বিশ্বের চিরকালের দ্রুততম মনুষ্য হওয়ার বিপদ হল, মানুষটিকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়ে যায়৷ একটা মানুষ ১০০ মিটার ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ডে দৌড়য় কী করে, সেটা জানার আগ্রহ তো শুধু অ্যাথলিট কিংবা ফ্যানদেরই নয়৷
ইউসেইন বোল্টের স্প্রিন্ট একটা দেখার মতো ব্যাপার৷ এক মিটার ৯৫ সেন্টিমিটার লম্বা হওয়ার দরুন বোল্টের দৌড়শৈলিটা অন্যান্য দৌড়বীরদের চেয়ে কিছুটা আলাদা৷ তার স্টার্টটা খুব বিস্ফোরক নয়, কেননা দৈর্ঘ্যের কারণে বোল্টের ওজনও বেশি৷ ঐ পরিমাণ ‘মাস'-কে শূন্য থেকে দৌড়ের গতিতে আনতে সময় লাগবে বৈকি৷
এছাড়া বোল্ট তার নিজের দৌড়ের নকশাটা চেনেন – সে জন্য সূচনায় কিংবা শেষে তার বেশি তাড়াহুড়ো করার দরকার পড়ে না৷ শূন্য দশমিক ১৮০ সেকেন্ডের স্টার্টকে বাকি ১০০ মিটার দৌড়বীরদের তুলনায় প্রায় ‘ধীরেসুস্থে' বলা চলে৷ কাজেই দৌড় শুরু হবার পর প্রথমে অপর কোনো স্প্রিন্টারই সামনে থাকে – যদিও বেশিক্ষণের জন্য নয়৷
MOSCOW, RUSSIA - AUGUST 11: Usain Bolt of Jamaica celebrates winning gold in the Men's 100 metres Final during Day Two of the 14th IAAF World Athletics Championships Moscow 2013 at Luzhniki Stadium on August 11, 2013 in Moscow, Russia. (Photo by Paul Gilham/Getty Images) ইউসেইন বোল্ট
বোল্ট তার লম্বা লম্বা পা ফেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই লিড নিয়ে নেন৷ পায়ের তলা থেকে কোমর অবধি বোল্টের পায়ের দৈর্ঘ্য হল এক মিটার দশ সেন্টিমিটার৷ দৌড়ের সময় পা ফেলেন প্রতি বারে দু'মিটার ৯৫ সেন্টিমিটার৷ তার গড় পদক্ষেপই হল দুই মিটার ৪৩ সেন্টিমিটার৷ জার্মানির ‘ডি প্রেসে' পত্রিকায় ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বোল্টের ১০০ মিটার দৌড়তে ৪১ বার পা ফেলতে হয়, অন্যদের ৪৩ বার পা ফেলা লাগে৷ কাজেই বোল্ট তো জিতবেনই!
পদার্থবিদ ও নিউরোফিজিসিস্টরা বোল্টের দৌড় নিয়ে চর্চা করেছেন৷ কেউ আবিষ্কার করেছেন, বোল্টের পরিবার আফ্রিকা থেকে আসার কারণে তার নাভি ইউরোপীয়দের থেকে তিন সেন্টিমিটার বেশি উঁচুতে৷ এর ফলে বোল্টের শরীরের ‘মাধ্যাকর্ষণ বিন্দু'-ও অনেক উঁচুতে – যা তার বিশেষ দৌড়শৈলির আরেকটি কারণ৷ সব মিলিয়ে দশ থেকে বিশ পা যাবার পরই বোল্ট তার সর্বোচ্চ গতি – ঘণ্টায় প্রায় ৪৩ কিলোমিটার! – অর্জন করেন৷
বোল্ট ২০০৯ সালের যে দৌড়ে ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ডের বিশ্বরেকর্ড করেন, বার্লিনের সেই স্প্রিন্ট নিয়ে পদার্থবিদরা গবেষণা করেছেন৷ এমনকি তাদের সে বিশ্লেষণের ফলাফল ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স'এ ছাপা হয়েছে – এ বছরই৷ জার্মানির স্যুডডয়েচে সাইটুং পত্রিকা বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্তের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করে৷
আধুনিক যুগ, আধুনিক প্রযুক্তি৷ বোল্টের দৌড়ের প্রতি সেকেন্ডের দশমাংশ লেজার দিয়ে মাপা হয়েছিল৷ তা থেকে বিজ্ঞানীরা ফিনিশিং লাইন পার হওয়ার সময় বোল্টের গতি নির্ধারণ করতে পেরেছেন: সেকেন্ডে ১২ দশমিক ২ মিটার বা ঘণ্টায় ৪৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার৷ দৌড়ে বোল্টের শরীরের প্রয়োজন পড়ে ৮১৫ দশমিক ৮ নিউটন শক্তি - যা কিনা ৮৩ দশমিক ২ কিলোগ্রাম ওজন তোলার সমান৷ সবচেয়ে বেশি শক্তি – এক হাজার নিউটন – লাগে স্টার্টের সময়৷ দৌড়ের সময় চূড়ান্ত শক্তি হল ২,৬২০ ওয়াট কিংবা ৩ দশমিক ৫১ অশ্বশক্তি৷
অর্থাৎ সাড়ে তিনখানা ঘোড়ার শক্তি নিয়ে দৌড়ান ইউসেইন বোল্ট৷
সূত্র: http://www.dw.de/
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।