উন্মাদ আমি আমার লিখা পড়বার প্রয়োজন আছে কি
মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ের সংবাদটি আমি শোনার পর বিশ্বাস করেছিলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। যদিও জানতাম না, তিনি আদৌ এ বছর এভারেস্ট বরাবর রওনা হয়েছেন কি না। জানতাম না তার গাইড কে ছিলো, জানতাম না তিনি কোন অভিযাত্রীদলের সাথে গিয়েছেন, এভারেস্টের কোন দিক থেকেই বা তিনি চড়লেন, এই বিপুল ব্যয় কে নির্বাহ করলো, কীভাবে সংবাদটি পেয়ে এভারেস্ট থেকে বহু নিচে বসে কেউ একজন ব্লগে ব্লগে ছড়িয়ে দিলেন। কোনো কিছু না জেনেই আমি তথ্যটি চেয়ারে বসে গ্রহণ করে নিয়েছিলাম।
পরবর্তীতে যখন এ নিয়ে সন্দেহের প্রথম ঢেউটি অডিয়েন্সের ওপর আছড়ে পড়লো, তখন জমে থাকা অনেকগুলো প্রশ্ন পাওনাদারের মতো এসে কড়া নাড়লো আমার চৈতন্যের দরজায়।
আমার বিশ্লেষণ তাই নিজেকে দিয়েই শুরু। কেন আমি বিশ্বাস করলাম তথ্যটা? অন্যভাবে বলতে গেলে, কেন আমরা কোনো কিছু বিশ্বাস করি?
"বিশ্বাস" নিয়ে একটু চিন্তা করে, এর তিনটি মৌল উপাদানকে ছক কেটে আলাদা করলাম, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে "বিশ্বাস" গড়ে ওঠে। নিচের ডায়াগ্রামে দেখুন।
এই তিনটি যদি একটা ভারসাম্যে এসে পৌঁছায়, বিশ্বাস গড়ে উঠবে এবং টিকে থাকবে।
কোনো কারণে যদি বক্তা আর বক্তব্যের মাঝে ভারসাম্যে একটু বিঘ্ন ঘটে, কিংবা বক্তা আর অডিয়েন্সের মাঝে সংযোগে সমস্যা দেখা দেয়, অথবা অডিয়েন্স আর বক্তব্যের মাঝের যোগসূত্রে ফাটল ধরে, বিশ্বাস টলে যেতে পারে, এমনকি ধ্বসেও যেতে পারে।
প্রতিদিনের ঘটনাগুলোর কথা খবরের কাগজে, বা ব্লগে পড়ি, টিভিতে দেখি, এবং নিজেরা একটি সিদ্ধান্তে আসি। এখানে "বিশ্বাস" এর প্রসঙ্গ আসে। আমরা একজন বক্তাকে পাই, তার একটি বক্তব্যকে পাই, আর নিজেরা অডিয়েন্সের চেয়ারে বসে সেই বক্তব্যকে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করি। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন করি?
আমি নিজেকে প্রশ্ন করে যে উত্তর পেলাম, সেটি হচ্ছে, মুসার বক্তব্যটি [অর্থাৎ তিনি এভারেস্ট শীর্ষ জয় করেছেন] একটি আদর্শ অডিয়েন্স খুঁজে পেয়েছে।
স্থানকালপাত্রের একটি চমৎকার মেলবন্ধনের কারণেই এই বক্তব্য বহু লোকে বিশ্বাস করেছেন, কোনো প্রশ্ন না করে, কোনো প্রমাণ দেখতে না চেয়ে। কেন এমন চাওয়া, এ নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে কথা হবে। এ পর্বে আমি বক্তা আর বক্তব্যের মধ্যে যোগসূত্রটি নিয়ে কথা বলবো।
মুসা ইব্রাহীমের জায়গায় আজ যদি আমি এসে বলতাম, আমি এভারেস্ট জয় করে এসেছি, আপনারা আমাকে পাত্তা দিতেন না। কারণ, মুসা ইব্রাহীম এই এভারেস্ট জয়ের পথে হাঁটছেন বেশ কিছুদিন ধরে, আমি হাঁটছি না।
খবরের কাগজের কল্যাণে মুসা ইব্রাহীম নামটি পরিচিত, এবং সুদীর্ঘ সময় ধরে তিনি এভারেস্ট শব্দটি উচ্চারণ করে করে মিডিয়াতে "মুসা ইব্রাহীম" আর "এভারেস্ট"কে এক পঙক্তিতে বসিয়ে ক্রমশ তাঁর বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা নির্মাণ করেছেন। ঈস্টার দ্বীপে বেশ কিছু দানবাকৃতির মূর্তি রয়েছে, যা মানুষের বিস্ময় জাগিয়ে আসছে অনেক বছর ধরে, কিন্তু যা মানুষের মনোযোগ এড়িয়ে গেছে, তা হচ্ছে, ঐ মূর্তিগুলো [মোয়াই] বিপুল পরিমাণ নুড়ি দিয়ে তৈরি প্ল্যাটফর্মের [আহু] ওপর বসানো। ওরকম এক একটি আহু নির্মাণও বিপুল শ্রমসাধ্য কাজ, যদিও তা মানুষের বিস্ময় অর্জন করতে সমর্থ হয়নি। মুসার এভারেস্ট জয়কে যদি মোয়াই হিসেবে ধরে নিই আমরা, তাহলে এই জয়ের সংবাদটির গ্রহণযোগ্যতা নির্মাণের জন্যে পাঁচ ছয় বছর ধরে তাঁর অধ্যবসায়কে আহুনির্মাণের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
