আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐশিকে তার স্কুল জীবনের অর্ধেক সময়ের জন্য হলেও কোন ভালো মানের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ দেওয়া হউক



যেই শিক্ষা এবং যেই পরিবেশের কারনে আজ ঐশি বর্তমান অবস্থায় উপনীত হইয়াছে, ঠিক তার বিপরীত ধর্মী পরিবেশ অর্থ্যাৎ ধর্মীয় পরিবেশে তাকে কিছুকাল সময় শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ দেওয়ার পর তার মাঝে কিরুপ পরিবর্তন আসে বা সে কতটা সংশোধিত হয়, তা পর্যবেক্ষন করে ঘটনায় তার প্রক্রিত দায় কতটুকু তা ভালোভাবে বিচার বিশ্লেষন করে যেন তার অপরাধের শাস্তী নির্ধারন করা হয়, এই আবেদন আমার দেশের সরকার, বিচার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ এবং সকল বিবেকবান মানুষদের নিকট । কারন,ঐশীর বর্তমান বয়স হলো শিক্ষা গ্রহনের বয়স, অনেকটা কাদা মাটির মন্ডের মতো । কাদা মাটির মন্ডকে যেমন আপনি যেরকম খুশী আকৃতি প্রদান করতে পারবেন, ঠিক ঐশীর এই বয়সের একটি ছেলে বা মেয়েকে যেকোন পথে পরিচালিত করতে পারবেন । শুধু ছেলে বা মেয়েটিকে আপনার কাংখিত পথে পরিচালিত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশটা আপনাকে নিশ্চিত করে দিতে হবে । এই বয়সের ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য একমাত্র দিকনির্দেশনাকারী হলো তার মা-বাবা ।

মা-বাবা যদি তাদের সন্তানদের এই বয়সে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ভূল করে, তবে এই ভূলের মাশুল কিন্ত তাদেরকেই দিতে হয় । যেমনটা হয়েছে ঐশীর মা-বাবার ক্ষেত্রে । ঐশীর মা-বাবা তাদের মেয়ের জন্য সঠিক পথটি বাছাই করতে না পারার প্রধান কারন- তারা নিজেরাও সঠিক পথে পরিচালিত ছিলনা । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রমতে,একজন পুলিশ কর্মকর্তা কি করে তার এতো কম বয়সি একটি মেয়ের পিছনে সপ্তাহে লক্ষ টাকা খরচ করতে সক্ষম হয়েছিল,কি করে লক্ষ টাকা মাসিক বেতনের একটি স্কুলে তাকে পড়াইতে সক্ষম হয়েছিল, তা বুঝতে নিশ্চয়ই মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নাই । সুতরাং নিজের জীবনের ক্ষেত্রে যে সঠিক পথটি বেছে নিতে পারে নাই, তার তো মেয়ের জন্য ভূল পথ নির্বাচন করাই স্বাভাবিক ।

তাছাড়া ঐশী তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যে পরিবেশে বড় হয়েছে এবং সেই পরিবেশে বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরন চাইবা মাত্রই পেয়ে এসেছে, নিজে থেকে সেই পরিচিত পরিবেশের বাইরের কোন চিন্তা করা তার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা । ঐশীর বাবা পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও তার মেয়ের মাদকাসক্ত হওয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে যাওয়া এবং মাদকের কবল থেকে মেয়েকে সঠিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার ব্যর্থতা আমার নিকট বিষ্ময় ঠেকেছে । কারন মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কৌশল, পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে তার ভাল জানা থাকার কথা । আমি ঐশীকে কেন শাস্তী দেওয়ার পূর্বে একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছুকাল লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য বলছি ? কারন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমের তথ্যানুযায়ী আমাদের দেশে ঐশীর মতো প্রায় এককোটি কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী পর্যন্ত বয়সের ছেলে-মেয়েরা বর্তমানে মাদকের ছোবলে বিপদাপন্ন এবং সেই সাথে তাদের এককোটি পরিবারও, যেমন-তারমধ্যে আমাদের পরিবারও আছে এবং আমাদের চারপাশের আরো কত কত পরিবার । আমার একটি ছোট ভাই যে কিনা এইচ,এস,সি পাস করার পর ডিগ্রিতে সবেমাত্র ভর্তি হয়েছিল, ঐশীর ন্যায় মাদকের ছোবলে বিপদাপন্ন হয়ে বর্তমানে আমাদের পুরা পরিবারটিকেই অত্যন্ত ঝুকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে ।

