বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...
বাস্তিল দুর্গ । । রেজা ঘটক
কে ওখানে? - কোথায়? - কাঁঠালবাগান।
একটি ঘর- একটা দরজা, একটা জানালা, একটা ঘুলঘুলি;
কে থাকে ওখানে? - কোথায়? - বিচ্ছিন্নপুর।
একটা রশ্মিতে হাঁটু পর্যন্ত ভাঁজানো একটা প্যান্ট ঝুলছে,
তারপাশে সদ্য ঝোলানো একটা ফ্যাট জিন্স, একটা স্কাই চেক
হাফ শার্ট, কয়েকটা ফাঁকা হ্যাঙার তার মধ্যে একটা টি-শার্ট উল্টো করা,
পাশে একটা লাল রুমাল, একটা অফ-হোয়াইট টি-শার্ট উল্টানো, পাশেই
একটা তোয়ালে ঝুলছে তো ঝুলছে- কার জন্য? এবং কেন?
কে ওখানে? - কোথায়? - অনিদ্রাপুরী।
একজোড়া সু, মুখে তার ছেঁড়া মোজা, পাশে একটা
বিশ কেজি’র আপেলের কার্টুন, তার ওপারে একটা প্লেট
উপুর করা, একটা চিড়ার প্যাকেট, এক টুকরা
আখের গুড়ের পাটালি। - খাদ্য মজুদ?
না, কার্টুনের মধ্যে কিছু পুরনো গল্পের পাণ্ডুলিপি
এখনো অবিক্রিত, কিছু পুরনো সংবাদপত্রের চুম্বক
কালেকশান, কিছু ম্যাগাজিন, কিছু বই, আর কিছু
অসমাপ্ত গল্প একটা পলিথিনে মোড়ানো;
কে ওখানে থাকে? - কোথায়? - দিবা ঘুমালয়।
সোনালী আঁশের একটা নয়া ব্যাগ- ভিতরে কী?
একটা পাটের হাতব্যাগ পুরনো অসামপ্ত গল্পে আর
পুরনো পত্রিকায় ভরপুর; তার ওপরে একটা কালো ছোট
ব্যাগ প্রায় ফাঁকা, পকেটে কিছু পুরনো ঠিকানা আর ফোন নম্বর;
তার ওপরে একটা পুরনো ট্রাভেলিং ব্যাগ- কয়েকটা পুরনো গেঞ্জি,
একটা হাফ প্যান্ট আর একটা পুরনো ডায়েরিতে ভরতি- তারপর
চেন দিয়ে আটকানো।
কে ওখানে? - কোথায়? - বসতবাড়ি।
একটা পুরনো ট্রাংক, পুরনো কাগজে মোড়ানো, তার ওপরে
একটা চেক শার্ট লন্ড্রি থেকে ফেরা, একটা হাফ প্যান্ট, একটা
থ্রি কোয়ার্টার, একটা গেঞ্জি- বাসি কাগজে ঢাকা; তার পাশে
একটা মোবাইল চার্জার, কয়েকটা পুরনো সাহিত্য সাময়িকী
আর একটা অসমাপ্ত গল্পের পাণ্ডুলিপি।
আর ট্রাংকের ভিতরে?
একগাদা অকার্যকর সনদের ফাইল, পলিথিনে মোড়ানো
একগাদা পুরনো চিঠিপত্র, একটা পুরনো হাফ প্যান্ট
একটা পুরনো ছবির অ্যালবাম, কিছু অসমাপ্ত গল্পের পাণ্ডুলিপি
কিছু হারানো দিনের স্মৃতি, কয়েকটা চোরা বই, কয়েকটা কেনা বই
আর কয়েকটা পুরনো দিনের লেখায় ভরা ডায়েরি
আর ফাইল ভরতি কিছু পুরনো ম্যাগাজিন
একটা পুরনো সানগ্লাস, একটা স্কেল আর কিছু পুরনো কলম
কোনটায় কালি নেই- সব স্মৃতির চিন্থ।
কে ওখানে? - কোথায়? - ট্রাংকনগরি।
একটা ব্যাগ, কতগুলো ফাইল অসমাপ্ত লেখায় ভরা
কয়েকটা পুরনো খাতা, একটা প্লাস্টিক ফাইল- পুরনো সংবাদপত্রে
ভরতি, দুইটা পুরনো ডায়েরি, একটা নোট বুক, একটা ইংলিশ বই
‘কমন মিসটেক ইন ইংলিশ’ আর একখানা উপন্যাস- হেনরি রাইডার
হ্যাগার্ড-এর ‘এরিক ব্রাইটিজ’;
একটা কস টেপ, তিনটা পেন্সিল, ছয়টা কলম, একটা মার্কার
একটা মালবরো সিখারেটের খালি প্যাকেট, কিছু ভিজিটিং কার্ড
একটা প্যারিস সেন্ট, একটা ফপি ডিস্ক বক্স, তার মধ্যে একটা ফপি ডিক্স,
দুইটা দিয়াশলাই, এক প্যাকেট ভাঙা গোল্ডলিফ,
