মশিউর রহমান
-কাঞ্চন শোন শোন , চল ঘুরে আসি,
-কোথায় ?
-আরে ঐ যে সেই দিন রাতের ঘটনা, দুটি মেয়ে বাসষ্টান্ডে... সৌরভ এই কথা গুলি বলতেই কাঞ্চন বলল , ও হ্যা মনে পড়েছে।
-ওদের বাড়ি যাব আমরা দুজনে।
-তা আমি কেন ? তোরে ডাকছে তুই যা, আর সেদিন তো আমি ছিলাম না।
-আরে তুই আমার জিগরি দোস্ত তুই থাকলে ভাললাগবে। তোরে যেতেই হবে, না করতে পারবিনা।
-তা,ওদের বাড়ি কোথায় ?
-গ্রামের দিকে, সেই ধামুরহাট ওখান থেকেও ভিতরে রাঙ্গামাটি নামক স্হানে।
-এক দম ইন্ডায়ার ধারে ধারে তো বে! ওকে যাব।
-চল।
-এখুনি ?
-তবে কি?
-যা বাবা, চল।
বেনু আর আনু ,নামের কারনেই হয়তোবা তাদের বন্ধুত্ব।
এক ইস্কুল থেকে পাস করে একই কলেজে ভর্তি হয়েছিল সেই এইস এস সি। অটুট বন্ধুত্ব। ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্রী এখন তারা।
-আনু শোন, আমাদের এইস এস সি সার্টিফিকেট এখনও আসেনি, আমরা কিভাবে প্রাইমারী ইস্কুলের মাষ্টারী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করবো !
-বেনু, তুই আসলেই বেশি হতাশ হোস, এটা ঠিক না ।
-হতাশ হইনি তবে পরীক্ষাতো দিতে হবে, নাকি?
-হুম, তা তো অবশ্যই।
-কিন্তু কিভাবে ?
-চল, প্রথমে আমরা স্যারের সাথে আলোচনা করে দেখি কি করা যায় ।
- মামা, প্রিন্সিপাল স্যার নাই?
- আছে।
-আসসালামুআলাইকুম স্যার, আসবো ?
-হ্যা, এসো।
-স্যার, বসবো?
-বসো।
-স্যার , আমরা ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
আমাদের এইস.এস.সি সার্টিফিকেট এখনও আসেনি কিন্তু সামনে প্রাইমারী ইস্কুলের মাষ্টারী পরীক্ষায় লাগবে।
-হ্যা , তোমাদের আগেও কয়েকজন এসেছিল। তোমরা এক কাজ করো , এবিষয়ে কলেজের কেরানীকে বলো সে তোমাদের সববুঝিয়ে বলবে সে অনুসারে কাজ করো। আমি একটু ব্যাস্ত।
-ওকে স্যার , আসসালামুআলাইকুম।
-ওয়া...।
-বেনু শোন, কেরানী মামাকে টাকা না দিয়ে আমরাই সার্টিফিকেট তুলে আনবো।
-ও মা! কিন্তু কিভাবে? রাজশাহীতো ম্যালা দুরে।
-আরে শোন , এখান থাকে নওগাঁ ৪০ কি.মি'র মত লোকালগাড়ীতে দু ঘন্টা, তারপর নওগাঁ
ওখান থেকে ৮০কি.মি গেটলকগাড়ীতে ১ঘন্টা ৩০ মিনিটে রাজশাহী।
তার মানে সারে তিন ঘন্টায় রাজশাহী পৌছায়ে যাবো।
তারপর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড হতে সার্টিফিকেট তুলে আবার চারটার গেট লক ধরে নওগাঁ। তারপর লাষ্ট টিপের গাড়ী ধরে ধামুরহাট। ধামুরহাটে এলেই তো টেনশন শেষ।
চল, এ সুযোগে রাজশাহী হতে বেড়িয়ে আসা হবে নিজেদের মত করে ।
-কিন্তু সব কিছু কি তোর কথা মত হবে? এত সাহস ভালোনা।
- দুর পাগলী কিচ্ছু হবেনা ।
- না হলেই ভাল। তা কবে যাবো আমরা ?
