই পাশে অনেক গাছ। আমরা পানিতে পা ডুবালাম। নুড়িতে পা রেখে দাড়ালাম। মাঝে মাঝে যথারীতি ক্যামেরার পোজ দেয়া চলতে থাকলো। দুরে তাকিয়ে দেখি এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে দলের সবাই।
সবার হাসি আর কথার শব্দ পাখির কিচির মিচিরের মতো ভেসে আসছিলো থেকে থেকে। একসময় ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে এলো। আমরা সবাই মিলে নদীর পাড়ে গোল হয়ে বসলাম। কোথা থেকে যেন একটা চা ওয়ালা এসে হাজির। প্লাসটিকের কাপে চা খেলাম সবাই।
হটাৎ দেখি সামনের রাস্তা দিয়ে একদল বাউল গান গাইতে গাইতে আসছে। আমাদের বড় দল দেখে কাছে আসলো। গান শোনাতে অনুরোধ করতেই আসন গেড়ে বসে গান গাইতে শুরু করলো। বাউলরা যে এত বড় দার্শনিক-- সত্যি জানতাম না। ওরা এত সুন্দর গান বাঁধতে পারে!! নিশ্চয়ই বেশি শিক্ষিত না এরা কেউ।
কিন্তু কি অসাধারন জীবনবোধ!! ওরা একটার পর একটা গান গেয়েই চললো। তখন অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিক। আমরা একদল মুগ্ধ ছেলেমেয়ে মাটিতে গোল হয়ে বসে বাউলের গান শুনছি। আশে পাশে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা। কেউ কোন কথা বলছে না।
কেমন ঘোর লাগা চোখমুখ সবার। এমন মুগ্ধ শ্রোতা পেয়ে ওরাও একের পর এক গান গেয়েই চললো। কোথাও কোন শব্দ নাই.....শুধু অনেকক্ষন কান পাতলে কিসের যেন একটা মৃদু শব্দ ভেসে আসে.....নদী যত শান্তই হোক না কেন তার বয়ে চলার একটা শব্দ থাকে....দুই একটা তারা উঠেছে আকাশে তখন.....হিম নামছে আকাশ থেকে...থেমে থেমে হটাৎ বাতাসে শুকনো পাতাদের উড়াউড়ি.....আর বাউলের গান।
তখন আমার কেমন লাগছিলো সেই অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সত্যি সম্ভব না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।