আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাবার গল্প...... (এইটাকে রূপকথা বলে কি না কে জানে! )

সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ!

কদিন আগে কি না দি আপ্পি রূপকথার গল্প সংকলন করছিল প্রিয় ভাগ্নির জন্য। আপির জন্য এই গল্প টি। .... এক ছিল হাবা। নাম হাবা হলে কি হবে ,হাবার ছিল অনেক বুদ্ধি। হাবার সংসারে এক বুড়ি মা ছাড়া আর কেউ ছিলনা।

হাবা ধান লাগিয়েছে, সারাদিন তার ধান পাহারা দিতেই কেটে যায়। একদিন এক বাঘ হাবার বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো,মানুষের গন্ধ পেয়ে সেই বাঘ তো মহা খুশি। হাবার কাছে এসে বলল,এই তোর নাম কি রে? হাবা তখন ভয়ে ভয়ে বলল,হুজুর আমার নাম হাবা। বাঘ তো হেসেই বাঁচেনা। ''হাবা?মানুষের নাম আবার হাবা হয় নাকিরে?যাক বেশ বেশ,তোর নামটা আমার পছন্দ হয়েছে।

আয় কাছে আয়,জানিস অনেকদিন মানুষের গোস্ত খাওয়া হয়না,হরিন মুরগি খেতে খেতে মুখ পচে গেছে। তোকে খাব এখন বুঝলি? হাবা অনেক কষ্টে ঢোক গিলে বলল হুজুর,খাবেনই যখন তখন একটু সময় দেন,মার থেকে বিদায় নিয়ে আসি। এই বলে হাবা বুদ্ধি করে এক টা ফাঁস বানিয়ে এনে বাঘকে বলল,হুজুর দেখেন,আপনার জন্য কি সুন্দর মালা বানিয়েছি,এটা পরলে আপনাকে যা মানাবেনা! বোকা বাঘ তো মালা পেয়ে খুশিতে ডগমগ। যেমন মাথা ঢুকিয়েছে,অমনি হাবা ছুটতে ছুটতে গেছে রাজার কাছে। রাজা মশাই রাজা মশাই আমি না একটা বাঘ ধরেছি।

রাজা তো বিশ্বাস করেন না কিছুতেই। তুই হলি হাবা,আর তুই ধরেছিস বাঘ? হ্যাঁ রাজা মশাই,শিগগির চলুন। রাজা তখন বুদ্ধি করে বন্দুকটা সাথে নিয়ে চলল। ওদিকে বাঘ তো মালা পরে মহা খুশি। কিন্তু জানো তো,বাঘেরা আবার বন্দুকের গন্ধ পায়।

উহ..মম..মনে হচ্ছে গুলি গুলি গন্ধ! বাঘ এক টানে ফাঁস টাঁস ছিড়ে দে দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে বনে ঢুকে পড়েছে,সামনে ছিল আরো ছয়টা বাঘ। তারা তো অবাক। কিরে অমন দৌড়াচ্ছিস কেন?কি হয়েছে? বাঘ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,আর বলোনা,অনেকদিন মানুষের গোস্ত খাইনা ভেবে,ঐ গাঁয়ের হাবাকে খাব ভাবলাম..... বলেই কান্না জুড়ে দিল। কোনোরকমে সবটা শুনে,ছয় বাঘ তো রেগে গেল,তুই হলি বাঘ,আর একটা মানুষের বাচ্চার ভয়ে কানছিস?ইজ্জত আর কিছু থাকলনারে।

চল চল দেখি,হাবার কেমন সাহস!বাঘ তো কিছুতেই যাবেনা। শেষে জোরাজুরিতে গেল,দূর থেকে হাবা সাতটা বাঘ দেখে ভাবল,সর্বনাশ,সাতটা বাঘ,এবার কি হবে!শেষে এক বুদ্ধি করল হাবা,সাতটা বাঘ এসে হালুম বলতেই,আগ বাড়িয়ে হাবা বলল,হুজুর আমাকে খাবেন?সাত বাঘতো মহা খুশি। কি ভাল মানুষরে বাবা। হু হু খাব। আয় খায়.... হাবা করুন মুখ করে বলল,হুজুর বাড়িতে বুড়ি মা আছে,এই ধানগুলা পেকে গেছে যদি একটু কেটে দিতেন তো,গোলায় ঢুকিয়ে নিশ্চিন্তে মরতাম,না হলে মা কি খাবে।

