বন্ধ চোখে মুহূর্তটা ফাঁকি দিয়ে চলে যায়, স্বপ্নগুলো নির্মম বাস্তবতা ছাড়া কিছু নয়। চূর্ণ ধুলিকণা, সবই যেন চূর্ণ ধুলিকণা।
ঔপন্যাসিকদের সম্বন্ধে ই.এম.ফরস্টার বলেছিলেন, “আমরা সবাই এমন একটা ভাব করতে ভালোবাসি যেন বাস্তব চরিত্র ব্যবহার করে আমরা গল্প উপন্যাসের চরিত্র সৃষ্টি করি না। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। ” জীবন্ত বাস্তব চরিত্রকে ভিত্তি করেই ইংরেজী সাহিত্যের জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমসকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
১৮৮৬ সালের মার্চ মাসে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল যখন শার্লক হোমস সিরিজের প্রথম গল্প “আ লেডি ইন স্কারলেট” লিখবেন বলে মনস্থির করছেন, তখন তিনি তীব্র উৎকন্ঠায় ভুগেছেন। এডগার অ্যালান পো’র গোয়েন্দা চরিত্র দুপ্যাঁকেও বুদ্ধিতে ছাড়িয়ে যায় এমন একটি গোয়েন্দা চরিত্র তিনি সৃষ্টি করতে চান। ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ল ডক্টর বেল-কে। ১৮৭০ সালে ডয়েল যখন এডিনবরা মেডিকেল কলেজের ছাত্র, ডক্টর যোসেফ বেল তখন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং এডিনবরা মেডিকেল জার্নালের সম্পাদক। এডিনবরা গোলন্দাজ বাহিনীর তিনিই তখন উপদেষ্টা চিকিৎসক।
১৯২৪ সালে প্রকাশিত স্মৃতিকথায় ডয়েল লিখেছেন, “শার্লক হোমস চরিত্র সৃষ্টি করতে গিয়ে আমি তার কথাই বারবার ভাবছিলাম। আমার পুরোনো শিক্ষক জো বেল। তার ঈগল পাখির মতন চোখ-মুখ, কৌতুহলোদ্দীপক চলাফেরা, যে কোন ব্যাপারে তার অদ্ভূত ক্ষমতা… এ সবকিছু বারবার মনে পড়ছিল। ” ১৮৯২ সালে এক চিঠিতে ডয়েল ডক্টর বেলকে লিখেছেন, “এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আপনাকে দেখেই আমি শার্লক হোমস চরিত্র সৃষ্টি করেছি। হোমস এর বিশ্লেষণী ক্ষমতাও কোন বানানো অতিরঞ্জিত ব্যাপার নয়।
এডিনবরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমি নিজে আপনাকে ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখেছি। ” হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডয়েল ডক্টর বেলের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন, রোগীদের কেস হিস্ট্রি লিখতেন। ডয়েল এ বিষয়ে একটি ঘটনাও শুনিয়েছেন। একবার বেল এক রোগীকে দেখে বলেছিলেন, “ভদ্রলোক হাইল্যান্ড রেজিমেন্টে একজন নন-কনডিশন্ড অফিসার ছিলেন। বার্বাডোজে কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন।
” হতভম্ব ছাত্রদের সামনে বেল ঘটনাটির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এভাবে, “…ভদ্রলোকের চেহারা, আচার-আচরণ বেশ সম্ভ্রান্ত কিন্তু উনি মাথা থেকে টুপি খোলেন নি। সেনাবাহিনীর লোকেরা মাথা থেকে টুপি না খোলায় অভ্যস্ত। ভদ্রলোক নিশ্চয় কয়েকদিন আগে অবসর নিয়েছেন, তা না হলে নিশ্চয়ই তিনি এই সাধারণ আচারণে অভ্যস্ত হতেন। ভদ্রলোক অন্যদের উপর একটু কর্তৃত্ব খাটাতে ভালোবাসেন, স্কটল্যান্ডের লোকেদের এমন অভ্যাস থাকে। ভদ্রলোকের গোদ হয়েছে, ওটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোগ, ব্রিটেনের নয়।
ভদ্রলোক যে বার্বাডোযে ছিলেন এটা তার সবচেয়ে বড় প্রমান। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।