আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়া বাঁশ খাইলে নিজ দায়িত্বে বাঁশ খাইয়েন খুব কম মানুষই আছে,যাদের নামের সাথে চেহারার মিল থাকে। কিন্তু আমাদের আবুলের সেটা আছে। আবুলের চেহারায় আবুল আবুল ভাব প্রকট। এই নাম নিয়ে আবুলের ভোগান্তির শেষ নাই। ভার্সিটির প্রথম দিনেই ডিপার্টমেন্টের সব ক্লাসমেট আর সিনিওররা জেনে নিল যে একটা আবুল এসেছে।
আর যায় কই!সব সিনিওররা আবুলকে নিয়ে সার্কাস দেখানো শুরু করে দিল। যেসব সিনিওররা ভার্সিটিতে ভর্তির পর চোখ তুলে কথাও বলতে পারতো না,সেই সব নাদানবান্দারাও আবুলকে নিয়ে মজা নিল। সব থেকে ভয়াবহ মজাটা নিল তানভীর নামের এক সিনিওর। তানভীরের ব্যাচের সবাই জানতো তানভীর খুব বোকাসোকা আর নরম প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু আবুলের বদৌলতে সবাই জানল,দেশে এখন আর “সরল” নামক কোনো শব্দ নাই।
অন্তত তানভীর আর যাই হোক,অবশ্যই সরল নয়।
প্রথম দিনেই তানভীর আবুলের সব ক্লাসমেটদের সামনে আবুলকে ডাকল।
-কিরে আবুলইল্যা কেমন আছোস?
-ভাই আমার ডাকনাম আবুল না। আমার ডাকনাম রানা। আমাকে রানা নামে ডাকেন।
-উমা তুমি তো ভালোই ট্যাটনাগিরি দেখাইতেছো!ঐ ব্যাটা তুই কি আগে থেকেই স্মার্ট নাকি চোখের সামনে এতগুলা মেয়ে দেইখা নতুন নতুন স্মার্ট হওয়ার শখ হইছে?
তানভীরের কথা শুনে আবুল অবাক হয়ে তাকায়। এতটা বিশ্রি ভাবে সবার সামনে মানুষ কিভাবে আর একজন মানুষকে অপমান করতে পারে?আবুল গ্রাম থেকে এসেছে এটা সত্যি। সে গ্রাম্য,তার নামটা একটু সেকেলে-এটাও সত্যি। কিন্তু মানসিক ভাবে নিজেকে কখনই গ্রাম্য-খ্যাত মনে করেনি আবুল!যাই হোক,আবুল তানভীরের কথার জবাব দেয় না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
তানভীর আবার বলতে থাকে
-শোনেন আবুল সাহেব,মেয়ে মানুষ দেখলে যখন আপনার এতই উচাটন লাগে,তাইলে আজকে থেকে আপনার ক্লাসের সব মেয়েরা আপনার মা। সবাইরে মা বইলা ডাকতে পারবেন না?
তানভীরের কথা শুনে সিনিওররা হোহো করে হেসে তানভীরের পিঠ চাপড়ে দিল। একজন সিনিওর তো বলল, “আই সালা,তুই যে ব্যাটা এত কথা বলতে পারিস তাতো জানতাম না!”
সহপাঠিদের কথা শুনে তানভীরের বুকটা ফুলে ওঠে। এতদিনে সে লাইম লাইটে আসতে পারল। একটা সময় সবাই তাকে নিয়ে কত মশকরা করত!যাক,আবুলটার কল্যানে সে সবার একটু সম্মান পেল!
তবে তানভীরকে তো এখানেই থেমে থাকলে চলবে না।
আবুলটাকে আরো ঝাকাতে হবে। তাহলেই না সে ক্লাসমেটদের বাহবা পাবে।
ওদিকে কিছুদিনের মধ্যেই আবুল ক্লাসের সবার সাথে মিশে গেল। ইতিপূর্বে সিনিওরদের কাছে ভোগান্তির শিকার হওয়ার কারনে মেয়েরাও আবুলের প্রতি বেশ সহানুভূতি দেখাচ্ছে। এই সুযোগটাই নিল তানভীর।
একদিন আবুলকে ডেকে আবুলের সামনে সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিল। আবুল ভয়ে ভয়ে জানালো সে সিগারেট খায়না। তাতে আজ আর তানভীর তেমন রাগন্বীত হল না। বরং হাসি-মুখে বলল, “সিগারেট খাবিনা ভাল কথা!অন্য কিছু খা!নে কলা খা!”