- দু এক দিনের ভিতরেই।
তারা নির্দিষ্ট দিন খুব সকালে যাত্রা পথে বাহির হল,৮টা ৪৫ মিনিটে নওগাঁ এবং ৯টার গেটলক গাড়িতে করে রাজশাহী যাত্রা করল। তারা ১০টা ৪০মিনিটে রাজশাহী রেলগেটে নামল এবং রিকশায় শিক্ষা বোর্ডে পৌছাল ১১টার দিকে।
ওরা দেখল,ওদের মত আরও অনেকে এই কাজেই এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী দরখাস্ত পেশ ও অন্যান্য কার্যক্রম শেষে বলল, আমাদের বাড়ি অনেক দুরে আমাদের আগে একটু ছেড়ে দিন কিন্তু কে কার কথা শোনে সবায় আগে পেতে ব্যাস্ত।
সার্টিফিকেট পেতে পেতে তাদের বিকাল যাওয়ারও উপক্রম।
বাসষ্টান্ডে এসে দেখল গেটলক বাস চলে গেছে অনেক ক্ষণ আগে। আকাশও খারাপ মেঘাচ্ছন্ন সময়ের আগেই বেলা শেষ হয়ে গেছে।
এখন লোকাল বাস ধরে নওগাঁ। তা ৩ ঘন্টার ব্যাপার, বেশি সয়ে কম নয়। নওগাঁ ষ্টান্ডে পৌছাতে বেজে গেল ৮টা ৪৫ মিনিট। এ সময় কোন জায়গাতে যাওয়ার বাস নাই। ঝিপির ঝিপির বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে ।
বাসষ্টান্ড ধিরে ধিরে যাত্রী শুন্য।
বেনু আর আনু কি করবে বুদ্ধি পাচ্ছিল না। কেমন অসহায়ের মত বাস হতে নেমে ষ্টান্ডে দ্বারায়ে থাকল। তত ক্ষণে ওই বাসটিও চলে গেল। তাদের ভয় ভয় লাগছিল।
আর ভয পাওয়ারও কথা। বাসষ্টান্ডে রাত যত গভীর হবে তত বখাটে দের আড্ডা খানায় পরিণত হয়। এটা কম বেশি আমরা সবায় জানি। তাই ওরা মেইন রোডে আসল।
সামনে দিয়ে দু'জন যাচ্ছিল, সৌরভ এবং ওর পরিচিত আর এক জন।
বেনু - ভাই মহাদেবপুর বাসষ্টান্ড কোনদিকে ?
সৌরভ- ঐ যে সামনে।
- আমাদের একটু আগায়ে দিয়ে আসতেন। আমরা একটু সমস্যার মধ্য পড়েছি। যাবো ধামুরহাট রাঙ্গামাটি।
-আমার জানা মতে এখন আপনারা কোন জায়গার গাড়ি পাবেন না ।
নওগাঁ কোন আত্নীয় থাকলে তাদের বাসায় উঠুন রাত কাটিয়ে সকালে না হয় যাবেন। এখানেও বেশী ক্ষণ থাকা নিরাপদ নয়।
-ভাই, আমাদের শহরে এরকম কেউ নাই। তবে গ্রামের দিকে একজন আছে। তাদের বাড়ির নাম ঠিকানা জানি।
- বলুন শুনি তার পর দেখি কত দুর।
- হাপুনিয়া পার হয়ে দুবলহাটি রোড ধরে গেলে প্রথমে যে বাজার সেই খানে একজন আছে, নাম আবুল মাষ্টার।
- ঐ বাজারের নাম খনজনা। শহর থেকে কমপক্ষে ১২ কি.মি দুরে হবে। ভ্যান পাবেন খোঁজ করলে।
যেতে লাগবে ঘন্টা খানেক তার মানে এখন সারে ৯টার মত , সব মিলে ১১টা'র মত। তার মধ্যে
বৃষ্টি পড়ছে অন্ধকার। পাংচু হবার অবস্হা।
-ভাই, আপনারা এখন একমাত্র ভরশা একটু সাহায্য করুন।
-আমরাও যে ঝামেলা মুক্ত তা না, তবে এবাবে কাওকে বিশ্বাস করা কি ঠিক অচেনা অজানা একজন কে ?