মুসা ইব্রাহীমের এই অতীত মিডিয়াভুক্তি নিয়ে একটু খোঁজ করতে গিয়ে যা জানলাম, সেটিও আমার মনে সন্দেহের সরু ফাটলটাকে প্রশস্ত করা শুরু করলো।
অতীতে মুসা যতগুলো পর্বতশীর্ষ জয় করার দাবি জানিয়েছেন, তার কোনটির সাথেই উপযুক্ত কোনো প্রমাণের উল্লেখ মিডিয়াতে আসেনি।
একটিরও নয়।
এ ব্যাপারে কথা শুরুর আগে চলুন মীর শামছুল আলম বাবুর বয়ানে আমরা বাংলাদেশে পর্বতারোহণের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু শুনি [১]।
বাবুর ভাষ্যের সাথে আরো কিছু সূত্র যোগ করে আমরা একটি কালপঞ্জি পাই, অনেকটা এমনঃ
১৯৬৯ সালে জামালপুরের ধ্রুব জ্যোতি ঘোষ, ১৯৭৯ সালে প্রবাসী ইন্তেসার হায়দার ও ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের সুমন সম্পদ বণিক বিচ্ছিন্নভাবে এভারেস্ট অভিযাত্রায় শরিক হয়েছিলেন।
মুনতাসীর মামুন ও রিফাত হাসানের এভারেস্ট বেইসক্যাম্প ট্রেক [১৭ হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে] নিয়ে জনকণ্ঠে ২৫ জুলাই, ২০০৩ সালে একটি ফিচার ছাপা হয়, এবং এ খবর দেখে ইনাম আল হক এভারেস্ট অভিযাত্রী দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ এ ইনাম-আল-হকের বাসায় বাংলাদেশ এভারেস্ট টিম গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় এবং ২০ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ এ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মুসা ইব্রাহীম, রিফাত হাসান, মুনতাসির মামুন ইমরান, সজল খালেদ, সিরাজুল হক সাগর, এনাম তালুকদার, মশহুরুল আমিন মিলন ও সাদিয়া সুলতানা সম্পাকে নিয়ে 'বাংলাদেশ এভারেস্ট টিম-১'-এর ঘোষণা দেন ইনাম-আল-হক।
এই অভিযাত্রী দলের পক্ষ থেকে ৯ অক্টোবর, ২০০৩ এ পর্বতারোহণে প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের উত্তর কাশির নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে যান ইমরান।
মাউন্টেন ডিউয়ের আর্থিক সহায়তা ২০০৪ সালের ২ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মুসা ইব্রাহীম, সিরাজুল হক সাগর, সাদিয়া সুলতানা সম্পা ও মীর শামছুল আলম বাবু দার্জিলিঙের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে 'বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং' কোর্সটি সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।
২০০৪ এর মে মাসে এভারেস্ট বেইস ক্যাম্প ট্রেকিঙে ইনাম আল হকের নেতৃত্বে অংশ নেন মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, কাজী শামসুজ্জামান, গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী ও সাদিয়া সুলতানা সম্পা।
২০০৫ সালে নেপালের মেরা শীর্ষ [২১,৮৩০ ফুট উঁচু] জয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন মুসা ইব্রাহীম ও সজল খালেদ [২]।
২০০৬ সালের ২২ মে দুপুর ৩:৩০ এ সিকিমের ফ্রে শীর্ষ [১৯,১২৫ ফুট উঁচু] জয় করার দাবি করেন মুসা ইব্রাহীম ও সজল খালেদ [২]।
২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির সদস্য মুসা ইব্রাহীম, সজল খালেদ, এম এ মুহিত ও নূর মোহাম্মদ চুলু ওয়েস্ট (২১,০৫৯ ফুট) পর্বত অভিযান করে ব্যর্থ হয়, কিন্তু সফলতার দাবি নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলায় [৩] অনেক সদস্য ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজ নিজ দল গঠন করেন। মুনতাসির মামুন ইমরান গড়েন 'কেওক্রাডং বাংলাদেশ', মীর শামছুল আলম বাবু গড়েন 'টিম এক্সট্রিম' আর মুসা ইব্রাহীম গড়েন 'নর্থ আলপাইন ক্লাব, বাংলাদেশ'।