কথাটা বলেই তানভীর আবুলের হাতে একটা কলা ধরিয়ে দিল। তারপর আসল কথায় আসল।
-তা আবুল তোদের ক্লাসের সব মেয়ের সাথেই তো দেখি তোর খুব খাতির।
-জি ভাইয়া,আছে খানিকটা।
-খাতির থাকলেই ভাল!তোরে একটা এসাইনমেণ্ট দেই কেমন?
-কি এসাইনমেণ্ট ভাইয়া?
-তেমন কঠিন কিছু না। তুই তোর ক্লাসের সব মেয়ের তথ্য আর ছবি দিয়া একটা ফাইল বানায়ে আমারে দিবি। ছবি যে ফাইলের সাথে দিতে হবে তা না।
ব্লুটুথ দিয়া ট্রান্সফার করলেও হবে। বুঝলি?
আবুল বোকা না। সে তানভীরের উদ্দেশ্য ঠিকই বুঝতে পারে। হয়তো ছবিগুলো তানভীর এডিট করে পর্ন সাইটে ছেড়ে দেবে। আর সেই ছবিগুলোই আবুলকে সাপ্লাই করতে হবে।
সাপ্লাই না করলে তানভীর হয়তো তাকে ভয়াবহ বিপদে ফেলে দিতে পারে!!!
আবুল নানান দিক চিন্তা করে ব্যাপারটা শোভনকে জানালো। শোভন মোটামুটি বুদ্ধিমান ছেলে। সে আবুলকে নিয়ে একটা তানভীরের ব্যাপারে একটা কঠিন ষড়যন্ত্র করে ফেলল!তারা দুজন মিলে তাদের ক্যাম্পাসের কনফেশন পেইজে তানভীরের নামে একটা লেখা পোস্ট করে দিল।
তানভীর,তুমি আমাকে নিয়ে কেন এমন করলে বলতো?
তুমি আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় কেন করলে?তুমি
কেন আমার ছবিগুলো পর্ণসাইটে দিয়ে দিলে?আমি তো
নিঃস্বার্থভাবে তোমাকে ভালবেসে শরীর-মন সবই দিয়েছিলাম।
তুমি কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে?
কনফেশন পেইজে লেখাটা পোস্ট হওয়ার পর ক্যাম্পাসজুড়ে রীতিমত শোরগোল পরে গেল।
সবাই তানভীরকে দেখার জন্য দল বেধে আসতে লাগল। অবস্থা এমন দাড়ালো যে তানভীরকে ক্যাম্পাসে আসা বন্ধ করে দিতে হল।
কিছুদিন পর,তানভীর আবুলকে ফোন দিল।
-আবুলরে তুই আমার সাথে এই কামডা ক্যান করলি?আমি তোর কি ক্ষতি করছিলাম?
-কি ক্ষতি করছিলেন সেইটা মনে নাই ভাই?
-আবুল আমি যদি তোর খবর না করছি!
-ভাই পারলে খবর কইরেন। কত যে খবর করবেন তা এখন বুইঝ্যা গেছি।
আপ্নের ক্ষমতাডা যদি শুরুতেই বুঝতাম তাইলে আর আমার এত হ্যাপা পোহানো লাগতো না।
কথাটা বলে আবুল ফোনটা রেখে দিল। হঠাৎ আবুলের মনটা বেশ খারাপ হয়ে যায়। না,তানভীরের জন্য তার মন খারাপ হয় না। মন খারাপ হয় নিজের জন্য আর তার মত অসহায় কিছু ছেলেদের জন্য যারা ভার্সিটিতে এসে কিছু সিনিওরদের গোলামে পরিণত হয়।
পরের বছর,আবুলও সিনিওর হয়। তবে তার আচরণে কেউ কখনও বিব্রত হয়নি। বরং এমন একজন সিনিওর সে হয়েছিল যার কাছে জুনিওররা এসে মন খুলে কথা বলতে পারত। ভার্সিটির শেষদিন পর্যন্ত জুনিওরদের কাছে আবুল সম্মান পেয়েছিল। কিন্তু তানভীর যে কবে কখন হারিয়ে গেল সেই খোজ কেউ রাখল না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।