একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার অন্যতম সাক্ষী ‘নিখোঁজ’ সুখরঞ্জন বালি ভারতের একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। বিবিসি বাংলা গতকাল বৃহস্পতিবারএক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সুখরঞ্জনকে রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে।
বাংলাদেশি সুখরঞ্জন গত ৫ নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে ‘নিখোঁজ’ হন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সুখরঞ্জন নামের এক ব্যক্তি কলকাতার দমদম কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
বাংলাদেশের ‘নিখোঁজ’ সুখরঞ্জন ও কলকাতার দমদম কারাগারের সুখরঞ্জন একই ব্যক্তি বলে ভারতের কারা কর্তৃপক্ষ, আদালতের নথিপত্র এবং আরও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। এর আগে ঢাকার ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ এজ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুখরঞ্জন ভারতে বন্দী রয়েছেন।
সুখরঞ্জন শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী থাকলেও পরে তিনি পক্ষ পরিবর্তন করে সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী হতে রাজি হন বলে দাবি করেন সাঈদীর আইনজীবীরা। সুখরঞ্জন নিখোঁজ হওয়ার পর সাঈদীর আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন তাঁকে অপহরণ করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার স্বরূপনগর এলাকা থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর এক বাংলাদেশিকে আটক করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বসিরহাট আদালতের নথি ঘেঁটে সেখানকার আইনজীবী মোশারফ হোসেন জানান, ওই ব্যক্তির নাম সুখরঞ্জন বালা, বাবার নাম: প্রয়াত ললিত রঞ্জন বালা, গ্রাম: পাড়ারহাটি, থানা: গঙ্গারামপুর, জেলা: পিরোজপুর, বাংলাদেশ। আইনজীবীর ধারণা, বিএসএফের সদস্যদের বেশির ভাগই হিন্দিভাষী হওয়ায় আটকের পর নাম রেকর্ডের সময় হয়তো সুখরঞ্জন বালির নাম ‘সুখরঞ্জন বালা’ লেখা হয়েছে। আদালতের নথি থেকে জানা যায়, বিএসএফ ওই ব্যক্তিকে স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয় ২৫ ডিসেম্বর।
পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়। বসিরহাটের আদালত সুখরঞ্জনকে ১১০ দিনের কারাদণ্ড দেন। দণ্ডের মেয়াদ শেষ হলেও তাঁকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতি: এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, আদালতের ফটক থেকে একজন সাক্ষীকে অপহরণের মতো ঘটনা সাংঘাতিক উদ্বেগের বিষয়। এ ঘটনায় নানা প্রশ্নের সঙ্গে এ প্রশ্নও ওঠে যে, কে বা কারা সুখরঞ্জনকে অপহরণের নির্দেশ দেয় এবং এ ঘটনার সঙ্গে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ভারতীয় কার্যালয় সুখরঞ্জনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ভারতের উচিত হবে না। তিনি ভারতের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন। সুখরঞ্জন আশ্রয় প্রার্থনা না করলে কিংবা তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর না হলেও ভারতের উচিত হবে না সুখরঞ্জনকে বাংলাদেশে পাঠানো। কারণ, বাংলাদেশে গেলে তাঁর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।