নর্থ আলপাইন ক্লাবের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে, এরপর লাউয়াছড়ার বনজঙ্গলে সারভাইভাল প্রশিক্ষণ, সাইকেল ড়্যালি, সীতাকুণ্ড পাহাড়ে রক ক্লাইম্বিং ও ট্রেকিংয়ের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ এর ডিসেম্বর ১ এ নেপালের লাংসিসা রি (২১,০৮১ ফুট) শীর্ষ জয় করার দাবি করে [৪]। অভিযাত্রীরা ছিলেন মুসা ইব্রাহীম, মীর শামছুল আলম বাবু, তৌহিদ হোসেন, আফরিন খান ও রিমন খান।
নর্থ আলপাইন ক্লাবের মুসা ইব্রাহীম, তৌহিদ হোসেন ও নেপালী নাগরিক সারিন প্রকাশ প্রধান ২০০৯-এর মে মাসে অন্নপূর্ণা-৪ (২৪,৬৮২ ফুট) শীর্ষ জয় করার দাবি করেন [৫]।
একটি মিল খুব লক্ষণীয়, পর্বতারোহণ অভিযানে যাওয়ার আগে এবং অভিযানের পর দেশে ফিরে এসে ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেকবারই প্রেস কনফারেন্স করা হয়। সেখানে পর্বত শীর্ষজয়ের "দাবি" করা হয়। পত্রিকাতে যেসব ছবি এই দাবির সপক্ষে ছাপা হয়, সেগুলো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই একরকম, ওভারএক্সপোজড ব্যাকড্রপের সামনে পর্বতারোহী দাঁড়িয়ে বা বসে, তাঁর হাতে দেশের পতাকা, পরনে পর্বতারোহণের উপযোগী পোশাক, চোখে স্নো গগলস, মুখে হাসি। পর্বতশীর্ষে পর্বতারোহী দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর পেছনে সেই পর্বতমালার কোনো অংশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, এমন কোনো ছবি এসব সংবাদে আসেনি।
ঐ ছবিগুলো শীর্ষে তোলা, নাকি পাহাড়ের ঢালে যে কোনো এক জায়গায়, দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই।
আবহাওয়া, শারীরিক ক্লান্তি, ব্যাটারিক্ষয়, ইত্যাদি নানা কারণ দেখানো সম্ভব, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, মূল কারণটি অন্য জায়গায়। পর্বতারোহীরা জানেন, বাংলাদেশে পর্বতারোহণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে এমন লোকজন কম, অতএব তাঁরা যা বলে চালিয়ে দেবেন, সেটিই চলবে।
বক্তা আর অডিয়েন্সের যোগসূত্রটি নিয়ে পরের কোনো এক পর্বে আলোচনা করবো, তাই আপাতত এ প্রসঙ্গে এখানেই থামি।
মেরা পীক ছাড়া আর কখনও ব্যর্থতা স্বীকার করেননি মুসা ইব্রাহীম।
যখন যে অভিযানে গিয়েছেন, সেই শীর্ষটিই জয়ের পর বগলে করে নিয়ে এসেছেন। উপর্যুপরি। যদিও অডিয়েন্সের কাছে কোনো প্রমাণ আসেনি, এসেছে শুধু পত্রিকার সংবাদ, সেটিও প্রেস কনফারেন্সের। উপলব্ধি করলাম, আমরা অডিয়েন্স হিসেবে প্রমাণ চেয়েও অভ্যস্ত নই। আমরা পত্রিকায় একের পর এক পড়ে গিয়েছি।
কর্নেল জন হান্টের নেতৃত্বে যে অভিযানে হিলারি ও তেনজিং এভারেস্ট জয় করেছিলেন, সেটির পৃষ্ঠপোষক ছিলো রয়্যাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি, কর্নেল হান্ট কয়েক ফর্মার বিশাল এক রিপোর্ট তাদের কাছে জমা দিয়েছিলেন [৬]। বিভিন্ন স্পনসর আমাদের দেশে পর্বতারোহণের এসব অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, তাদের কাছে আমাদের পর্বতারোহীরা কোনো লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কি না, আমার জানা নেই [আদৌ এ চর্চা আছে কি না কে জানে], দিলেও সেটি আমার আওতার বাইরেই রয়ে গিয়েছে। তাই পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ ছাড়া এসব কথিত শীর্ষজয় অভিযানে কখন কী ঘটেছিলো, তা আমাদের জানার উপায় নেই।
মেরা শীর্ষ অভিযানের কোনো বর্ণনা নেটে নেই, ফ্রে পীকে যা আছে তা অপ্রতুল। মুসা ইব্রাহীম নিজে সজল খালেদ ও এম এ মুহিতের চুলু ওয়েস্ট জয়ের দাবিটি খণ্ডন করায় আমরা এ সম্পর্কে বিশদ জানতে পেরেছি, নইলে সেটিও হয়তো প্রেস কনফারেন্সে বিবৃতি আর কয়েকটি অস্পষ্ট ছবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো।
