তাঁর বাদামি চোখ জোড়ায় নাকি জাদু আছে! ক্যারিয়ারের সেই শুরু থেকে শাহরুখ, ফারাহ খান আর মনীষ মালহোত্রা বলতেন সে কথা। হয়তো সেই টানাটানা চোখের মায়াবি চাহনি দেখে ওম শান্তি ওম ছবির সেটে বসেই জাভেদ আখতার লিখেছিলেন ‘আখো মে তেরি আজব সি আজব সি’ গানটি। ২০০৭ সালে শাহরুখের হাত ধরেই বলিউডে যে মেয়ের যাত্রা শুরু, ছয় বছর পর টাইটেল কার্ডে তাঁকেই প্রাধান্য দিলেন কিং খান। চেন্নাই এক্সপ্রেস ছবির শুরুতে নাম দেখানোর সময় শাহরুখ তাই নিজেকে বাদ দিয়ে প্রথমেই রেখেছেন তাঁর নাম। পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি লম্বা প্রায় পেনসিলের মতো ছিপছিপে শরীরের আকর্ষণীয় পা দুখানিতে যাঁর কেবলই লতা জড়ানো আবেদনের সাড়া পাওয়া যায়, তিনি আর কেউ নন, বলিউডের লাস্যময়ী অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন।
দীপিকার বাবা বিখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোন। ভারতের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাডমিন্টন খেলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। দীপিকার ছোট বোন একজন গলফার। দীপিকা নিজেও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলতেন। বেঙ্গালুরুর সোফিয়া হাইস্কুলে পড়ার সময় আন্তরাষ্ট্রীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সেই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হয়ে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা কখনোই ছিল না তাঁর। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন যে দেখতেন, তা-ও নয়। তবে শখ ছিল মডেলিংয়ে। সেই মডেলিংয়ের সুবাদেই সুযোগ মেলে বড় পর্দায় কাজ করার। বিটাউনে পা রাখার আগে ভারতের কর্ণাটকে মুক্তি পেয়েছিল দীপিকা অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ঐশ্বরিয়া।
২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০৭ সালে ফারাহ খান পরিচালিত ওম শান্তি ওম ছবির মাধ্যমে তাঁর বলিউড অভিষেক। কিং খানের বিপরীতে প্রথম ছবিতেই অসামান্য অভিনয়ের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি বলিউডকে কাঁপিয়ে তোলার জন্যই এসেছেন। ছবিতে ভালো অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ফিল্মফেয়ারের সেরা নবাগত অভিনেত্রীর পুরস্কারটিও জোটে দীপিকার। মাঝপথে চাঁদনী চক টু চায়না, কার্তিক কলিং কার্তিক, ব্রেক কে বাদ, লাফাঙ্গ পারিন্দে বক্স অফিসে তেমন একটা সাড়া ফেলতে না পারলেও ছবিগুলো কোনোভাবেই দীপিকার এগিয়ে চলার পথে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।
গেল বছর ভরসা করার মাধ্যম ছিল দীপিকার সবেধন নীলমণি ককটেল। সেই একমাত্র ভরসাই বেশ ভালো বেগ তোলে দীপিকার ফিল্মি ক্যারিয়ারে। ককটেল ছবির ব্যাপক সাফল্যের পর বলা যায় তাঁর ফিল্মি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময়টি আসে এই ২০১৩-তে এসেই। বছরের প্রথম ছবি রেস টু দিয়ে হিটের যাত্রা। এরপর ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি এবং সর্বশেষ চেন্নাই এক্সপ্রেস।
আসছে আরও দুটি ছবি। ২০১৩ সালটি কি তবে দীপিকার?দীপিকা বলেছেন, ‘আমার শুরুটা বেশ বড় ছিল। মাঝখানে মুখ থুবড়ে পড়েছি। আবার ঝেড়েঝুড়ে উঠেছি। শিখেছি পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে।
আজ যখন শাহরুখের সঙ্গে আবার কাজ করছি, মনে হচ্ছে যেন বৃত্তটা সম্পূর্ণ হলো। অনেকে বলছেন এ বছরটিকে আমার বছর। কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করে ভালো চলচ্চিত্রের ওপর। সফলতা সাময়িক বলেই আমি মনে করি। যত বেশি সফলতা আসবে, তা ধরে রাখা ততই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
চেন্নাই এক্সপ্রেস-এর সফলতার পর আমাকে পরের ছবিটি আরও ভালো করার জন্য মনোযোগ আর কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রতিটি ছবির ক্ষেত্রেই সফল হতে চাই আমি। ’দীপিকার অভিনয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে শাহরুখ খান বলেন, ‘দীপিকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ওম শান্তি ওম-এর শান্তি প্রিয়ার থেকে অনেক আগে এগিয়ে গেছে দীপিকা। কিন্তু মানুষ হিসেবে ওম শান্তি ওম-এর থেকে এতটুকু বদলায়নি।
আমার সঙ্গে ওর প্রথম কাজ বলে হয়তো দীপিকা আমার বেশি প্রিয়। কিন্তু সত্যি দীপিকা ভালো অভিনেত্রী। প্রচণ্ড পরিশ্রমী। স্টারডম একদম নেই। ’দীপিকা পাড়ুকোন এখন ন’টি ব্যান্ডের মুখপাত্র।
দীপিকা এ বছরে যা ছবি করেছেন, প্রতিটিই হিট। রেস টু ও ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানির বক্স অফিস সংগ্রহ প্রায় ৩০০ কোটি রুপি। চেন্নাই এক্সপ্রেস একাই ২০০ কোটির পথে। আসছে সঞ্জয়লীলা বনশালীর রামলীলা ও দক্ষিণি ছবির সুপারস্টার রজনীকান্তের বিপরীতে আলোচিত তামিল ছবি কোচাডাইয়ান। এই দুটি ছবি খুব কম করে হলেও ১০০ কোটি করে ব্যবসা করবেই।
এত এত সাফল্যের পরও আনন্দে গা ভাসিয়ে দেননি দীপিকা। দীপিকা জানেন, ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতি শুক্রবার ভাগ্য পাল্টে যায়, সেখানে মাটির কাছাকাছি থাকাটাই বোধ হয় বুদ্ধিমানের কাজ!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।