আমি, কথা কম -কাজ বেশীতে বিশ্বাসী......
কবি তখন অসুস্ত। তার স্ত্রী আশালতা সেন গুপ্তা(কবির রাখা নাম প্রমীলা দেবী) সেবা করে খ্যতি অর্জন করেছেন। কিন্তু অসুস্ত কবিকে সেবা করার জন্য ঘরবাড়ী ছেড়ে আসা কুশা সাইঁ এর কথা আমরা ক'জন জানি।
বিচিত্র এই কুশার জীবন। উডিষার অধীবাসি কুশা সম্বন্ধে নানা কথা শোনা যায় আসাদুল হকের নজরুল জীবনী গ্রন্ত্রে।
কেউ বলেন ,কবি কুশাকে পেয়েছিলেন কলকাতার শ্যমবাজারের এক পান দোকান থেকে। মা-বাপ হারা কুশাকে পানের দোকনদার কবিকে দান করে আহার বাসস্তানের দায় থেকে রেহায় পায়। আবার কারো দাবি খুব ছোট বেলায় কুশার গ্রামের অর্ধেক লোক প্রান হারায়। মা-বাপ হারা অনাথ বালকের ভার কেউ নেয় নি । সহায় সম্পত্তি স্বজনরা নিয়ে নেয়।
বড় হয়ে গ্রামে গেলও কবি অসুস্ত হলে আবার ফিরে আসে কবির বাড়ীতে।
কবির মৃত্যু পর্যন্ত আর কোথাও যায়নি কবি ছাড়া।
কবির চলার পথে পরিচয় হয়েছিল বালক কুশার সাথে এবং তিনি জানেত পারেন কুশার সব কথা। কবি কুশাকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসেন। প্রমীলা দেবীর ভাষায় "এমন কোনো কাজ নেই যা কবির জন্য কুশা করেনি।
সাধারন বাজার সদাই থেকে শুরু করে ভাত রুমে পানি এগিয়ে দেয়া পর্যন্ত ।
কবি নাজরুলের দৈনিন্দন জীবেনর সাথে কুশা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। কুশা দাবী করত ,কুশা কবির বড় সন্তান। কুশার মতে সে যখন এ বাড়ীতে আসে তখন বড়বাবু (কাজী সব্যচাচী) জন্মায় নি । তাই কুশার যুক্তিমতে, সে কবির বড় সন্তান।
এটা সত্য কথা যে ,কুশার সাথে কবির রক্তের কোন সম্পর্ক ছিলোনা। কিন্তু কবির জন্য কুশার কী মায়া-কী মমতার ঘাটতি ছিলনা না। কখন কবিকে কী খাওয়ানো দরকার বা কবির কখন ঘুমানো দরকার সব যেন কুশার জানা। হয়তো বা কবি বিরক্ত হয়ে কাউকে কাছে ভিড়তে দিচ্ছেন না বা কারো কথা শুনছেন না। কিন্তু কুশার বেলায় দেখা গেছে এর ব্যতিক্রম।
কবির মেজাজ যতই খারাপ থাকোক না কেন,কুশা হাজির হলেই পরিস্তিতি আয়ত্তে এসে যায।
কবি নজরুলের বাড়ির দরজা সপ্তাহে দুইদিন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ও জনসাধারণের জন্য খোলা থাকতো। সবদিন যে খুব একটা ভিড় হতো তা না,কিন্তু মাঝে মাঝে বেশ ভিড় হতো। বেশি লোক দেখলেই অসুস্ত কবির মেজাজ খারাপ হতো। তখন শব্দ-করে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন এমনকি মাঝেমাঝে জ্ঞান হারিয়ে পেলতেন।
এ অবস্তার সূচনাতে কবিকে শান্ত করার প্রচেষ্টা নেয়া হতো। তখন একমাত্র কুশা ছাড়া আর কেউ কবিকে শান্ত করতে পারতো না।
কুশা কবির সাথে ঢাকাও এসেছিলেন। কবির মৃত্যুর সময় পি,জি হাসপাতালে কবি পরিবারের পক্ষে একমাত্র কুশাই ছিলো। কুশা কবির কক্ষে মেঝেতে শুয়ে থাকতো।
কবির মৃত্যুর পরও কুশা এই হাসপাতালেই অবস্তান করতো। তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটতো হাসপাতালের সেই বিশেষ কামরাটির দরজার বাইরে শুয়ে কিংবা বসে। আর জীবন ধারণ করতো হাসপাতারের খাবার খেয়ে। এমনি অবস্তায় কুশাও একদিন ঢাকাতেই মৃত্যু বরণ করেন।
প্রতিবছর নজরুলের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কত আলোচনা-টকশোই হয়।
কিন্তু কোনদিন মহানুভব সেবক কুশা সাইঁ এর নাম শুনি নি। তাই আমার এই পোস্ট কুশা সাঁইয়ের রুহের শান্তি কামনায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।