লাংসিসা রি নিয়েও কিছু বলা হয়নি পত্রিকায়। তবে অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষজয় নিয়ে মুসা খানিকটা বিশদে লিখেছেন। তাঁর নিজের কলম থেকে পাওয়া তথ্যের অসঙ্গতি ধরিয়ে দিয়েই আজ এ পর্ব শেষ করবো।
পর্বতারোহণ সম্পর্কে আমার ধারণা খুব বিশদ নয়। এ কারণে আমি অন্য পর্বতারোহীদের শরণাপন্ন হয়েছি।
ডেইলি স্টারে ১৮ জুন, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত মুসার নিবন্ধটিতেই যেমন বাংলাদেশের পর্বতারোহীদের মধ্যে পুরনোদের একজন, মুনতাসির মামুন, মন্তব্য করে মুসার নিবন্ধের কিছু তথ্যগত অসঙ্গতি ধরিয়ে দিয়েছেন, যা একজন সামিটিয়ারের লেখায় আসার কথা নয়। আর নিজে যা জানি না, তা জানার জন্যে গুগলের শরণাপন্ন হয়ে বোকা বনে গিয়েছি এই অসঙ্গতিগুলোর কথা উপলব্ধি করে। আসুন দেখি এক এক করে।
মুসার ভাষ্যের [৫] সাথে আরো কিছু সূত্র যোগ করে আমরা যা পাই,
অভিযাত্রী দলে ছিলেন মুসা ইব্রাহীম, তৌহিদ হোসেন ও সারিন প্রকাশ প্রধান [ইনি নেপালী হলেও নর্থ আলপাইন ক্লাবের সদস্য]। তাঁদের শেরপা সর্দার ছিলেন সোম বাহাদুর তামাং, কৈলাস তামাং [এরা দু'জন এভারেস্ট অভিযানেও মুসার সাথে ছিলেন] ও গণেশ মাগার।
হাই অলটিচ্যুড কুক ছিলেন তাসি তামাং আর কুলি সর্দার ছিলেন দাওয়া তামাং।
উল্লেখ্য, মুসা এখানে কৈলাস তামাংকে দুইবার এভারেস্ট বিজয়ী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কৈলাস তামাং নামে একজন নেপালের এভারেস্ট শীর্ষজয়ীদের সংগঠনে তালিকাভুক্ত আছেন বটে, তবে একবার, মে ১৫, ২০০৭ এ তিনি নর্থকোল-নর্থইস্টার্ন রিজ দিয়ে এভারেস্টে উঠেছিলেন। সূত্রটি আমি পরবর্তী পর্বে প্রকাশ করবো।
২০০৯ এর মে ২৯ এই অভিযাত্রী দলের সাপোর্ট টিমের ২২জন ভারবাহী ও তিন শেরপা অন্নপূর্ণা-৪ এর উদ্দেশ্যে কাঠমাণ্ডু থেকে যাত্রা শুরু করে।
অন্নপূর্ণা ম্যাসিফের বেশ কয়েকটি শীর্ষ রয়েছে, অন্নপূর্ণা-৪ এর উচ্চতা ৭.৫২৫ মিটার বা ২৪, ৬৮৮ ফিট। অন্নপূর্ণা-৪ বেইসক্যাম্পটি ১৫,০৯১ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত, তাঁরা জুনের ৩ তারিখেই সেখানে গিয়ে পৌঁছেন।
সাধারণত এই এক্সপিডিশনের বাণিজ্যিক অফারগুলোয় কাঠমাণ্ডু থেকে বেইস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছাতে ১০ দিন সময় রাখা হয়, যার মাঝে কাঠমাণ্ডু থেকে বেশিশহর বলে একটি জায়গায় গাড়ি দিয়ে যাওয়া হয়। মুসার বক্তব্য অনুযায়ী ৬ দিনের মাথায়ই কুলি ও শেরপা গাইড বেইস ক্যাম্পে পৌঁছে যান।
বেশ, মেনে নিলাম।
আলপাইন ক্লাবের তিন সদস্য বেইস ক্যাম্পে পৌঁছান জুনের ৮ তারিখে, কোনো শেরপা গাইড ছাড়াই। তাঁরা এই ট্রেইলে যাত্রা শুরু করেন জুনের ৪ তারিখে [৭], সিয়াংজে, জগত [১৩২৯ মিটার], তাল [১৭০২ মিটার], ধারাপানি [১৯৬৯ মিটার] ও দানেকিউ [২২০৮ মিটার] হয়ে তাঁরা চামে [২৬৯০ মিটার]-তে এসে পৌঁছান। তাঁরা বৃষ্টি এবং হিম বাতাসের ভেতর ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ভেতর দিয়ে এই ট্রেইলে হাঁটেন।
যেহেতু রিপোর্টটি জুনের ৯ তারিখে প্রকাশিত, কাজেই ধরে নেয়া যায়, মুসা চামে থেকে কমপক্ষে ৮ তারিখে ফোনে বা ইমেইলে পত্রিকার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। সিয়াংজে-জগত-তাল-ধারাপানি-দানেকিউ-চামে ট্রেইলটিতে জুন ৪ এ শুরু করলে জুন ৮ এর আগে হেঁটে পৌঁছানো সম্ভবও নয় [বাণিজ্যিক অফারে এই পথটুকু আট দিনে পার করা হয়]।
কেন সম্ভব নয়, তা ম্যাপে দেখুন।
ম্যাপ ১.
