স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, স্বপ্ন দেখাতে চাই। চরমভাবে আমি নব সৃজনে বিশ্বাসীএবং বি:শ্বাস করি মানবতার মুক্তি । কিছু করতে চেষ্টা করি যাতে মানবকল্যান হয়। সে এল। সামনের তমাল গাছটা ঝোড়ো বাতাসে দৈত্যের মতো মাথা ঝাঁকাচ্ছিল আর পাশের সুপুরি গাছটা মাটির উপরে আছাড়ি-পিছাড়ি খাচ্ছিল।
পদ্মা। শীতের পদ্মার সমস্ত বালুকণা উঠে এসে চোখ নাক বন্ধ করার উপক্রম করেছে। শব্দ সে যে কী অপূর্ব, হাওয়ার যে নিজস্ব একটা চরিত্র আছে এটা পদ্মা ধারে একা চাঁদ জ্যোৎস্নায় বসে অনুভব না করলে বোঝা যায় না। তার মধ্যে সে।
এ-আসা যে কী সেটা বোঝানো সম্ভব নয়।
লোকটি পদ্মার পারে বসে ওপরের তীরভুমি দেখত, কখনো দেখাও যেত না - ওইদিকে মেঘগুলোকে মনে হত যেন কোথাকার দুরদেশের মন্দির। শাঁখঘন্টার শব্দ শুনতে পেত। ধুপের গন্ধ নাকে লাগত। সে তন্ময় হয়ে যেত, এই অবস্থাতে সে এসে দাঁড়াল।
সামনে সুপুরি গাছটা তার পাগলামি চালিয়েই চলেছে।
তমাল গাছটারও বদমায়েশির সীমা নেই। ঘোর ঘনঘটায় বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হাওয়া পড়ে এল। এবার জল নামল বলে। মাঝিরা পদ্মার পাল গুটিয়ে কোনোরকমে পাড়ের দিকে ভিড়াবার চেষ্টা করছে তাদের নৌকা।
মহাজনি ভরগুলো নিজেদের দেহনিয়ে সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না। পানসিগুলো কোনোরকমে ভেতরে ভিড়ে যাবার চেষ্টা করছে। দাঁড়িগুলো দাঁড় টানতে গিয়ে পদ্মা-মার স্রোতের সঙ্গে যুঝে উঠতে পারছে না, হাল সামাল দিতে গিয়ে নিজেই বেসামাল হয়ে যাচ্ছে। পাড়ে ফাটল ধরেছে। চিরচির করে কালো একটা রেখা মাটির বুকের উপর দিয়ে নিজেকে এঁকে যাচ্ছে।
তার পরেই ঝপাং ঝপ মাটি ধসে পড়ছে। পদ্মা মা নিজের স্রোত বদল করছেন। সেদিন ছিল এমন এক দিন।
পদ্মার বুকে উত্তাল কামনা। পদ্মা এদের রক্তে অস্থিমজ্জায়।
এদিকে আবার একটা দামাল হাওয়া প্রচন্ড বাঁদরামি শুরু করে বালুগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে অভ্রের চিকচিক ব্যাপারটাকে দাঁড় করিয়ে দিল। তখনও তমাল গাছটা গন্ডগোল করছেই। আর সুপুরি গাছটা আছাড়ি-পিছাড়ি খাচ্ছেই। আর এরা দুজনে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটা মেয়েটার মুখের দিকে তাকাল।
ভাবল কত পবিত্র কত জীবন্ত এই মুহুর্তটা। এই যে উদার পদ্মার পাড় হাওয়া প্রকৃতির সমস্ত অবদান। এটাও মুহুর্তে। এটা তো পরের মুহুর্তে আর থাকবে না। সেই মুহুর্তে মেয়েটি হেসে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল।
আর বলল, "তোমার জন্যই এসেছি এই ঝড়ের রাতে। "
ও তাকে বুকের মধ্যে জাপটে ধরল, তারপরে মেয়েটির নিজের সুগন্ধি চুলগুলো দিয়ে মেয়েটিরই গলা পেঁচিয়ে ধরল এবং মেয়েটাকে মেরে ফেলল, ভাবল এই মুহুর্তটা অক্ষয় হোক। এরপরেও এও তো বুড়ো হয়ে যাবে। আমারও জীবনে বিভিন্ন ঘটনা আসবে। কিন্তু অক্ষয় অব্যয় মুহুর্তটি আর কোনো দিন জীবনে ফিরবেনা।
স্মৃতিটুকুকে মলিন হতে দেওয়া যায় না।
ও মেয়েটির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। বাইরে তমাল আর সুপুরি গাছ দাপাদাপি করছেই। পদ্মা তার নিজের মনে চলেছে। ঝড় পড়ে এলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।