আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রুসলোসিস সংক্রামিত হতে পারে মানুষে

তেমন কিছু বলার নেই

বাংলাদেশের পশুসম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় খাত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের শতকরা ৬.৫ ভাগ যোগান আসে এ খাত থেকে। দেশের মোট ২৫ ভাগ মানুষ সরাসরি পশুসম্পদের সাথে জড়িত। পশুর চামড়া থেকে বৈদেশিক মুদ্রার ১২ ভাগ অর্জিত হয়। বাংলাদেশের পশুসম্পদ মন্ত্রনালয় দেশের জিডিপিতে ৩.৫% অবদান রাখছে।

তাছাড়া দেশের বেকার সমস্যার সমাধান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, হালচাষ, পরিবহন, শষ্যমাড়াই, বিনোদনসহ পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম হাতিয়ার পশুসম্পদ। সেই পশুসম্পদ নিমেষেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ব্র“সেলোসিস নামক এক ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধির কারনে । গবাদিপশুর গর্ভপাত, এছাড়া দুধ উৎপাদন হ্রাস, বাচ্চার মৃত্যু, প্রজননে ব্যাঘাত, গর্ভফুল আটকে যাওয়া, জরায়ু প্রদাহ ও প্রজনন অমতা প্রভৃতি ব্র“সেলিসেসের মাধ্যমে হতে পারে । পাশাপাশি সংক্রামক এই রোগ মানবদেহে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে । এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে ।

জাপান ও দণি কোরিয়া থেকে উচ্চ শিা নিয়ে ব্র“সেলোসিস এর উপর গবেষণারত প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গরু, ভেড়া ও ছাগলে ব্র“সেলোসিস সনাক্ত করেন। তিনি জানান, এই জীবাণু অন্তঃকোষীয় হওয়ায় এন্টিবায়োটিক দিয়েও চিকিৎসায় তেমন ফল পাওয়া যায় না এবং একবার কোন খামার ব্র“সেলোসিস দ্বারা আক্রান্ত হলে একসময় সম্পূর্ণ খামারটি আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় ১৪% ছাগল, ৪.৮% ভেড়া, ৬.৯% মহিষ এ রোগে আক্রান্ত । গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও শুকরে এই রোগ গর্ভাবস্থার শেষের দিকে গর্ভপাত ঘটায়, এছাড়া দুধ উৎপাদন হ্রাস, বাচ্চার মৃত্যু, প্রজননে ব্যাঘাত, গর্ভফুল আটকে যাওয়া, জরায়ু প্রদাহ ও প্রজনন অমতা প্রভৃতি উপসর্গ প্রকাশের মাধ্যমে এ রোগটি বাংলাদেশে পশুসম্পদ শিল্পে প্রতি বছর ৬০ মিলিয়ন টাকা আর্থিক তি সাধন করে আসছে। কখনও কখনও ব্রুুসেলোসিস রোগে আক্রান্ত গাভীর জীবিত বাচ্চা হয় তবে অধিকাংশ বাচ্চা হয় দুর্বল, অপরিপক্ক এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারা যায়।

জীবাণুর জটিলতায় তীব্র প্রকৃতির জরায়ু প্রদাহ হয় বলে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে গাভীর মৃত্যু ঘটতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী েেত্র বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। ষাঁড়ের েেত্র এ জীবাণুর সংক্রমনে অর্কাইটিস, এপিডিডাইমাইটিস ও অন্যান্য জনন অঙ্গের প্রদাহে এসব অঙ্গ স্ফীত ও ব্যাথাপূর্ণ হয়। এ অবস্থায় ষাঁড়ের সিমেনের মাধ্যমে জীবানু নির্গত হয়। আক্রান্ত পশুর কঁাঁচা দুধ, স্বল্প জ্বাল দেয়া দুধ খাওয়ার মাধ্যমে অথবা নির্গত পদার্থ বা আক্রান্ত প্রাণীর প্রত্য বা পরো সংস্পর্শে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের এ রোগ হতে পারে।

