আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উট-বন্দনা



পৃথিবীতে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির উট রয়েছে। শুনেছি রাজধানীর আরামবাগে দেওয়ানবাগীর আশ্রমে নাকি উট রয়েছে। ওখানে যানি বলে দেখা হয়নি। তবে প্রথম উটের দেখা পেয়েছি চিড়িয়াখানায়। আর উটে চড়েছি মিসরে গিয়ে।

মূলত মরু-বান্ধব বলে এদেশে উট নেই। ভারতীয় এক দোঁহাতে নাকি রয়েছে : 'মারওয়ানের পুরুষ, জয়শলমীরের নারী, সিন্ধু দেশের ঘোড়া আর বিকানীয়ের উট ---এদের জুড়ি নেই। ' বেদ ও জাতকে উটের কথা পাওয়া যায় না। তবে কুরআন-হাদিস, বাইবেল, লেবীয় পুস্তক, ঋগ্বেদ, মনুসংহিতা, বুক অব জাজেস-এ উটের কথা রয়েছে। কৌলিণ্যের অর্থশাস্ত্রেও উট প্রসঙ্গ এসেছে।

উট নিয়ে যিশুর বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে : ঈশ্বরের রাজ্যে ধনীর প্রবেশের চেয়ে সূঁচের গর্ত দিয়ে উটের যাতায়াত সহজ। উটের কুঁজে ৪৫ কেজির মতো পানি ধরে। পানি না পেলে এটা কুঁজের চর্বি ও পানি দিয়ে প্রয়োজন মেটায়। আর পানি পেলে এটা নাকি মাত্র ১০ মিনিটেই ৯০ লিটার পানি শুষে নিতে পারে!! বাংলা সাহিত্যে উট নিয়ে খুব একটা মাতামাতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেদুইন হয়ে উটের দুধ খেতে চাইলেও জীবনানন্দ দাশ উটকে অশুভ প্রতীক হিসেবে এঁকেছেন : 'এই কথা বলেছি তারে চাঁদ ডুবে চলে গেলে অদ্ভুত আঁধারে যেন তার জানালার ধারে উটের গ্রীবার মতো কোন এক নিস্তব্ধতা এসে।

' সংস্কৃত উষ্ট্র থেকে বাংলায় উট শব্দটি এসেছে। উষ্ট্র শব্দের মূল 'উষ্' ধাতু। এটার অর্থ 'যে মরুতাপে দগ্ধ হলেও সূর্যতাপে পীড়িত হয় না'। আর্য ও সেমিটিক জগতে উট শব্দটি সম্ভবত অভিন্ন উৎস থেকে উদ্ভূত হতে পারে। কারণ সেমিটিক ভাষায় এটি 'গামাল', ফিনিসীয় ও হিব্রু ভাষায় এটি 'গিমেল'।

আরবিতে 'জমল'। এটি লাতিনে 'কামেলুস (camelus) , গ্রিকে 'খামোলাস' ( chamelos), ইংরেজিতে 'ক্যামেল' ( camel )। আবার সংস্কৃত 'উষ্ট্র' শব্দের সঙ্গে ফারসি 'উশতর' ও প্রাচীন আবেস্তার 'উসতর' শব্দের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উশতর ও উসতর মানে উট। মহামূর্খ কালিদাস নাকি উটের কল্যাণেই দেবতার বর পেয়ে মহাকবি হয়ে ওঠেন! গল্পটা এ রকম : বিদূষী রাজকন্যার সঙ্গে তর্কে হেরে দিগগজ পণ্ডিতরা কৌশলে গজমূর্খ্ কালিদাসের সঙ্গে রাজকুমারীর বিয়ে পড়িয়ে দেন।

নতুন বর আসলে মূখ্য কিনা তা বাজিয়ে দেখতে বাসর ঘরে কালিদাসের সঙ্গে বিভিন্ন আলাপ জুড়ে দেন। এমন সময় রাজবাড়ির বাইরে কে যেন ডেকে উঠলো। 'কো রৌতি' (কী ডাকছে?) রাজকুমারী জানতে চাইলেন। 'উষ্টঃ' -কালিদাসের জবাব। 'কিমিতি কিমিতি' (কী বললেন, কী বললেন), রাজকুমারীর উদ্বেগ।

আগে ভুল হয়েছে ভেবে কালিদাস এবার বললেন 'উট্র'। অর্থাৎ কালিদাস উষ্ট্র বলতে গিয়ে প্রথমে 'র' ফলা এবং পরে 'ষ' বাদ দিলেন। মনের দুঃখে বিদূষী রাজকুমারী বলে উঠলেন : 'হায় বিধি রুষ্ট হলে কিনা করতে পারেন। আর তুষ্ট হলে কিনা দিতে পারেন। যে উষ্ট্র শব্দে একবার 'র' ফলা ও একবার 'ষ' লোপ করে, তার হাতেই কিনা পড়লো আমার মতো সুন্দরী।

' এবার শুনুন উট নিয়ে মহাভারতের গল্পের এক চিলতে : সত্যযুগে এক বনে ছিল এক মহা অলস ও মহামূর্খ উট। মুনিদের দেখাদেখি সেও শুরু করলো কঠোর তপস্যা। 'কি বর চাও?' ব্রহ্মা একদিন খুশি হয়ে উটের কাঠছ জানতে চাইলেন। 'প্রভু! আমার গলা একশো যোজন লম্বা করে দিন'--উটের আবদার। 'তথাস্তু' ব্রহ্মা জবাব দিলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।