ম্যাপ ২.
ম্যাপে বামে নিচে সিয়াংজে, তাঁবুগুলো যথাক্রমে জগত-তাল-ধারাপানি-দানেকিউ-চামে, পর্বতারোহীর প্রতীকটি অন্নপূর্ণা-৪ এর চূড়া নির্দেশ করছে। স্থানগুলোর মধ্যে একমাত্র সিয়াংজে গুগল ম্যাপে খুঁজলে পাওয়া যায়, বাকি জায়গাগুলো অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ ধরে খুঁজে বের করতে হয়। সবক'টির জিপিএস ডেটা গুগল করে খুঁজে বের করে ম্যাপে যোগ করা হয়েছে [৮]। বামে নিচে স্কেল দেয়া আছে।
মুসা ইব্রাহীম লিখেছেন, নর্থ আলপাইন ক্লাবের তিন পর্বতারোহী জুনের ৮ তারিখে বেইস ক্যাম্পে পৌঁছান।
মুনতাসির মামুন ডেইলি স্টারের সংশ্লিষ্ট খবরটিতে অনলাইনে মন্তব্য করেছিলেন, কীভাবে এটি সম্ভব? চামে থেকে অন্নপূর্ণা-৪ বেইস ক্যাম্পে পৌঁছুতে হলে সাধারণত আরো তিনটি দিন লাগে। প্রশ্নটি আমারও। আমি খোঁজ করে দেখেছি, প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক অফারে চামে থেকে পিসাং, পিসাং থেকে হংদে, হংদে থেকে অন্নপূর্ণা-৪ এর বেইসক্যাম্প যেতে হয়। সময় লাগে তিনদিন।
নর্থ আলপাইন ক্লাবের পর্বতারোহীরা সিয়াংজে থেকে জুনের ৪ তারিখে শুরু করে অ্যা-কে-বা-রে অন্নপূর্ণা বেইস ক্যাম্প চলে গেলেন ৮ তারিখেই? কাজটা সম্ভব যদি হেলিকপ্টারে চড়ে তারা গিয়ে থাকেন, কিন্তু সেটি যে তারা করেননি, বরং সিয়াংজে-জগত-তাল-ধারাপানি-দানেকিউ-চামে হয়েই গিয়েছেন, সেটি তো মুসা নিজেই লিখেছেন। বেইস ক্যাম্পের উচ্চতা সাগরসমতল থেকে ১৫,০৯১ ফিট = ৪,৫৯৯ মিটার। ২,৬৯০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চামে থেকে ঝাড়া দুই হাজার মিটার উঠে গেলেন তাঁরা এক বেলার মধ্যে? অ্যাক্লিমাটাইজেশনের দরকার পড়লো না?
ভূতাত্ত্বিক সচল দ্রোহীকে অনুরোধ করেছিলাম অন্নপূর্ণা উপত্যকার একটি দ্বিমাত্রিক ও একটি ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে দিতে, নিজের বহু ব্যস্ততার মাঝে সময় করে তিনি মানচিত্র দু'টি রেণ্ডার করে দিয়েছেন।
ম্যাপ ৩.
ম্যাপ ৪.
মুসার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য কি?
এরই মধ্যে শেরপারা জুনের ৬ তারিখে ১৭,৭১৬ ফিট উচ্চতায় ক্যাম্প ১ এবং জুনের ৮ তারিখে ২১,৮১৭ ফিট উচ্চতায় ক্যাম্প ২ স্থাপন করে ফেলেন।
অন্নপূর্ণা-৪ এ আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকলে দিনে এক হাজার ফুট উচ্চতা পাড়ি দেন পর্বতারোহীরা [৯]।
আর পোর্টার-শেরপারা দুইদিনের ভেতরে চার হাজার একশো এক ফিট উঠে গেলেন?
