I am a man with too many dreams; I know all of them could not come to the light but my process are continuous. ইতিহাসের দায়মুক্তি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ
উপমহাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আকাংখা নিয়ে ২৬ শে আগষ্ট ১৯৪১ সালে পঞ্জাবের লাহোরে সৈয়দ আবুল আ’লা মওদুদীর নেতৃত্বে ও তাঁরই ধর্মীয় দর্শনের আলোকে প্রতিষ্ঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী । প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি জামায়াতে ইসলামীকে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর ব্যাখ্যার সাথে ভিন্নমত পোষণকারী প্রভাবশালী আলেমদের প্রবল বিরুধীতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে । তারপরও দলটি উত্তরোত্তর শক্তি ও প্রভাব বিস্তারকারী দল হিসেবে টিকে আছে । পৃথিবীতে যে ক’টি রাজনৈতিক ধর্মীয় গোষ্ঠী অত্যন্ত শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির উপর দন্ডায়মান তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে অন্যতম । বলা হয়ে থাকে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কাঠামোর দৃঢ়তা যেকোন সামরিক বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোর দৃঢ়তার চেয়েও শক্তিশালী ।
কথাটি অতিরঞ্জিত কিনা বলা যায় না তবে জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত ও কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সরকার ও নিজ আদর্শবিরুধী শক্তির প্রবল বিরুধিতা সত্ত্বেও প্রভাশালী একটি শক্তিরুপে দলটির টিকে থাকা তার সাংগঠনিক কাঠামোর মজবুতিকে কিছুটা হলেও সত্যায়ন করে ।
১৯৪৭ এর ভারত বিভক্তি ও ১৯৭১ এ পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীকে তার অভীষ্ট্য লক্ষ্য অর্জনে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় বাধ্য করে । যতদুর জানা যায় আফগানিস্তান, শ্রীলংকা ও বৃটেনের মত দেশেও সংগঠনটির জোড়ালো কার্যক্রম বর্তমান এবং আদর্শিক ঐক্যের কারনে তারা প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে একটা লিয়াজো রক্ষা করে চলে ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জামায়াতে ইসলামী ও তদীয় আদর্শে বিশ্বাসী একাধিক সংগঠন বিদ্যমান থাকলেও বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর অতীত অবস্থান ও কার্যক্রমের ফলে তাকে বরাবর বিতর্ক ও সন্দেহের জালে আবদ্ধ রেখেছে । এ জন্য যেমন বিরুধী শক্তির অব্যাহত অপপ্রচার দায়ী ঠিক তেমনিভাবে জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক উট পাখির ন্যায় মাটিতে মাথা গুঁজে অতীত কর্মকান্ড ও বাস্তবতাকে অস্বীকারের প্রবণতাও কম দায়ী নয় ।
বরং সময়ে সময়ে নিজেদের বিতর্কিত অতীতকে ধামাচাপা দেয়ার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর বহু পদক্ষেপ তার বিরুধী শক্তির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে এবং রাজনীতির মাঠে তাকে আরো বেশী সংকটে নিক্ষেপ করেছে । বারবার সুযোগ আসা সত্তেও দলটি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে অথবা এর অপব্যবহার করেছে । ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যেসকল ভুল করেছে তারমধ্যে মারত্মক ভুল যেমন আছে পাশাপাশি সশোধনযোগ্য রাজনৈতিক ভুলও রয়েছে ।
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের অবস্থান ও কার্য্যক্রম বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার অভীষ্ট্য লক্ষ্য অর্জনে একটি বিশাল ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। যার খেসারত তাকে বহুকাল পর্যন্ত দিতে হবে ।
স্বীকার করুক বা না করুক অথবা জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন অবস্থান ও কার্য্যক্রমকে তারা যেভাবেই ব্যখ্যা করুক না কেন তা যে কোনভাবেই সঠিক ছিলনা তা দিবালোকের মত সত্য ।
পৃথিবীর কোন দেশ ও জাতিই তার বুকের উপর তারই স্বাধীনতার বিরুধীতাকারী শক্তির রাজনৈতিক কার্য্যক্রম ও বিচরনের অধিকারকে কোন অবস্থাতেই স্বীকার করেনা । আদর্শিক কারনেই হোক বা অন্য যেকোন কারনেই হোক পৃথিবীর ইতিহাসে বিজয়ী শক্তি কর্তৃক বিজিত শক্তিকে সমূলে ধ্বংস করার নজীর ভূড়ি ভূড়ি । কিন্তু সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে স্বধীনতার বিরুধীতাকারী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি দেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যাবহিত পরেই রাজনীতিসহ আরো বহুবিদ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে । আর এ সুযোগের সদ্ব্যবহারকারি দলগুলোর মধ্যে যেমন মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও চীন পন্থী কমিঊনিষ্ট পার্টি আছে তেমনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও আছে ।
কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তারা যে দেশ ও জাতির স্বধীনতার বিরুধিতা করেছে সেই দেশে বসবাস ও রাজনীতি করার পাশাপাশি অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার ফিরে পাওয়া সত্ত্বেও দেশ ও জাতির কাছে তাদের অতীত অবস্থান ও কার্যক্রমের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনাত দূর সামান্য কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের প্রয়োজনটুকুও বোধ করেনি ! আর এখানেই জাতির দুঃখ ও বেদনার পরিমাণটা আরো বেশি স্ফীত হয়ে উঠে ।
প্রশ্ন আসে অন্যরা যেখানে ক্ষমা চায়নি সেখানে জামায়াতে ইসলামী কেন আগবাড়িয়ে ভুল স্বীকার ও ক্ষমা ভিক্ষা করবে ? মনে রাখতে হবে ভুল স্বীকার ও এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি মহৎ গুণ যা সবার হয়না । আর ইসলামে ভুল স্বীকার ও এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা একটি মহৎ কাজ হিসেবেই বিবেচিত । তাই জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমা প্রার্থনা করাটা ছিল আরো বেশি জরুরী এবং এখনো এ সুযোগ আছে বলে মনে করি । ভুল স্বীকার ও ক্ষমা ভিক্ষা করাটা জামায়াতে ইসলামীর জন্য একারনেই অধিক প্রয়োজন যে তারা নিজেদের ইসলামী দল দাবী করে ।
উচিত ছিল এদেশে রাজনীতি চর্চার সুযোগ পাওয়ামাত্র আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৭১ এ তাদের দলীয় অবস্থান ও কার্য্যক্রম কারনসহ জাতির সামনে ব্যাখ্যা করা । পাশাপাশি তাদের এ স্বিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তা স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দলীয় যেসব লোক তৎকালীন সময়ে অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করে বিচারের মুখোমুখি করা । কিন্তু জামায়াতে ইসলামী তা করেনি বরং কোন কোন সময়ে রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে, মুক্তিযুদ্ধাদের সম্পর্কে কটুক্তি করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত ও ভুলভাবে তার কর্মী সমর্থক ও দেশবাসীর কাছে উপস্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে । যেখানে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে বিশ্বাস করে সেখানে জামায়াতে ইসলামীর কোন কোন নেতা ও বুদ্ধিজীবী বিদেশি পত্র-পত্রিকার তৎকালীন রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে এখনও এটিকে গৃহযুদ্ধ বলে প্রকাশ্যে কথা বলার দুঃসাহস দেখান ! তাদের অনেকেই মনে করেন ও বলে বেড়ান মুক্তিযুদ্ধারা সুন্দরী নারী ও সম্পদের লোভে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন ! এজাতীয় কথা-বার্তার মধ্য দিয়ে তারা জাতির মনোভাবকে অবজ্ঞা করেন যেমন ১৯৭১ এ করেছেন । জাতির কাছে ৭১ এ তাদের ভুল অবস্থানকে সঠিক প্রমানের প্রয়াস চালান ! তাদের বুঝা উচিত এসব কথা ও কাজ জাতির বুকে রক্তক্ষরণ ঘটায়, বীর মুক্তিযুদ্ধাদের অপমান করে, তাদের ত্যাগ ও কুরবানীকে অস্বীকার করে ।
জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতা-কর্মিদেরকে এজাতীয় কথা-বার্তা পরিহার করতে হবে । একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে পরিপূর্ণ লক্ষ্য হাসিলে ও তার ভবিষ্যত চলার পথকে মসৃন করতে হলে ১৯৭১ এ তার অবস্থানের জন্য জাতির কাছে তাকে আজ হোক আর কাল হোক একদিন প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতেই হবে তাই কাজটি যত দ্রুত সম্ভব হবে ততই মঙ্গল । জামায়াতে ইসলামীকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সে এখন একটা ফ্যক্টর তাই অন্য যেসব দল স্বধীনতার বিরুধীতা করেছে তাদের সাথে নিজেদের তুলনা করা এখন আর তার জন্য সাজে না ।
জামায়াতে ইসলামীকে স্মরণ রাখতে হবে তারা দেশীয় আইনের দৃষ্টিতে বৈধ রাজনৈতিক দল বলে স্বীকৃত হলেও ১৯৭১ এ তাদের বিতর্কিত অবস্থানের কারনে এখনও দেশের সিংহভাগ মানুষের মনে বৈধতা অর্জন করতে পারেনি । আর একমাত্র ক্ষমা প্রার্থনাই পারে তাকে তার ক্লেদাক্ত অতীত থেকে মুক্তি দিতে যা তার পথ চলাকে করে তুলবে আরো বেশি দুর্বার ও গতিময় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।