বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি না পেলেও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে তিন গুণেরও বেশী, যা অনেকাংশে সম্ভব হয়েছে এদেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের অকান্ত পরিশ্রম ও নিরবিচ্ছন্ন গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাত ও খাদ্য উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ৫৩টি উচ্চফলনশীল ও ৪টি হাইব্রিড ধানের জাতসহ শতাধিক আধুনিক ধান চাষের কলাকৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দারপ্রান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতার বৃদ্ধির ফলে পরিবর্র্তিত জলবায়ু উপযোগী তথা খরা, ঠান্ডা, লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু গবেষণার এই অগ্রযাত্রা থমকে যেতে পারে কৃষিবিজ্ঞানীদের বর্তমানে প্রচলিত পদোন্নতি জনিত হতাশার কারণে।
বর্তমানে ব্রি’তে বিভাগওয়ারী শূন্য পদের বিপরীতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া হয় । অর্থাৎ যে বিভাগের পদ শূন্য হবে শুধুমাত্র সেই বিভাগের বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি হয়ে থাকে। ব্রি’র ১৮টি গবেষণা বিভাগের পদ বিন্যাসের সমন্বয়হীতার জন্য একই তারিখে অথবা পূর্বে যোগদান করেও শুধু বিভাগীয় পদ খালি না থাকার কারণে সুনামের সহিত চাকুরী করেও সমগ্র চাকুরী জীবনে একটি মাত্র পদোন্নতি নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীকে অবসরে যেতে হচ্ছে। শুধু পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ৯০ এর দশকে প্রায় ৬০-৭০ জন দক্ষ বিজ্ঞানী হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। একই ধাররাবাহিকতায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখক দক্ষ বিজ্ঞানী সে¦চ্ছায় চাকুরী ছেড়ে বিদেশে চলে যান অথবা অন্য কোন সংস্থায় অধিক বেতনে চাকুরী নেন।
বিভাগীয় পদ শূন্য না থাকায় জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী হয়েও পদোন্নতি না পাওয়ায় বিজ্ঞানীদেও মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করায় কাজের পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। গবেষনা একটি সৃজনশীল কাজ হওয়ায় এখানে হতাশা নিয়ে কাজ করলে সফলতার দৌরগোড়ায় পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। প্রতিবেশী দেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে কৃষি বিজ্ঞাণীদেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলেও আমাদের দেশে এর চিত্র সর্ম্পূণ বিপরীত। এমতাবস্থায় কৃষিবিজ্ঞানীদের একটাই দাবী পদোন্নতি ক্ষেত্রে ইনসিটু (ওহংরঃড়) পদ্ধতি চালুকরা, যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে চালু রয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং কৃষিবিজ্ঞানীদের চাকুরীর দর্শন এক ও অভিন্ন।
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বেশিরভাগ সময় অধ্যাপনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন পাশাপাশি তাকে কিছু গবেষণাও করতে হয়। পক্ষান্তরে একজন কৃষিবিজ্ঞানী বেশিভাগ সময় গবেষণা কাজে নিয়োজিত থাকেন। তবে কিছু সময় তাকেও কোন বিশ্বদ্যিালয়ে অফলঁপঃ ঋধপঁষঃু হিসেবে ছাত্র পড়াতে হয়, আবার কখনও ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণা কার্যক্রম সুপারভাইজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কৃষিবিজ্ঞানীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ইনসিটু (ওহংরঃড়) পদ্ধতি চালুকরা যথার্থ ও যৌক্তিক। কৃষিবিজ্ঞানীদেও পদন্নোতির ক্ষেত্রে ইনসিটু পদ্ধতি চালু করলে সরকারের তেমন কোন রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পাবেনা।
উপরোন্তু বিজ্ঞানীদেও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে অধিক অবদান রাখতে পারবেন।
বর্তমান সরকার একটি কৃষি বান্ধব সরকার। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রনোদনা দেয়ার কথা বার বার বলেছেন, পাশপাশি কৃষিবিজ্ঞানীদের বয়স ও অন্যান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথাও বলছেন। কিন্তু আমাদের প্রধান দাবী পদোন্নতি জনিত সমস্যা সমাধান করা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ কৃষিগবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় পদোন্নতি পদ্ধতি অর্থাৎ ইনসিটু (ওহংরঃড়) পদ্ধতি চালু করবেন- এটাই বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর কাছে সকল কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা । ইনসিটু পদোন্নতির পদ্ধতি বাস্তবায়ন করাই হবে কৃষিবিজ্ঞানীদের জন্য যথার্থ প্রনোদনা।
ÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।