সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূলে মানুষ। নগর পরিবহন ব্যবস্থাও এর ব্যতিক্রম নয়। এজন্য গাড়ি নয়, মানুষকেন্দ্রিক পরিকল্পনা হতে হবে। যা জনকল্যাণের পথকে সুগম করবে। নগর সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষের যাতায়াতের চাহিদা লণীয়।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে নগরে শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে যাতায়াত হয়েছে। মাত্র একশ বছরের মধ্যে অটোমোবাইলের আবিষ্কার পরিবহন ব্যবস্থাসহ নগর সংস্কৃতি, পরিবেশ, অর্থনীতি, জ্বালানী, স্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। তবে এর কিছু পূর্ব থেকে অযান্ত্রিক যানের চল শুরু হয়েছে।
আজকের বিশ্বে নগর পরিবহন ব্যবস্থায় দুইটি প্রধান বৈশিষ্ট্য পরিলতি হচ্ছে। একই সময়ে কোথাও পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু মানুষ আবার কোথাও গাড়ি।
এর পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক রাজনীতি। যার ভিতর থেকেই সুকৌশলে নিজেদের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য প্রথমেই একটি দিক-নির্দেশনামূলক নীতিমালা জরুরী। যেখানে জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণে সমন্বিত চিন্তার প্রয়াস থাকা চাই।
বিচ্ছিন্নভাবে নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়া সম্ভব নয়।
এর সঙ্গে নগরের সামগ্রিক পরিবেশের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু যাতায়াত চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণই একমাত্র সমাধান নয়। নগরে মানুষের জন্য অনেকগুলি সেবা যেমন-পানি, বিদ্যূৎ, গ্যাস সরবরাহ, আবাসন, কর্মসংস্থান, বিনোদনের জন্য খোলামেলা জায়গাসহ নানা ধরনের সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অতিরিক্ত ব্যয় ও ভূমির ব্যবহার অন্যান্য সুবিধা সৃষ্টির অন্তরায়। সুতরাং যাতায়াত চাহিদা হ্রাসকরণ ও পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যথার্থতা নিশ্চিত করার প্রতি মনযোগী হওয়া প্রয়োজন।
মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, নিরাপদ যাতায়াত, যাতায়াত খরচ ও সময়ের নির্দ্দিষ্টতা, সহজগম্যতা (কাছাকাছি দূরত্বে প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ এবং যাতায়াত মাধম্যের উপযোগিতা), স্বাস্থ্য, জ্বালানী, পরিবেশ, কর্মসংস্থান, ভূমির ব্যবহার ও জনসংখ্যার চাপ নিয়ন্ত্রণ এ সকল বিষয়ে নীতিমালায় সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে একটি নির্দ্দিষ্ট শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ এড়াতে দেশের অন্যান্য শহরেও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। নগরের ভূমি কোথায় কিভাবে কতটুকু কি কাজে ব্যবহৃত হবে সেটিও সুনির্দ্দিষ্ট হতে হবে। নগর ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
পরিবহন ব্যবস্থায় যাতায়াত মাধ্যমগুলির মধ্যে ক্রমনির্ধারণে কোনটিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে সেটি ঠিক করতে হবে।
পাশাপাশি ক্রমানুসারে অন্যান্য মাধ্যমগুলির উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন থাকলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিনিয়োগ, কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ, তদারকি এবং ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরী। যা বাস্তবে রূপ দিতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এই খাতে কর্মরত সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। তবে অবশ্যই কার কি দায়িত্ব সেটিও দক্ষতার ভিত্তিতে বন্টন করা আবশ্যক।
সর্বোপরি পুরো প্রক্রিয়ায় জনসাধারণ, বেসরকারী সংগঠন, পেশাজীবি সংগঠন, বিশেষজ্ঞ এবং পরিবহন সেবাদানকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।