আচ্ছা, মেনে নিলাম।
জুনের ৯ তারিখ অভিযাত্রীরা বিশ্রাম নেন।
অর্থাৎ, জুনের ১০ তারিখ তাঁরা আবার শুরু করেন।
জুনের ১১ তারিখ অভিযাত্রীরা ক্যাম্প ১ এ পৌঁছান।
আমার ছোট্ট প্রশ্ন, জুনের ১০ তারিখ রাতটা তাঁরা কোথায় কাটিয়েছিলেন? নাকি জুনের ১১ তারিখেই তাঁরা বেইসক্যাম্প থেকে ২,৬২৫ ফুট খাড়াই পাড়ি দিয়ে ক্যাম্প ১ এ পৌঁছান?
অভিযাত্রীরা তার পরদিনই ক্যাম্প ২-এ পৌঁছান
অর্থাৎ, যে শেরপারা এই ৪,১০১ ফিট খাড়াই পাড়ি দিয়েছিলেন দুইদিনে, আমাদের অভিযাত্রীদলের মুসা ইব্রাহীম, সারিন প্রকাশ প্রধান আর তৌহিদ হোসেন তা অতিক্রম করেন এক দিনেই।
অ্যাক্লিমাটাইজেশনের ধারও ধারেন না তাঁরা। কীসের ভয় সাহসী মন লাল ফৌজের, লাফিয়ে হই পার।
জুনের ১৪ তারিখ রাত ২:৩০ মিনিটে শুরু হয় তাঁদের অন্নপূর্ণা-৬ সামিট পুশ। পথে ৬ ফুট প্রশস্ত একটি গিরিফাটল পড়ে, শেরপারা একটি নতুন রুট খুঁজে বের করেন, অভিযাত্রীরা ঘন্টা দুই সেই ৬০ ডিগ্রি কোণে খাড়া পাহাড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। বেলা ১১:৫৪ তে তাঁরা অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষে পা রাখেন ও বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান।
এখানে স্পষ্ট নয়, ২১,৮১৭ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত ক্যাম্প-২ থেকেই তাঁরা সামিট পুশ শুরু করেন কি না। আর কোনো ক্যাম্পের বর্ণনা যেহেতু মুসারা দেননি, তাই আমরা ধরে নিতে পারি তাঁরা ১৩ জুন বিশ্রাম নিয়েছেন, ১৪ জুন ৭ ঘন্টা ২৪ মিনিটের মাথায় ২,৮৭১ ফিট উচ্চতা অতিক্রম করেছেন, মুসার ভাষায়, braving snowfall with strong wind ।
মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষজয় এতো সহজ কি না। যে ভিডিওটির লিঙ্ক দিয়েছি [৯], সেখান থেকে স্পষ্ট যে ভিডিওর অভিজ্ঞ মার্কিন পর্বতারোহীরা দিনে সাত-আটশো ফুটের বেশি পার হননি, থেমে থেমে শক্তি সঞ্চয় করে, বিশ্রাম নিয়ে এগিয়েছেন। বাণিজ্যিক অফারগুলোতে অন্নপূর্ণা-৪ চড়ে নেমে আসার জন্যে সময় রাখা হয় আঠারো দিন।
আরো খোঁজ করে জানতে পেরেছি এক সুইস-অস্ট্রিয়ান অভিযাত্রী দলের কথা, যারা বেইস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরুর পনেরো দিন পর অন্নপূর্ণা-৪ এর ৪০০ মিটার নিচ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন [১০]। এখানে অনেক ছবি আছে, আপনারা তাদের অভিযানকালীন আবহাওয়া সম্পর্কেও ধারণা পাবেন।
জুন মাসে হিমালয়ে প্রগাঢ় মনসুন ঝাপটা মারে। বৃষ্টি আর তুষারপাত এ সময় প্রবল। মুসাদের অভিযান হয়েছে এই তুষারপাত ঠেলে।
মুসা যে গতির কথা দাবি করছেন, তুষারপাতের সময় কি পর্বতারোহণে সে গতি অর্জন করা আদৌ সম্ভব? অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষে একটি অভিযানের ভিডিওচিত্র দেখুন। এখানে অভিযাত্রীদের আরোহণের গতিটি দেখুন।
২১,০৮১ ফিট উচ্চতায় অক্সিজেনের পরিমাণ সাগরসমতলে অক্সিজেনের পরিমাণের ৪৫% [উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতাসের চাপ হ্রাস পায়, ফলে বাতাসের ঘনত্ব কমে যায়, সেই সাথে কমে যায় অক্সিজেনের ঘনত্বও ]। অক্সিজেনের পরিমাণ কিছুটা আপেক্ষিক, এটি নির্ণয় করার জন্যে যে উচ্চতায় মানুষ অভ্যস্ত, সেটি প্রয়োজন হয়। অক্সিজেনের পরিমাণ হিসাব করার জন্যে একটি ক্যালকুলেটর [১১] এবং আবহাওয়ার তথ্য [১২] দিলাম, আপনারা নিজেরাও হিসাব করে দেখতে পারেন।
মুসারা জানিয়েছেন, তাঁরা অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহার করেননি[৫]। ভিডিওতে দেখবেন, অভিযাত্রীরা কুড়ি হাজার ফিট পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়া উঠেই হাঁপিয়ে গিয়েছেন।
