যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.
গত ১০ / ১৫ বছর আগেও আমাদের দেশ এ মোবাইল একটা অচেনা শব্দ ছিল বলা চলে । মানুষ নাকি আগে ১ লাখ টাকা দিয়েও মোবাইল কিনেছে । এত সহজলভ্য জিনিসও ছিল না এটা । মানুষ নিতান্ত দরকার ছাড়া এই জিনিসটা কিনতো না । কিন্তু এখন হাতে হাতে মোবাইল ।
মোবাইল এর সহজলভ্যতার ফলে এখন সবার হাতেই আছে তা ।
দেশ এর মানুষ ভাবতে পারে নাই যে আমাদের দেশ এ এমন হয়ে যাবে মোবাইল এর বাজার । এতটা বিশাল এক বাজার হবে এটা কেউ ধারনাও করে নাই । সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে । এবং যাচ্ছে আর ভবিষ্যতেও যাবে ।
গ্রামীন ফোন যখন তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যাকেজ djuice নিয়ে বাজারে আসে মুলোত তখন থেকেই বলা যায় মোবাইল এর বিপ্লব ঘটা শুরু হয় । এমন ও দেখা গিয়েছে যাদের সিম আছে ২ / ৩ মত তারাও পর্যন্ত এই সিম কিনেছে । প্রচুর বিক্রি হয়েছে এই সিম । আর এই কারণে গ্রামীন ফোন এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে । অথচ অনেকেই হয়ত জানেন না যে djuice আসলে গ্রামীন এর নিজের না ।
এটা বিদেশি এক কোম্পানি এর সাথে গ্রামীন চুক্তি করে এদেশে নিয়ে আসে নিজের product বলে ।
এটা হয়ত সবাই জানেন যে গ্রামীন ফোন তাদের একমাত্র network এর কারণে এতদুর আসতে পেরেছে । গ্রামীন ফোন যারা ব্যবহার করেন বা আগে করতেন এখন আর করছেন না সবাই জানেন তাদের call rate অনেক বেশি । তারপর ও দেশের বেশির ভাগ মানুষ গ্রামীন এর উপর আস্থা রেখেছে । আর সুযোগ বুঝে আমাদের উপর তারা অতিরিক্ত কল রেট আদায় করেছে বার বার ।
আমরা তা জেনেও তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি ।
Djuice যখন আসে তখন থেকেই আসলে অন্য এক যুগ এ আমরা পা রাখা শুরু করি । যার নাম হল djuice generation . রাত বিরাতে কল রেট পুরা ফ্রী করে দেয়ার চল শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকেই । আর নানাবিধ সুবিধা ছিল সেই সময়ে । ফ্রী করে দেয়ার ফলে সমানে শুরু হয়েছিল রাত বিরাতে ফোনে কথা বলা ।
আর সিম এর দাম কম হওয়াতে একেকজন কে দেখেছি ২ / ৩ টা করে কিনতে ।
সেই সময়ে যত ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটেছে তা আসলেই কল্পনাতিত । সামাজিক অবক্ষয়ের শুরুটা আমার মনে হয় সেখান থেকে শুরু হয়েছিল । কেন হবে না ?? রাত ১২ টার পর ফ্রী । তখন ইচ্ছা মত মনের খায়েশ পুরণ করে কথা বলা যেত ।
এমন ও হয়েছে চেনা নাই জানা নাই রং নং এ ফোন করে ঘন্টার পর ঘন্টার কথা বলতো সবাই । ইচ্ছা করেই অপরিচিত নম্বর এ ফোন করে আলাপন শুরু হত । একেকজন ২ / ৩ টা করে সিম এর বদৌলতে অনেকজনের সাথে সম্পর্ক রেখেছে । পরে আবার ধরাও খেয়েছে ।
এভাবে করেই সমাজের ভিত্তিটা নড়ে গিয়েছে ।
অপরাধ করার প্রবনতা বেড়ে গিয়েছেল । সামাজিক মূল্যবোধ, সম্মান সব কিছুকে জলাজ্ঞলি দিয়েছে মানুষ । এখন যত প্রেম ভালবাসা বা পরকীয়া যাই বলেন না কেন এসব এর বেশির ভাগই শুরু সেই সময় থেকেই । এর ফলে ঘটেছে অনেক সামাজিক অপরাধ যার মধ্যে হয়ত অনেক ঘটনা আমাদের চোখ এর আড়ালে ঘটেছে । মুলত গ্রামীন এর target ছিল কম বয়সি ছেলে / মেয়েরা ।
গ্রামীন তা ভাল মতই করতে পেরেছে । কিন্তু এই সব কম বয়সি ছেলে / মেয়েদের শিক্ষনীয় কিছু দেয়ার বদলে তারা অশিক্ষনীয় অনেক কিছুই দিয়ে গিয়েছে ।
এমন ও শোনা গিয়েছে বউ বাচ্চা থাকা সত্তেও হাসবেন্ড রাতে সমানে কথা বলত এক জনের সাথে । জিজ্ঞেস করলে বলত অফিস এর কাজ এ কথা বলছে । স্ত্রী বিষয়টা বুঝতে পারে অনেক পরে ।
কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গিয়েছে । সে জানতে পারে তার হাসবেন্ড পরকীয়া তে আসক্ত । কত শত সংসার এভাবে নষ্ট হয়েছে তার হিসাব গ্রামীন ফোন রাখে নাই । আবার কত শত সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে তার হিসাব কেউ দিতে পারবে না ।
গ্রামীন ফোন আমাদের যতটা না দিয়েছে তার থেকে অনেক ক্ষতি করে দিয়ে গিয়েছে ।
এর থেকে লাভবান আসলে কে হয়েছে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।