দুই পরিবারের কথাবার্তা হয়ে গেছে। ছেলের মা এসে পরিয়ে দিয়ে গেছেন আংটি। কেনাকাটা চলছে। বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজনেরা আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ক্যালেন্ডারের দিনগুলো দাগিয়ে রাখছে মেয়েটি।
আর মাত্র কয়েকটা দিন পরই অন্য রকম হয়ে যাবে জীবনটা। দুজনকে ভালোমতো চিনে নেওয়ার এই তো সময়। কিন্তু এর মাঝেই বিনা মেঘে বজ্রপাত।
বিয়েটা হবে না। ভেঙে গেল বাগদান।
কীভাবে সামলে নেবে মেয়েটি? এই তো মায়ের সঙ্গে গিয়ে গয়নার ফরমাশ দিয়ে এসেছে সে। অনামিকায় দ্যুতি ছড়াচ্ছে ওদের দেওয়া আংটি। ঘরভর্তি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নতুন সব কাপড়চোপড়। শুধু সম্পর্কটাই নেই। আত্মীস্বজনের মধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গেছে।
দোষটা কার? কেন ওরা ভেঙে দিল এই সম্পর্ক? মেয়েটির কি আর বিয়ে হবে? কেউ আবার রেগে একাকার। দেখে নেবেন ওদের। বললেই হলো বিয়ে হবে না! এত কিছুর মাঝে মেয়েটির মনে যে কী চলছে, সেই খোঁজ কে রাখে। কত কষ্টে সে সামলাচ্ছে নিজেকে, তা বোধ হয় শুধু তার মায়ের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। আবার নতুন করে জীবনটা শুরু করার শক্তি কোথায় পাবে সে।
বিয়ে ভাঙা আর বাগদান ভাঙা, দুটো তো এক নয়। এটাই ভাবা হোক না যে বরং ভবিষ্যতের আরও দুর্ভোগ থেকে বেঁচে গেল মেয়েটি। কিছুটা ইতিবাচকভাবেও তো দেখা যায় বিষয়টিকে। সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীনের মত এমনই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক পদে কর্মরত তিনি।
‘বাগদানটা আমাদের দেশে শহুরে সংস্কৃতিই বলা যায়। এটা তুলনামূলক নতুন একটা ব্যাপার আমাদের দেশে। পাশ্চাত্যে বাগদানকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, আমাদের দেশে কিন্তু তেমনটা নয়। দেখা যায়, আমাদের অভিভাবকেরা এ ব্যাপারটি তেমন পছন্দও করেন না। আজকাল অবশ্য এটি বেশ আনুষ্ঠানিকভাবেই পালন করা হচ্ছে।
তবে যা-ই হোক, বাগদান ভাঙা মানেই তো জীবনের শেষ নয়। সামনে পুরো জীবন পড়ে থাকবে। একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ’ বলেন তিনি।
আর এই সামলে নেওয়ার জন্য পরিবারকে পাশে থাকতেই হবে।
কী করে এমন হলো, কার দোষ—এসব নিয়ে না ভেবে বরং মেয়েটিকে সাহস জোগাতে হবে। যা হওয়ার হয়েছে, এখন সেসব ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়াতেই সবার মঙ্গল। আর বাগদান ভেঙে যাওয়ায় নিজেকে অপরাধী ভাবার কোনো কারণ নেই। দেখা যায়, এমন ঘটলে মেয়েরাই বেশি ভেঙে পড়ে, অনেক সময় অপরাধবোধে ভোগে। এমন ঘটলে নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখা ভালো।
বারবার সেসব কথা না ভেবে সামনের দিকে তাকানো উচিত।
মাহবুবা নাসরীন মনে করেন, এ ব্যাপারে অন্য পক্ষকে দোষারোপ করা, কটু কথা বলা একদমই উচিত নয়। পরিস্থিতি তাতে আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। আর ব্যাপারটি নিয়ে লুকোচুরিরও কিছু নেই। বরং আত্মীয়-বন্ধুদের জানিয়ে দিন, দুই পক্ষের সমঝোতার অভাবে সম্পর্কটি ভেঙে গেছে।
অনেক সময় দেখা যায়, বাগদান ভাঙার পর অভিভাবকেরা তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিয়ে দেন। এটিও করা ঠিক নয়। মেয়েটিকে একটু সময় দিতে হবে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার। একটি সম্পর্কে প্রতারিত অনুভব করলে তার পক্ষে আবার অন্য কাউকে বিশ্বাস করাটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। আর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়ানো একদমই ঠিক হবে না।
আর পরবর্তী সময়ে বিয়ের বেলায় আগে বাগদান ভাঙার ব্যাপারটি জানিয়ে নেওয়াই ভালো। অপর পক্ষের মনে যদি এটুকু মেনে নেওয়ার উদারতা না থাকে, তাহলে তো আবার আগের মতোই জটিলতা তৈরি হতে পারে। কাজেই এই পরিবারের মানসিকতা ভালোমতো বুঝে তবেই নতুন সম্পর্কে এগোনো উচিত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।