আক্রান্ত গাভীর দুধ থেকে বাছুরে ও গর্ভবতী অবস্থায় ভ্র“ণে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। পরিণামে আক্রান্ত পশু মারাও যেতে পারে । ড. সিদ্দিক মানুষের উপর ব্র“সেলোসিসের তিকর প্রভাব সম্পর্কে জানান, এটি এমন একটি তিকর ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ যা মানবদেহে সংক্রামিত হয়ে স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সম। ব্র“সেলোসিস সংক্রমিত মানবদেহে দুর্বলতা, পেশী ও জয়েন্টে ব্যাথা, মাথা ধরা, জ্বর উঠা-নামা, লিভার ও প্লীহা আকারে বেড়ে যাওয়া ও রাতে ঘাম দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত দুগ্ধবতী মায়ের দুধ পান করলে শিশুদের এ রোগ হতে পারে।

তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে রক্ত নিলে বা অস্থিমজ্জা ট্রান্সপ্লান্টেশন করলে বা যৌন মিলনে অংশ নিলে এবং গর্ভবতী অবস্থায় গর্ভফুল এর মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয় এ রোগ শিশুদের মস্তিষ্ক আক্রমণ করতে সম । বাংলাদেশের পশুপালকদের মধ্যে প্রায় ১৫% ব্র“সেলোসিস আক্রান্ত । আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে গরু, ছাগল, ভেড়া মানুষের খুবই সংস্পর্শে থাকে এবং তার মতে পশুসম্পদের উল্লেখযোগ্য তির পাশাপাশি গ্রামীণ মহিলা, ুদ্র কৃষক, কসাই, গোয়ালা, ভেটেরিনারীয়ানদেরও এ রোগে আক্রমনের ঝুঁকি রয়েছে। ।

এ রোগের সনাক্তকরণ সম্পর্কে জানা যায়, ১৮৮৬ সালে সর্বপ্রথম জ্বর উঠানামা করছে এমন মানুষের প্লীহা থেকে মাইক্রোকক্কাস জীবানু সনাক্ত করা হয়। মানুষের এ রোগে জ্বর উঠানামা করে তাই ১৮৯৭ সালে এ রোগকে আন্ডুলেন্ট ফিভার নাম দেয়া হয়। ১৯০৪ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক ব্র“স মাল্টা দ্বীপে মানুষের এ মারাতœক ব্যাধির কারন অনুসন্ধানের জন্য কমিশন প্রাপ্ত হন। মাল্টা দ্বীপে এ রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় একে মাল্টা ফিভার এবং চিকিৎসকের নামানুসারে এ জীবানুর নাম ব্র“সেলা এবং রোগের নামকরন করা হয় ব্র“সেলোসিস । ট্র্যাম ১৯১৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি শূকরী থেকে ব্র“সেলা জীবানু সনাক্ত করেন এবং অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে বাডেল এবং বয়েস এপিডিডাইমাইটিস আক্রান্ত ভেড়া থেকে ব্র“সেলা জীবানু সনাক্ত করেন।

১৯৫৪ সালে ডেনিশ ভেটেরিনারীয়ান ব্যাং গর্ভপাত ঘটিত বকনের ফিটাস থেকে এ জীবানু সনাক্ত করেন। তাই তার নামানুসারে এ রোগকে ব্যাং’স ডিজিজও বলা হয়। রক্ত থেকে সেরোলজিকাল পরীার মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৭০ সালে গরুতে, ১৯৮৩ সালে মানুষে, ১৯৮৮ সালে ছাগলে এবং ১৯৯৭ সালে মহিষে ব্র“সেলোসিস সনাক্ত করা হয়েছে। এ রোগ নিয়ন্ত্রনে বর্তমানে দণি কোরিয়া, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশে ইৎঁপবষষধ ধনড়ৎঃঁং ংঃৎধরহ জই৫১ ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্র“সেলোসিসের প্রতিকার সম্পর্কে ড. সিদ্দিক আরও জানান, আমাদের দেশে এই রোগ নিরূপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও গবাদি পশুতে ইৎঁপবষষধ ধনড়ৎঃঁং ংঃৎধরহ জই৫১ ভ্যাকসিন প্রয়োগের সম্ভ্যাবতা যাচাই ও প্রয়োগ পরীণ এবং দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা প্রয়োজন।

তাছাড়া প্রতিটি উপজেলা ও জেলার ভেটেরিনারী হাসপাতালে এই রোগ নির্ণয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত । এ রোগের বর্তমান অবস্থা, আক্রান্তের হার, পরিধি জানার জন্য, সর্বোপরি মানুষে এ রোগ নিয়ন্ত্রণৃ করতে হলে সুনিদির্ষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পশুতে এ রোগ নির্মূল বা সীমিত রাখতে হবে সাথে সাথে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরকে জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচী নিতে হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.