আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৭ দিনে বুয়েটে তিন শতাধিক আবেদন

সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরাজ করছে ভবনে ‘ফাটল-আতঙ্ক’। ভবন পরীক্ষার জন্য মাত্র ১৭ দিনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তিন শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব আবেদন করা হয়েছে।
গত ২৪ এপ্রিল নয়তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে নিহত হন এক হাজার ১২৭ জন শ্রমিক।

ফাটল-আতঙ্কে রাজধানী এবং এর বাইরে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ও পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণাও করা হয়েছে। কিছু ভবনের ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়ায় মালিকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসলে রানা প্লাজা একটি প্রতীকী শিক্ষা। এর মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি, তদারকি, দক্ষতার অভাবসহ বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করা যায়। শিক্ষা নিয়ে সমস্যার সমাধানে এগোতে হবে।

যে আতঙ্ক ও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে দেশে, সদিচ্ছা ও সুনীতির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই তা সমাধান করতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের অঞ্চলগুলোকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
ভবন পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে হয় বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশনের (বিআরটিসি) পরিচালকের কাছে। ব্যুরোর পরিচালক শেখ সিকান্দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, আগে ভবন পরীক্ষার জন্য আবেদন আসত না বললেই চলে। আবেদন পাওয়ার পর তা পরীক্ষার জন্য বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগে পাঠানো হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ভবন পরীক্ষার জন্য ৩০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ বুয়েটে সরাসরি ১৬২টি আবেদন জমা পড়ে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মাধ্যমে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ৬০টি ভবনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছে। আর রাজউক ২৪০টি ভবন পরিদর্শন শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বুয়েটের কাছে আবেদন করেছে ৬৪টি। সব মিলিয়ে ১৩ মে পর্যন্ত বুয়েটে আবেদনের সংখ্যা ২৮৬।
গতকাল বৃহস্পতিবার বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবেদনের সংখ্যা এখন তিন শতাধিক।

এতই আবেদন পড়েছে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমাদের জনবলের তুলনায় তা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। একটি ভবন সম্পূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অন্তত দুই মাস করে সময় প্রয়োজন। ’
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট গতকাল পর্যন্ত অন্তত ১০০টি ভবন পরিদর্শন করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে রয়েছে ভবনের বাড়তি তলা নির্মাণ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, অবকাঠামো দুর্বলতা ইত্যাদি। তবে এসব ভবন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, যে ভবনগুলো পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছে, তার অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা। এ ছাড়া ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন রয়েছে। ভবনে ফাটল দেখলেই অযথা আতঙ্কিত না হয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা।

তাঁরা বলছেন, ভবনের কলামের ফাটল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তারপর ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে বিম ও স্ল্যাবের ফাটল। যদি দেয়ালে ফাটল দেখা যায়, তাহলে তা তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবেদনের পর বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল গিয়ে ভবন পরীক্ষা করলেই সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। ওই সময় শুধু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা তথা ভবনের কোথাও কোনো ফাটল আছে কি না, ভবনের নকশা ও মাটির অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন (সয়েল রিপোর্ট) আছে কি না প্রভৃতি যাচাই করে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে প্রাথমিক নির্দেশনার পাশাপাশি ভবনের প্রকৌশলগত ও অবকাঠামোগত পরীক্ষা করার কথাও বলা হয়। সব পরীক্ষার পর দেখতে হয়, ভবনটি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্মিত কি না।
আতঙ্ক: ২৯ এপ্রিল রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ১৩ তলা ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার পর স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। অনুমতির বাইরে ভবন নির্মাণ করায় রাজউক ভবনমালিক সোহেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
২৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের বছিলা রোডে ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় আজ শুক্রবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

কাফরুলের ইব্রাহিমপুর এলাকার মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। পরে কর্তৃপক্ষ পাশের আরেকটি ভবনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফাটল দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ সুপার মার্কেটের ভবনে থাকা পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনিয়মের অভিযোগে রাজউক মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে।
২ মে গাইবান্ধার আহম্মদ উদ্দিন শাহ শিশুনিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার পর তা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।


ফাটল দেখা দেওয়ায় নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার রসিদপুর বহুমুখী স্কুলের ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ নাগবাড়ী এলাকায় হাকিম মার্কেট, চাষাঢ়ার জামতলার একটি পোশাক কারখানা ও সিদ্ধিরগঞ্জে পিপিলন নিটওয়্যার নামের আরেকটি পোশাক কারখানার ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার পর তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিদ্দিক খান সুপার মার্কেটে ফাটল দেখা দেওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গাজীপুরের টঙ্গীতে বিসিকের জেলা কার্যালয়ের ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ৩ মে সাভার ও আশুলিয়ার ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাকে সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিল্প পুলিশ।


[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন গাইবান্ধা, গুরুদাসপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও টঙ্গী প্রতিনিধি]।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।