সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
কথায় আছে প্রেম কোন বাধা মানে না। হোক সেটা পরকীয়া। আর তাই দারোগার দ্বিতীয় বধূ হয়েছেন ভ্যান চালকের সুন্দরী স্ত্রী শিল্পী। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেছেন রূপগঞ্জ থানার এএসআই রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ের কথা।
ওদিকে রফিকুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী রহিমা বেগম তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করায় রফিকের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েছেন বলে জানা যায়।
তবে দারোগা রফিক জানান, বিয়ের সময় রহিমা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। চুলে কলপ (কালার করে) দিয়ে তার সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। ৩ মাসের মাথায় রহিমার আসল চেহারা ফুটে ওঠে। ফলে শিল্পীকে বিয়ে করেছেন। অন্যদিকে শিল্পীর স্বামী ইকবাল বলছেন, শিল্পীকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে দারোগা রফিক।
আর শিল্পী বলছে, ইকবাল তাকে কখনও শান্তি দেয়নি। তাকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে চেয়েছিল। তাই সে ইকবালকে ডিভোর্স দিয়েছে। ডিভোর্স দেয়ার পরও ইকবাল তাকে মারধর করে। ফলে ইকবালের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে আদালতে মামলা করেছে শিল্পী।
তবে শিল্পী শঙ্কিত তার দ্বিতীয় সংসার নিয়ে। রফিকের সঙ্গে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে সে সবকিছু করতে রাজি। রফিকও শিল্পীকে নিয়ে সংসার করতে বদ্ধপরিকর। তবে রফিক ও শিল্পীর বিয়ে নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় চলছে।
গত ১৯শে জুলাই রূপগঞ্জ থানার এএসআই রফিকুল ইসলাম ও শিল্পী পালিয়ে গিয়ে গোপনে পরে বিয়ে করেন।
দু’জনেই পালিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। দু’জনেই তখন জানান, একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তবে সেটা পালিয়ে যাওয়ার বা বিয়ে করার মতো নয়। এক পর্যায়ে গত ২৮শে আগস্ট সন্ধ্যায় রফিক সশরীরে বন্দরের কবরস্থান রোড এলাকায় এসে পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যদের বিয়ের কাবিননামা দেখিয়ে শিল্পীকে নিয়ে যান। সঙ্গে শিল্পীর দুই ছেলেমেয়েকেও।
কিন্তু এ ঘটনাটিও শিল্পী অস্বীকার করেন। মানবজমিনকে তখন জানান, রফিকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি। ডিভোর্স দেয়ার পরও ইকবাল তাকে মারপিট করে। তাই মিথ্যা নাটক করে সে রফিকের সঙ্গে চলে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল শিল্পী নিজেই এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানায় দারোগা রফিকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে।
পরে রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিল্পীর সঙ্গে বিয়ের কথা স্বীকার করেন এবং শিল্পীকে নিয়েই বাকি জীবন পার করতে চান বলে জানান।
ঘটনা যেখান থেকে শুরু
এলাকার সূত্রমতে, বন্দর থানায় কর্মরত অবস্থায় গত বছরের শেষের দিকে জমি সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত করতে বন্দরের কবরস্থান রোডে শিল্পীদের পাশের বাসায় যান এএসআই রফিকুল ইসলাম। ওই সময় দারোগা রফিককে দেখে শিল্পীর ভাল লেগে যায়। শিল্পী তার স্বামীকে নেশা ও জুয়া খেলা থেকে ফেরাতে দারোগা রফিকের সাহায্য কামনা করে। এরপর রফিক যে কয়বার মামলার তদন্তে গিয়েছেন সে কয়বার শিল্পীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে।
বিষয়টি শিল্পীর স্বামী ভ্যান চালক ইকবাল আঁচ করতে পেরেও কিছু বলেননি। কিন্তু এক সময় রফিকের চোখ আটকে যায় শিল্পীর দিকে। এক পর্যায়ে রফিক ও শিল্পীর মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুরু হয় দু’জনের মধ্যে মন দেয়া-নেয়া। এক সময় তাদের প্রেম গভীর থেকে গভীরে পৌঁছায়।
এদিকে সামান্য আয়ের সংসার চালাতে হিমশিম খেতো ইকবাল। তার ওপর মদ-জুয়া ছিল নিত্য দিনের নেশা। এতে স্বামীর ওপর অসন্তুষ্ট ছিল শিল্পী। এক সময় রফিক ও শিল্পী নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। এই আশায় শিল্পীও তার সব কিছু সঁপে দেয় রফিকের কাছে।
শুরু হয় রফিক-শিল্পীর অন্য এক ভালবাসা। সব বাধা উপেক্ষা করে তারা একে অপরের কাছাকাছি চলে যায়।
এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রফিক বন্দর থেকে রূপগঞ্জ থানায় বদলি হয়ে যায়। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে শিল্পীর কাছে। ওই সময় দিন-রাত মোবাইলে অসংখ্যবার কথা হতো তাদের।
এর মধ্যে রফিকের কথায় গত ১৪ই জুলাই স্বামী ইকবালকে তালাক দেয় শিল্পী। ১৯শে জুলাই সন্ধ্যায় শিল্পীকে নিয়ে পালিয়ে যায় রফিক এবং বিয়ে করে। কিন্তু চাকরি পেতে রফিকের সমস্যা হতে পারে-এ জন্য দু’জনেই বিয়ের কথাটি গোপন রাখে।
এ খবরে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বাস আফজাল হোসেনের নির্দেশে শিল্পীকে উদ্ধার করতে তৎপর হন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রফিকুল ইসলাম তখন শিল্পীকে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডে তার মায়ের বাসায় পৌঁছে দেন।
শিল্পী-ইকবালের বক্তব্য
শিল্পী জানান, ইকবাল তাকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে চেয়েছিল। ইকবালের নেশা মদ আর তাস খেলা। টাকার জন্য ইকবাল তাকে পর পুরুষের সঙ্গে বিছানায় যেতে বলতো। কিন্তু এতে সে রাজি হয়নি।
তাই চক্রান্ত করে তাকে মদ খাইয়ে মাতাল করার চেষ্টা করে ইকবাল। কিন্তু সে মদ খেলেও মাতাল হয়নি। ঘটনার খারাপ দিক আঁচ করতে পেরে দরজা বন্ধ করে পাশের রুমে ঘুমিয়ে পড়তো শিল্পী। এ সব কারণে ইকবালকে সে ডিভোর্স দেয়। শিল্পী আরও জানায়, ইকবাল একটা বদমাইশ।
দেখতে ‘হেরোনচির মতো। ডিভোর্স দেয়ার পরও তাকে বেশ কয়েকবার মারধর করে সে। এখন রোববার শিল্পী নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে নারায়ণগঞ্জ আদালতে ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে জানান।
তবে ইকবালের পাল্টা অভিযোগ, এএসআই রফিকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে শিল্পী তাকে পাত্তা দিতো না। রফিকের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শিল্পী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে।
রফিকের বক্তব্য
দারোগা রফিকুল ইসলাম জানান, ভালবাসার সূত্র ধরে ২০০৬ সালে রহিমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু রহিমা তাকে এমনভাবে ভালবাসার জালে বন্দি করে যার জন্য সে রহিমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। বিয়ের তিন মাসের মাথায় রহিমার মাথায় বেশ পাকা চুল দেখতে পেয়ে রফিক হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। বিয়ের সময় চুলে কলপ দিয়ে চুল কালো করে রহিমা। এ ছাড়া রহিমা তার ৬ ছেলেমেয়ে পরিচয় দিতো তার বোনের ছেলেমেয়ে হিসেবে।
সে তাদের লালন-পালন করছে। কিন্তু পরে রফিক জানতে পারে রহিমার আগে ৪-৫টি বিয়ে হয়েছিল। ওই সব ঘরের ছেলেমেয়ে তারা। এমনকি রফিককে অনেকের কাছে দেবর বলে পরিচয় দিতো রহিমা। মাঝে মধ্যে রান্নাঘর ও ছাদে ঘুমাতে বলতো রফিককে।
২০০ থেকে ৩০০ টাকা না দেয়া পর্যন্ত রহিমার আগের ঘরের ছেলেমেয়েরা ঘরের দরজা বন্ধ করতে দিতো না। এছাড়াও রাত ২-৩টা পর্যন্ত রফিকের কাছে যায় না রহিমা। কারণ হিসেবে সে রফিককে জানায় ছেলেমেয়ের সামনে তোমার কাছে আসতে লজ্জা লাগে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে রহিমা ও তার ছেলেদের দ্বারা বেশ কয়েকবার মারধরের শিকার হয় রফিক। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ১৪ মাস রফিক জাতিসংঘ মিশনে থাকার সময় তার উপার্জিত টাকা আত্মসাৎ করে রহিমা।
রফিকের রেশনের মালামাল রহিমার ছেলেমেয়েরা নিয়ে যেতো। বাসায় যাওয়ার পর পকেট থেকে সব টাকা রেখে দিয়ে রফিককে ৫০ টাকা দিতো খরচের জন্য। দাম্পত্য জীবনে রফিককে তেমন একটা সময় দেয়নি রহিমা। জৈবিক চাহিদা মিটাতে রহিমা হোটেলে যেতে বলতো রফিককে। রফিকের একমাত্র ছেলেকে পরিচয় দেয়ার সময় রহিমা বলতো ওর মা মারা গেছে।
তাই আমার কাছে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে রফিক জানায়, সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু রহিমার নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যায়। আমি শুধু নীরবে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছি। কারণ পুরুষ নির্যাতনের কথা বাইরে বললেও লজ্জা।
এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই এবং শিল্পীকে বিয়ে করি। বাকি জীবন শিল্পীকে নিয়েই কাটাবো।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।