এর আগে লাংসিসা রি অভিযানে, মাত্র ৭ মাস আগে, ২১,০৮১ ফিট উঁচু লাংসিসা রি শীর্ষে পৌঁছতে মুসা ও তাঁর দলের লেগেছিলো ২৪ দিন[৪]। লাংসিসা রি আরোহণ খুব দুঃসাধ্যও নয়। আর মাত্র ৭ মাস পর তাঁরা এমন দুর্দান্ত গতিবেগ অর্জন করলেন যে ট্রেইলে পা রাখার ১১ দিনের মাথায় ২৪,৬৮৮ ফিট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-৪ এ পৌঁছে গেলেন? বেইসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরুর পঞ্চম দিনের মাথায়? অক্সিজেন ছাড়াই? আবার অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষ থেকে নেমে তিনদিনের মাথায় চামে পৌঁছে জুনের সতেরো তারিখের মধ্যে রিপোর্ট পাঠালেন ডেইলি স্টারে, যে কারণে এটি আঠারো তারিখে ছাপা হওয়া সম্ভব হলো [৫]?
যুক্তি আসতে পারেনোট ১., এ কি একেবারেই অসম্ভব? এটি PROBABLE না হোক, POSSIBLE তো হতে পারে? মুসা ইব্রাহীম কিন্তু নিজেই বর্ণনা করেছেন [১৪], কোন অলটিচ্যুড তার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে।
মুসা বলেছেন [১৪],
উদ্ধৃতি
“The climb was along the Rongbuk glaciers,” remembers Ibrahim. At 6,450 meters, Ibrahim's headache got worse. Out of the six nights that the team was there at the advanced base camp, the first few nights were the most excruciating. “I could not sleep,” he says. “My headache was getting worse, I did not have the urge to eat and my body was getting weaker. I was getting anxious since I would not be able to climb with so little strength. I had to stay strong and focused.” A shift of focus or the slightest slip could easily result in death, while climbing the Everest, says Ibrahim.
স্মর্তব্য, ৬,৪৫০ মিটার = ২১,১৬১ ফিট।
আমরা আরো জানতে পারি [১৪],
উদ্ধৃতি
While he was moving towards the North Col, his Sherpas were busy setting up camp 1 at North Col, situated at 7,100 metres. ... Ibrahim was not very happy with his performance so far. “I felt that I was getting slower and everyone else was moving faster than I was. I was also losing a lot of energy, which was not safe for climbing further.” The Sherpas shared his feelings and asked him to move back to the base camp. “I was disappointed, but the Sherpas were right,” says Ibrahim. “I made my way towards the base camp for some more rest, nutrition and of course, oxygen.”
আবারও স্মর্তব্য, ৭,১০০ মিটার = ২৩,২৯৪ ফিট। এভারেস্টে ওঠার সময় যিনি ২১,১৬১ ফুট গিয়ে শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন, ২৩,২৯৪ ফিটে না পৌঁছেই যিনি উপলব্ধি করেন, তিনি প্রচুর শক্তিক্ষয় করছেন এবং আর এগোনো নিরাপদ হচ্ছে না, এবং বিশ্রাম, পুষ্টি আর অক্সিজেনের জন্যে যিনি ফিরে আসছেন বেইস ক্যাম্পে, তিনিই অন্নপূর্ণায় গিয়ে উচ্চতার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর পরোয়া না করে দিনে তিন হাজার ফিট করে উচ্চতা পাড়ি দিলেন এক একবারে?
.
.
.
দুঃখিত, বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এবার আসি ছবির প্রশ্নে। পত্রিকায় কী ধরনের ছবি পর্বতশীর্ষে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে ছাপা হয়, তার দু'টি উদাহরণ দিচ্ছি।
ছবি ১ [৫].