ঐশী যে মর্মান্তিক ও অবিশ্বাস্য হ্রদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তা যে কোন মাদকাসক্তের পক্ষেই সম্ভব, যা আমি আমার বাস্তব ধারনা থেকেই বলছি । তাই সবসময় আমরা খুব ভয়ে ভয়ে থাকি, কখন আমার মাদকাসক্ত ভাইটি কি করে বসে । তার চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে সে বাসায় প্রচন্ড গন্ডোগল শুরু করে দেয় । এমনকি সে ঘরের বিভিন্ন জিনিস পত্র চুরি করে নিয়ে বিক্রি করা থেকে শুরু করে তার অংশের জায়গা-জমি পর্যন্ত বিক্রি করে ফেলে নেশার টাকা যোগারের জন্য । তার লেখা পড়া করার বয়স শেষ হওয়ার পূর্বেই হঠাৎ আমাদের বাবা মারা যাওয়ায়, তাকে আমরা পরিবারের প্রয়োজনে ব্যবসার কাজে লাগিয়েছি ।

কিন্ত সে অল্প বয়সে ব্যবসায় অনেক টাকা হাতে পেয়ে খারাপ ছেলেপুলেদের সাথে মিশে ভূল পথে পা বাড়ায়, যা আমরা আমাদের কমবয়সের অনভিজ্ঞতার কারনে তখন বুঝতে পারি নাই । ফলে যা হবার, তা ই হয়েছে । সে অনেক টাকা পেয়ে আর নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে, বিভিন্ন আজেবাজে ছেলেদের সাথে মিশে একদিকে যেমন ব্যবসার বারোটা বাজিয়েছে, অন্যদিকে নিজেও মাদকের ছোবলে নিজেকে তিলে তিলে নি:শ্বেস করে দিচ্ছে এবং সেই সাথে পরিবারকেও ফেলেছে এক বিরাট বিপর্যস্থ অবস্থায় । অথচ কত ভদ্রই না ছিল আমার এই ভাইটি, কি মধুর ছিল তার ব্যবহার ! মাদক যে একজন মানুষকে কি পরিমান অধ:পতনে নিয়ে যায়, ঐশীর ঘটনায় তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরন , যা প্রত্যক্ষ করল পুরা দেশ বাসী । একটি পরিবারে একজন মাদকাসক্ত থাকা যে কত বড় সমস্যা, তা একমাত্র ভূক্তভোগী পরিবার ছাড়া অন্য কারো পক্ষে অনুমান করাও অসম্ভব ।

ঐশী যে মর্মান্তিক ও অবিশ্বাস্য হ্রদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটিয়ে দেশের তরুন সমাজের প্রক্রিত অবস্থার জানান দিয়েছে, তারপরও কি জাগ্রত হবে না বিবেক -আমাদের,সমাজের ও রাষ্ট্রের ? আমাদের চারপাশের সমাজ ও সমগ্রদেশ আমাদেরই ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আগ্রাসী লোভের কারনে এবং পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মাদকব্যবসার এক অভয়ারন্যে পরিনত হইয়াছে । কোথায় নেই মাদক ? গ্রাম-গন্জ থেকে শুরু করে পাড়া,মহল্লা,হাট,বাজার,রাস্তা,ঘাট,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল,অফিস,আদালত এমনকি বাসাবাড়িতে বসে বসেও যে কোন প্রকারের মাদক পাওয়াটা এখন ছেলের হাতের মোয়ার মতোই সহজলভ্য । ফলে মাদকাসক্তকে চিকিৎসা করিয়ে আনার পরেও মাদকের সহজলভ্যতায় বার বার সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে । কারন, একজন তরুন-যুবক ও মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে আপনি কতক্ষন চোখে চোখে রাখতে পারবেন ? সমাজকে, পুরো দেশকে মাদকমুক্ত করা না গেলে, কি ভয়াবহ বিপর্যয় যে অপেক্ষা করছে এই জাতির জন্য, তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না । ঐশীর ঘটনা তার একটি নমুনা মাত্র ।