সাতটা বাঘের মায়া হল। তারা ঘ্যাস ঘ্যাস করে দাঁত দিয়ে নিমেষেই সব ধান কেটে দিল। ওদিকে হাবা এর মধ্যে কামারের কাছে গিয়ে সাতটা শিকল, একটা লোহার ডান্ডা আর একটা ধান গোছানোর জন্য কাঁড়ল বানিয়ে আনল। তারপর ধান কাটা হতেই বাঘ গুলাকে বলল,একটু যদি মেড়ে দিতেন তো,নিশ্চিন্ত হয়ে মরতাম,আমার মোটা গরুটাকেও আপনাদের খেতে দিতাম,বাঘেরাতো খুব খুশি। হাবা তখন শিকল গুলা গলায় পরিয়ে দিল,তারপর বাঘ দিয়ে ধান মাড়তে শুরু করল।

যখনই কোনো বাঘ আস্তে হাঁটে,হাবা লোহার ডান্ডা দিয়ে দেয় পাছার ইপর বাড়ি। সেই যে প্রথম বাঘটা যার গলায় ফাঁস পরিয়ে ছিল হাবা,সে এবার বুদ্ধি করে গলায় শিকল পরে নাই। হাতে কাঁড়ল নিয়ে ধান ছিটলে গুছাতে লাগলো। আর ছয় বাঘের দূর্দশা দেখে মিচকি হাসে সেই প্রথম বাঘটা। মনে মনে ভাবে,কেমন ঠ্যালা?বললাম যে হাবা হল কঠিন জিনিস।

বিশ্বাস তো করলানা। এখন বুঝ .....। হাবা তখন ছুটতে ছুটতে রাজার কাছে গেল,রাজা মশাই রাজা মশাই এবার আমি সাতটা বাঘ ধরেছি। জলদি চলেন। বাঘেরা আমার ধান মেড়ে দিচ্ছে।

রাজা তখন গুলি ভরা বন্দুক নিয়ে সাত বাঘ মারতে এল। বাঘেরা যেই বন্দুকের গন্ধ পেয়েছে,অমনি পড়ি কি মরি করে দে ছুট। পালাতে পালাতে বনের মধ্যে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে দেখে প্রথম বাঘটা সেই কাঁড়ল নিয়েই পালিয়ে এসেছে। আসলে বন্দুকের গন্ধ পেয়ে বাঘের কি আর হুঁশ ছিল! অন্য বাঘ গুলা তাই দেখে তো মাথায় হাত। সর্বনাশ এ কি করেছিস?তুই হাবার কাঁড়ল এনেছিস?শিগগির যা ফেরত দিয়ে আয় নইলে দেখিস হাবা তোর কি করে।

আর শোন,খবরদার হাবার ফাঁদে পা দিসনা। খালি যাবি,দিবি আর চলে আসবি। বুঝলি? বাঘটা তখন ভয়ে ভয়ে কাঁড়ল নিয়ে হাবার বাড়ির দিকে আসতে লাগলো। হাবাতো দুর থেকে দেখেই ফন্দি করে ঘরের বেড়ায় একটু ফুটো করে রাখল। বাঘ দুর থেকেই,হাবা ভাই তোমার কাঁড়লটা ভুল করে নিয়ে গেছিলাম গো।