তার নিচে কাগজে মোড়ানো কিছু মারিজুয়ানা।
পাশে একটা টুথ ব্রাশ, একটা কোলগেট ফ্যামিলি সাইজ টুথপেস্ট
একটা ওয়ান টাইম রেজার, একটা কোল সেভিং ক্রিম, একটা ওষুধের প্যাকেট
একটা আইড্রপ, একটা সেভিং ব্রাশ আর একটা দিয়াশলাই।
কে ওখানে? - কোথায়? - আরসিনগর।
পুরনো ক্যালেন্ডারের পাতা কসটেপে জোড়া দিয়ে বানানো একটা ম্যাট
তার ওপরে আগে জানালার পর্দা হিসেবে ব্যবহৃত একটা প্যান্টের কাপড়
কিছুটা ছেঁড়া, তার ওপরে একটা নয়া তোশক, একটা পুরনো কাঁথায় ঢাকা;
তার ওপরে একটা কবিতার বই, একটা উপন্যাস- ওসামু দাজাই-এর ‘দি
সেটিং সান’, একটা পুরনো ডায়েরি, একটা ব্যবহারিক বাংলা অভিধান,
কয়েকটা কালের খেয়া, একটা নয়া নোট বুক থরে থরে সাজানো,
তার পাশেই একটা দিয়াশলাই। এসবই একপাশে আর অন্যপাশে?
একটা বোর্ডে অসমাপ্ত কিছু লেখনি, কয়েকটা শাদা পৃষ্ঠা, দুইটা পুরনো
পত্রিকা, একটা কালের খেয়া, একটা নয়া ডায়েরি, পাশেই একটা গোল্ডলিফের
প্যাকেট, ভিতরে তিনটা সিখারেট, তার ওপরে একটা দিয়াশলাই, একটা অ্যাসট্রে
তার মধ্যে একটা গাঁজার গোয়া াণিক আগেই খাওয়া হয়েছে, পাশেই একটা পানির বোতল, দুইটা বাঁশের বসার মোড়া, একটার ওপরে গত সপ্তাহের স্টার ম্যাগাজিন,
তার নিচে ফোরে দুই ইঞ্চি একটা পোড়া ক্যান্ডেল, একটা ১০০ ওয়াটের ফিলিপস
লাইটের বাকশো - এখনো অস্থায়ী বা বিকল্প অ্যাসট্রে; পাশেই একগাদা পুরনো সংবাদপত্র- আমাদের সময়, দি ডেইলি স্টার, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক একাত্তর, সাপ্তাহিক এখন, একটা আর্ট কালেকশান-
হাশেম খানের চিত্রমালা ২০০৫- মধুর গম্ভীর।
কে ওখানে? - কোথায়? - চিত্রপুরী।
একটা ঝাড়–, একটা ময়লার ঝুড়ি প্রায় ভরতি
পাশেই এক জোড়া পুরনো বার্মিজ স্যান্ডেল।
বিছানায় আর কী আছে?
- একটা মোবাইল ফোন, একটা উলঙ্গ বালিশ
আর কাগজে মোড়ানো এক কপি ‘গুরু’- নাসির আলী মামুন-এর
কালেকশান ‘সুলতান এর যতো সময়’।
আর কিছু আছে ওখানে?
একটা ১০০ ওয়াটের ভালব সারারাত অনাহারে জ্বলে আছে।
কে ওখানে? - কোথায়? - বিছানায় শুয়ে।
একটা আউলা লোক- কলম পিশে চলতে চায়, পারে না,
চাকরি নেই, পকেটে টাকা পয়সা নেই, খাবার নেই;
বন্ধু নেই, বান্ধবী নেই, ভাইবোন নেই, আত্মীয়স্বজন নেই
মনের মানুষ হয়তো নেই! কী আছে লোকটার?
অনেক হারানো গল্প, অনেক অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি,
ছাপা না হওয়া অনেক কবিতা, ক্লান্ত দুটো চোখ
আর রাশি রাশি দীর্ঘশ্বাসে লুকানো একটা ক্ষীণকায় শরীর।
কে ওখানে? - কোথায়? - অরুণালয়ে।
একজন ঋণগ্রস্থ মানুষ- খবরের কাগজ, সিখারেট
আর ফোন বিল যার এখনো বাকি; কয়েকজন
পরিচিত লোকও টাকাপয়সা পায়, আর শুনেছি
কয়েকটা পত্রিকা অফিসে লোকটার কিছু লেখক বিল পাওনা আছে,
যা দিয়ে ঋৃণ শোধ হবার নয়।
কে ওখানে? - কোথায়? - লিখে যাচ্ছে?
আমি। এই ঘরের নতুন ভাড়াটিয়া ।
৩০ এপ্রিল ২০০৬
৩২/১, কাঁঠালবাগান, ঢাকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।