বাংলার কোটি পরিবার আজ ঐশীদের ভয়ে তটস্থ, কখন কার পালা আসে মাদকের বলি হওয়ার জন্য । আর সমাজকে ও পুরো দেশকে মাদকমুক্ত করতে হলে অবশ্যই সরকারকেই মূখ্য ভূমিকা নিতে হবে এবং এটা সরকারেরই দায়িত্ব । কারন, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত, তাদের প্রায় সকলেই সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় লালিত-পালিত হয় । আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার বলতে পারি যে, সরকার যদি আন্তরিকভাবে দেশকে মাদকমুক্ত করতে চায়, তবে মাত্র চব্বিশ ঘন্টা সময়ের মধ্যে পুলিশের সহায়তায় মাদকের ব্যবসা সম্পূর্নরুপে বন্ধ করতে সক্ষম । কারন, একমাত্র পুলিশই জানে মাদকব্যবসার সর্বোচ্চ বেনিফিসিয়ারী থেকে শুরু করে একদম মাদকের খুচরা বিক্রেতা , এমনকি সকল শ্রেনীর মাদকসেবীদের পরিচয় পর্যন্ত ।

তাই আমি ঐশীর বর্তমান অবস্থার জন্য তার মা-বাবাকে দায়ী করার পাশাপাশি সরকারকেও সমভাবে দায়ী করব । কারন, সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়-দায়িত্ব যেমন মা-বাবার উপর বর্তায়, তেমনি দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মদের জন্য একটি মাদকমুক্ত বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি সুনাগরিক গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সরকারের উপরই বর্তায় । সরকার কোন অজুহাতেই দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না । যেহেতু সারা দেশে প্রায় একটি লোক মাদকাসক্ত, সেহেতু এই বিপুল সংখ্যক মাদকাসক্তকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে একটি সঠিক পন্থা খুজে বের করা খুবই জরুরী বলে আমি মনে করি । তারই একটি পরিক্ষামূলক কার্যক্রম হিসাবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঐশীকে কঠোর নিরপত্তার মধ্যে রেখে একটি ভালোমানের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল জীবনের প্রায় অর্ধেকসময় ধরে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে, তার মধ্যে তৈরী হওয়া মাদকের প্রভাবজনিত ধ্বংসাত্মক মনোভাব ও অপকালচারের অভ্যাসগুলির কিরুপ পরিবর্তন আসে, তা পর্যবেক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সবিনয় আবেদন করছি ।

কারন, পরিবেশের প্রভাব অনুযায়ীই মানুষের স্বভাব,চরিত্র গঠিত হয়ে থাকে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি । অত:পর উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে ঐশীর স্বভাব,চরিত্রে,চাল-চলনে যদি আশানুরুপ পরিবর্তন আসে, তবে অন্যদের ক্ষেত্রেও অনুরুপ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেশের সকল মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে । সেই সাথে নূতন করে যেন কেউ আর মাদকের কবলে পড়তে না পারে, তার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে । তাহলেই কেবল, আমরা মাদকমুক্ত পরিবার,সমাজ ও দেশ গঠন করতে সক্ষম হবো ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।