হাবা ঘরের মধ্য থেকে বলল,তা এনেছো ভাল করেছো,এই ফুটোর মধ্য দিয়ে তোমার লেজের সাথে বেঁধে একটু ঢুকিয়ে দাওতো দেখি। তখন বাঘটা যেই লেজের সাথে বেঁধে ফুটো দিয়ে কাঁড়ল দিতে গেছে,হাবা অমনি ধারালো হাইসা দিয়ে কুচ করে বাঘের লেজ দিল কেটে। বাঘ তো বাবাগো মাগো বলে দৌড়। লেজ কাটা বাঘ তখন ব্যাঁড়্যা বাঘ। ছুটতে ছুটতে বাঘ পিঁপড়ের নরম ঢিবি দেখে ভাবল,একটু বসেই যায়,যেমন বসেছে ,অমনি পিঁপড়ের বাড়ি অন্ধকার হয়ে গেল।

রাগে সব পিঁপড়ে এসে বাঘের কাঁটা লেজের জায়গায় এসে কামড়ে ধরল। বাঘ তখন ওরে বাবা এখানেও হাবা,বলে আবার পালাতে লাগলো। কিছুদুর গিয়ে ঠান্ডা পানির জলা দেখে বাঘ ভাবল এইখানে পাছা ঠেকিয়ে একটু বসি । আহ কি আরাম! ওমনি পানিতে যত জোঁক ছিল সব রক্তের গন্ধ পেয়ে বাঘের পাছা ধরল কামড়ে। বাঘ তো ভয়ে,ওরেব্বাবা এখানেও হাবা বলে কাঁদতে কাঁদতে বন ছেড়েই পালালো।

সবাই জেনে গেল হাবা বাঘ তাড়াতে জানে। পাশের গ্রামে যখন আবার বাঘ গুলো উৎপাত শুরু করল,সবাই এসে হাবাকে ধরল,হাবা বলল এক বস্তা মুড়ি,খই আর গুড় দিতে। সবাই তাই দিল। হাবা তাই নিয়ে উঠলো গাছের উপর। যে গাছের নিচে বাঘ গুলা এসে আড্ডা জমায়,আর কোন বাড়িতে হানা দিবে তা নিয়ে আলোচনা করে।

হাবা আছে গাছের উপর। বসে বসে মুড়ি চাবাই। ওই সাত বাঘ এসে নিজেরা কথা বলা শুরু করেছে। কিন্তু সেই যে প্রথম বাঘটা যার লেজ কেটে দিয়েছিল হাবা,সে তো আবার হাবার গন্ধ ভালমত চিনে। নাক শুঁকতে শুঁকতে বলল,কেমন জানি হাবা হাবা গন্ধ।

সবাই তখন ওরে দেয় ধমক। ব্যাঁড়্যা তুই চুপ থাকতো। আমরা আছি সাতজন,এবার যদি হাবাকে পায়,তো ঘাড় মটকেই ছাড়ব। অমনি উপরে তাকায় দেখে সত্যিই হাবা। তখন বাঘেরা একজনের ঘাড়ে আরেকজন উঠতে শুরু করল হাবাকে ধরার জন্য।

ব্যাঁড়া বাঘ আবার বুদ্ধি করে নিচে থেকে গেছে। আমি বাবা নিচে থাকব,তোরা হাবাকে ধর,আমি ধরছিনা। এবার হাবা তো দেখে মহাবিপদ,বুদ্ধি করে ছড়া কাটা শুরু করল, ''ঘুর তো রে তেলের খুরি ধর তো রে তলকার বেড়ি। '' তলকার ব্যাঁড়্যা বাঘ ভাবল সর্বনাশ আবার আমাকেই ধরতে বলছে। ওরে বাবা আমি গেলাম বলে পিছলে নিচ থেকে যেই পালাতে গেছে অমনি সব বাঘ হুড়মুড় করে পড়বিতো পড় একেকজনের ঘাড়ে।

কারো হাত ভাঙলো,কারো,ঘাড় ভাঙলো। বাঘেরা দেশ ছেড়েই পালালো। গাঁয়ের মানুষ খুশি হয়ে হাবাকে রোজ একটা করে মুরগি দিতে লাগলো আর হাবা মনের সুখে বুড়ি মাকে নিয়ে শান্তিতে বাস করতে লাগলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।