সৌরভ তার সঙ্গের ওকে একটি ভ্যান আনতে বলল।
বেশ কিছু ক্ষণ পর আনল একটি ভ্যান হাপুনিয়া পর্যন্ত। ওখান থেকে অন্য ভ্যান ধরে যেতে হবে ।
তারা চারজনে ওঠে পড়ল। ভ্যান চলতে লাগল। বৃষ্টি পড়ছে অল্প অল্প ।
হ্যাপনীয়া বাজারে পৌছানোর পর মনে হল বাজার মরা মরা। বৃষ্টির কারনে সব দোকান পাঠ বন্ধ, একটিও রিকশা, ভ্যান নাই।
ভ্যান ভাই, আপনারে আমরা ছাড়তে পারবো না। আসতে আসতে তো ঘটনা অনেক শুনলেন , মেয়ে দুটি বিপদে পড়েছে আমরা দ্বায়িত্ব মনে করে সাহায্য করছি আপনারও উচিত সাহায্য করা। অতএব সামনের বাজার পর্যন্ত চলুন।
তারপর এক সঙ্গে নওগাঁ
যাবো।
আপনার বাড়ি নওগাঁ তো নাকি?
জ্বি ভাই, হ্যামার বাড়ি নওগাঁ বিহারী পাড়ায়।
-আপনি বিহারী?
-না।
-আমার কথা বুঝেছেন তো ?
-কি আর করার মাইয়া দু'ডা বিপদে পরছে ইচ্ছা না করলেও যাইতে হইবে।
ঠিকানা মত মেয়ে দুটিকে পৌছায়ে দিয়ে নওগাঁ ফিরে আসতে আসতে সৌরভদের রাত ১২ টা বেজে গেল।
ভ্যানে যাওয়ার সময় একটা আন্তরিকতা সৃষ্টি হওয়ায় মেয়ে দুটির সঙ্গে নাম ধাম ঠিকানা মোবাইল নং সব আদান প্রদান হয়ে গিয়েছিল।
কাঞ্চন এবং সৌরভ দুজনের বাড়ি নওগাঁ শহরে কিন্তু ভিন্ন পাড়াতে
কাঞ্চন কলেজ মোড়ে এবং সৌরভের মাষ্টার পাড়া। এক সময় দুজনের চরম শত্রুতা ছিল সেই টিন এজের সময়ে। এমন শত্রুতা একজন একজনের পাড়াতে পেলে সেই রকম ধোলায় হতো হাত পা ভাংগে ফেলা সহজ ব্যাপার এর থেকে বেশী কিছুও ঘটতে পারতো। না এরকম কিছুই ঘটল না ।
তবে বছর চারেক বেশ শত্রু শত্রু খেলা খেলতে খেলতে বন্ধুতে পরিণত হয়ে গেল দুজনে।
শহর থেকে যত দুরে যাচ্ছিল তত আলাদা আমেজ অনুভুত হচ্ছিল। প্রথমে বাস ষ্ট্যান্ড হতে মাতাজিহাট তার পর ভুটভুটিতে ফতেপুর তারপর বাসে আমায়তারার মোর তারপর আবার ভুটভুটি ধরে রাঙ্গামাটি। দিনে দুটি বাস রাঙ্গামাটি যাওয়া আসা করে সকালে এবং বিকালে সারাদিন নাই।
রাঙ্গামাটি এসে বেনুকে ফোন দিল সৌরভ, বেনু কয়েক মিনিট পরে রাঙ্গামাটি বাজারে আসল ।
-কাঞ্চন, এই সেই বেনু ।
-সৌরভ ভাই, উনি আসলেন না?
-না, ও ব্যস্ত। এ আমার আর এক বন্ধু কাঞ্চন।
এখান থেকে তোমাদের বাড়ি কতদুরে?
-ঐ তো বাজারের পার্শ্বে।
কয়েক মিনিটে বেনুদের বাসায় পৌছানো হল।
বেনুর দুলাভাই সরকারী চাকুরী করে । সে বোনের বাসায় থাকে। বাড়ি ঘর বেশ গোছালো। বেনুর বড় বোন যথেষ্ট সন্মান করল । কয়েক ঘন্টা বেনুদের বাসায় থাকার পরে তারা তিনজনে আনুর বাসার উদ্দেশে রওনা হল।
আনুদের বাড়ি গ্রামের দিকে কয়েক কি.মি যেতে হবে। বাহন ভ্যান গাড়ি।
আনুদের বাড়ি মাটির দুই তলা । ও কৃষক পরিবারের সন্তান । আনুদের বাড়িতে হাঁস, মুরগী গরু ছাগল সব আছে।
মাটির দু'তালা বেশ আলাদা অনুভতি।
নাস্তার পর্ব শেষ।
-সৌরভ, বেশি দেরী করা যাবেনা।
-কেন, বে ?নতুন এক জায়গাতে আসলাম আজ থাকবো এরা যেতে দিবে না । আর এসময় বাস পাবিনা যাবি কি করে?