এই ছবিতে যে জিনিসটি অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে, সেটি একটি লাল তীরচিহ্ন দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি।
এ কথা পরিষ্কার যে ছবিটি তোলা হয়েছে একটি পাহাড়ের ঢালে, বরফের ওপরে। এই ঢালটি ২৪,৬৮৮ ফিটের ধারেকাছে না হয়ে ষোল হাজার বা সতেরো হাজার ফিটের ওপরেও হতে পারে। পর্বতশীর্ষজয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যাকগ্রাউণ্ডে অন্যান্য ভৌগোলিক ফিচারগুলোকে রাখা জরুরি।
ছবি ২ [১৩].
একই কথা খাটে এই ছবিটির ক্ষেত্রেও।
বরফের ওপর ঘোলা ব্যাকড্রপের সামনে দাঁড়িয়ে মুসা ইব্রাহীম [বামে] আর তৌহিদ হোসেন। আমরা ঠিক কী দেখে বুঝবো যে এটি একটি পর্বতশীর্ষের ওপর তোলা ছবি? অন্নপূর্ণায় আঠারো হাজার ফিটের পর থেকে সমস্তটাই বরফ, তার কোথায় দাঁড়িয়ে এ ছবি তোলা, তা কী করে বোঝা যাবে? এই ছবিটি কি প্রমাণ হিসেবেই দর্শকের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে না? এই "প্রমাণ" কি যথেষ্ট?
যথেষ্ট নয়।
যারা প্রবল সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, তাঁরা হয়তো আমার দেয়া লিঙ্কের ক্লার্ক-বাটসনদের ভিডিওর মতো ভিডিও আশা করবেন নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের অন্নপূর্ণা-৪ অভিযাত্রী দল, ২০০৯ এর কাছ থেকে। আনিসুল হক ও মুসা ইব্রাহীম এক কথোপকথনে জানিয়েছেন, অন্নপূর্ণা অভিযানের সময় নাকি স্টিল ক্যামেরা আর ভিডিও ক্যামেরা, দু'টোরই ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়। য়্যাকদম জায়গামতো আর সময়মতো।
সখেদে তখন স্মরণ করতে হয় ২২জন পোর্টারের কথা। ওনারা কি আরো কয়েকটা লিথিয়াম ব্যাটারির ভারবহনে অরাজি হতেন?.
নোট ১. মন্তব্যে উঠে আসা যুক্তি-প্রতিযুক্তি থেকে পরবর্তীতে সংযোজিত।
তথ্যসূত্রঃ
[১] বাংলাদেশের এভারেস্ট যাত্রা : যেভাবে শুরু, মীর শামছুল আলম বাবু, কালের কণ্ঠ, ৩০ মে, ২০১০
[২] First Bangladeshi mountaineers on Frey peak, They do us proud: City Correspondent, ডেইলি স্টার, জুন ২৮, ২০০৬।
[৩] নর্থ আলপাইন ক্লাবের পত্রিকা অভিযাত্রীতে মুসা ইব্রাহীম চুল্লু ওয়েস্ট নিয়ে "বিএমটিসি চুলু ওয়েস্ট জয় করেনি" শীর্ষক একটি নিবন্ধ লেখেন, যা মুনতাসীর মামুন তার ব্লগে তুলে রাখেন।
[৪] Langsisa Ri conquerors now eye Annapurna IV peak: Staff Correspondent, ডেইলি স্টার, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০০৯
[৫] Bangladeshis conquer Mt Annapurna IV: Musa Ibrahim, from Chame, Nepal, ডেইলি স্টার, জুন ১৮, ২০০৯
[৬] কর্নেল হান্টের রিপোর্ট [কেউ অনুবাদ করতে চাইলে স্বাগতম]
[৭] Trekking through Annapurna Himalayan range, Bangladeshi mountaineers on way to Annapurna IV peak: Musa Ibrahim, from Chame (2670m), Nepal, ডেইলি স্টার, জুন ৯, ২০০৯
[৮] জিপিএস ডেটা, নেপাল
[৯] অন্নপূর্ণা-৪ শীর্ষে অভিযাত্রী একটি দলের ভিডিওলগ।
এঁরা শেষ পর্যন্ত খারাপ আবহাওয়া দেখে ফিরে আসেন। মুসার মত এঁরাও পথে একটি গিরিফাটল দেখেছিলেন, সেখান থেকেই পরদিন ফিরে আসেন তাঁরা।
[১০] পাঁচ সুইস ও এক অস্ট্রিয়ানের অন্নপূর্ণা অভিযানের কাহিনী
[১১] বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ [সাগরসমতলের তুলনায়] নির্ণায়ক
[১২] বিভিন্ন উচ্চতার বিপরীতে বাতাসের চাপের তথ্য
[১৩] অন্নপূর্ণার স্মৃতি - তৌহিদ হোসেন, প্রথম আলো, মে ২৮, ২০১০
[১৪] The Everest Chronicles: Elita Karim, ডেইলি স্টার, জুন ১৮, ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।