salehin.arshady@gmail.com ভোরে ট্রেকিং শুরু করার কিছুক্ষন পর থেকেই পিঠের চিনচিনে ব্যাথা টা টের পাচ্ছিলাম। মেরুদন্ড ভেঙে যাবার পর ডাক্তার ভারি কিছু বহন করতে নিষেধ করে দিয়েছিল। তারপরেও আমার ব্যাক প্যাকের ওজন ২০ কেজির কম কিছুতেই করতে পারলাম না। যত হাইট গেইন করছিলাম ততই ব্যাথা টার তীব্রতা বাড়ছিল। শিশিরকেও কিছু বলি নাই।
বেচারা টেনশনে পরে যেতে পারে। এত ঠান্ডার জন্য এমনিতেই আমাদের এডিকুয়েট প্রিপারেশন ছিল না। টেন্ট আর স্লিপিং ব্যাগের সাথে সাথে সাথে তাই আমাদের ৪টা মোটা কম্বল ও ক্যারি করতে হচ্ছিলো। শিশির যেন টের না পায় তাই আমি ওর পিছনে হাঁটছিলাম। ১২০০০ ফিট উঠার পর থেকেই নিঃশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছিলো।
আমাদের দু'জনের কেউই আগে এই হাইট এ আসি নাই। তার উপর এমন ঠান্ডায় কেমন লাগে এর আগে কেউই আমরা জানতাম না। ঠান্ডা বাতাসে আমার নাক জমে যাচ্ছিলো। টের পাচ্ছিলাম নাক শক্ত হয়ে যাচ্ছে। হাতের গ্লাভস খুলে যে নাক টা একটু ডলে গরম করব সেই দুঃসাহস দেখিয়ে একবার গ্লাভস টা খুলতেই আঙুল গুলো অসাড় হয়ে গেল।
ধীরে ধীরে শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। আর পারছিলাম না হাঁটতে। ঠিক এমন মুহুর্তে দেখি শিশির একটা ঢালের উপর দাঁড়িয়ে পাগলের মত হাত-পা নাড়াচ্ছে। মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ না করে আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলছে। আমি কিছুটা ঘাবড়ে পেয়ে গেলাম।
হঠাৎ কি হইল ওর? এমন করতেসে কেন? কি দেখল? কোথাও ব্যাথা পাইল নাকি আবার? নিমিষের মধ্যেই হাজার রকমের চিন্তা মাথায় জট পাঁকিয়ে গেল। হার্ট বিট বেড়ে যাওয়াতেই মনে হয় শরীরে নতুন করে জোর পেয়ে গেলাম। জোরে জোরে পা চালিয়ে শিশিরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাঁফাতে হাঁফাতে কিছু একটা বলতে নিতেই দেখি শিশির আমাকে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলছে। তারপর আস্তে করে কানে ফিসফিস করে বলল, সামনে দেখ...এগুলা কি?
আমি হতবম্ব আর বিমূঢ় হয়ে শিশিরের ইশারা করা জায়গা টায় কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম।
ধূসর কালো মরুভূমি ছাড়া প্রথমে কিছুই দেখি নাই। পরে ভাল মত তাকিয়ে থাকার পর খয়েরি বুনো ঝোপ গুলোর সাথে প্রানী গুলোর শরীরের রেখা আলাদা করতে পারলাম। আমি বিস্ময়ে হা করে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষন। ক্যামেরা বের করে ছবি তুলার কথাও ভুলে গেলাম। এই সেই হিমালায়ান ওয়াইল্ড আইবেক্স? এত কাছে?? মাত্র ২০ ফিট দূরে ?? এতদিন এদের শুধুই ছবিতে দেখে আসছি।
ন্যাট জিও আর ডিসকভারিতে আলপাইন আর হিমালায়া দেখালে ওয়াইল্ড আইবেক্স ইজ আ মাস্ট।
অনেকক্ষন পর চটকা ভেঙে গেলে ব্যাক প্যাক টা নামিয়ে ক্যামেরা বের করলাম। ওদিকে শিশির সাটার এর পর সাটার মেরে যাচ্ছে। আমি ছবি তুলতে শুরু করলাম। ভাগ্য মনে হয় খারাপ ছিল।
আমার পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা টা কেন জানি মনে করল এত কম আলোতে ছবি উঠবে না, তাই ফ্ল্যাস মেরে দিল। দুই তিন টা ছবি তুলতেই ফ্ল্যাসের আলোয় আইবেক্স গুলো ঘাবড়ে গেল। মোটা মোটা বাঁকানো শিং তাক করে তরতাজা নর গুলো তাদের হারেমের নারীদের রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এল। কিছুক্ষন আমাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্যের সাথে গট গট পায়ে হেঁটে পাহাড়ের একটা খাঁজে মিলিয়ে গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।