-হুম, তাও কথা।
তাহলে চল, গ্রামটা শেষ বিকালের আলোয় ঘুরে ঘুরে দেখি।
বেনু আনু কাঞ্চন সৌরভ চারজনে মিলে গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখল। বেশ নীরব গ্রাম মাটির বাড়ি প্রায় সবগুলি দু'তলা কোনটি রাজ দিয়ে প্রলেপ দেওয়া মনে হবে ইটের বাড়ি।
রাতে খাওয়ার পর্ব শেষ করে সৌরভ,কাঞ্চন মাটির দু'তালাতে স্হান করে নিল ঘুমানোর জন্য।
পরদিন সকালে নাস্তা এবং পোলাও মুরগী খাওয়ার পর রওনা দিতে বাধ্য হল একটু আগেই কাঞ্চনের জিদের কারনে।
-কাঞ্চন, তোকে কি খুব খারাপ লাগল?
-না,
-তবে এত যাই যাই করিস কেন, বে ?
-আমি বাড়িতে বলে আসিনি তাছাড়া মোবাইল চার্জে দিয়ে আসছি। নাম্বার ও মনে নেই যে ফোন করে দিব।
-ও । তা বেনু কে কি রকম দেখলি ?
-বেশ ভাল, সুন্দরীও ।
-দোস্ত, বেনু আমার প্রেমে পড়েছে এটা কি বুঝতে পারলি?
-হুম, খানিকটা তাই মনে হল।
তবে একটা কথা কি, সেই রাতে তুই তাদের যে উপকার করেছিস তার কারনে তারা তোর সাথে বেশী ক্লোজ হবেই,,, এটা ভেবে দেখিস।
-আরে না ,আমি কেন তোরে নিয়ে আসলাম ? তোর ভিতরে মুরব্বী মুরব্বী ভাব আছে । তারপর হতে আমার সাথে নিয়মিত কথা হত বেনুর। দেখী এবার বাড়ি যাই । আর কত দিন এই বেকার লাফাংগা জীবন কাটাবো?
-আমাকে ভাললাগল।
এখন ভেবে চিন্তে কাজ করিস। নি:সন্ধেহে তুই একটা মহৎ কাজ করেছিস। সেই মহত্বতা যেন নষ্ট না হয়।
-ওকে ডিয়ার। মনে রাখবো।
এ গল্প সে গল্প করতে করতে মাতাজীহাটে পৌছায়ে গেল কাঞ্চন সৌরভ।
-মাতাজী ডাইলের আড়ত কাঞ্চন, খাবি নাকি এক শিশি।
-হুম খাওয়ালে সব খাওয়াতে হবে। জানিসতো আমাকে, খাইনা খাইনা একদিন খাচ্ছিতো সব কিছু খাব, বিদিক হয়ে যাব। টাকা আছে তো ?
-আছে।
তুই পারিসও বটে কিন্তু আমি চেক দিতে পারিনা। প্রতি দিন কিছু না কিছু খেতেই হয়। তার পর ঔ নুনিয়া পটট্রির সেই মুনিয়ার বুকের ওম।
-এ কারনে আমি তোর থেকে একটু আলাদা।
-কাঞ্চন, দাম নিবে এক শিশি চারশত টাকা।
একটা নিয়ে হাফ করে খাই। তার পর তো ক্যানাবিজ, দেশি মদ আছেই । মাথা মারবি? হিরো..।
-আমি সব খানে আছি মাসে এক থেকে দুই দিন। আজ সব হবে শুধু দেশি মদ চোয়ানি বাদে ।
মরা যাবেনা!
ডাইল একটা একটা করে আর ক্যানাবিজ খাওয়া হল।
নেশার ঘোরে আবেগীয় মুহুর্তে সৌরভ বলছে ,শালার জীবন। দোস্ত বেনু মেয়েটিকে ভালবাসার অধিকার আমার নাই।
তোর আর আমার শত্রুতা ছিল দীর্ঘদিন রাহেলার জন্য আর ও আমাদের লাং মেরে হাবলুটাকে বিয়ে করল। ভুলেও আমাদের ভাবেনা!
আসবি যদি বেনু আরো আগে এলি না কেন??????????????????????
বেনু , তোমাকে একটি সুন্দর ভবিষৎ দেব ! তুমি কি মেনে নিতে পারবে আমার নষ্ট অতীত, বর্তমান ????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।