আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেম পতঙ্গ ও ঘৃণার গল্প (২য় কিস্তি)

শেষ বলে কিছু নেই

তবে য্যুনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে একবার মরেছিল পতঙ্গ। সহপাঠিনী কাজলকে দেখে একটু কাঁপলাম; কাঁপতে কাঁপতে ভাবলাম; ভাবতে ভাবতে কাগজ-কলম; জন্ম হল কবিতার; জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় ছাপা হল সে কবিতা। কাজল দেখে বলল, চমৎকার। ছুটল কলম। কাজলকে মেঘ-চাঁদ-তারা-ত্রিকাল ঘুরিয়ে নিয়ে এলাম নিজস্ব নির্জনতায়, তবে কবিতার শব্দে আর মেটাফোরে।

আর শেক্সপিয়রের কথামত তাকে মুক্ত করে দিলাম। নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ফ্রিজের সব্জির গায়ে যেমন দানা বাঁধে বরফকুচি- তেমনি দানা বাঁধল বিশ্বাস: সে ফিরে আসবে আমার একান্ত নারী bf হয়ে। অথচ, হা ঈশ্বর! একদিন দেখি অন্য একজন কাজলকে বগলদাবা করে চীৎকার করছে আমার আমার। অন্য একজনটা কে? আমার মতই একজন পুরুষ, যে ধনুক ভেঙেছে। আমি কী ছাই জানতাম, নারীকে নিজের করে পেতে হলে ধনুকভাঙা পণ করতে হয়? আমি তো তাকিয়ে ছিলাম শেক্সপিয়রের দিকে।

অথচ আমার কত কত বন্ধু গিটার বাজিয়ে ভ্যা ভ্যা করে ব্যান্ডের গান শুনিয়ে, ফুল দিয়ে, পিস্তলের অসীম ক্ষমতার গল্প শুনিয়ে প্রেম করে ফেলল... অথচ আমার হচ্ছে না; কেন হচ্ছে না? জানি না। তবে শোন বাবা শেক্সপিয়র, তোমাকে আর বিশ্বাস করছি নে। কিন্তু আমি পতঙ্গ বিশ্বাস করি। যেদিন আমি কাজলের অন্য আকাশে উড়ালের খবরটা শুনলাম, সেদিন আমার পায়ের নিচে পড়ে একটা তেলাপোকা পিষে গিয়েছিল। পায়ের তলায় পতঙ্গের দাগ নিয়ে সেই ধূসর দিনে আমি গিয়েছিলাম পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে গঞ্জিকার আসরে।

তারপর এক বছর ভোম-শংকর জীবন; দেবে গেল চোয়াল, মাথার অর্ধেক চুল উবে গেল ধোঁয়ামাখা অন্ধকারে... ### সকালে ঘুম ভেঙে চোখ মেলে দেখি, জানালার ফাঁক গলে এক টুকরো রোদ্দুর সাদা দেয়ালে একটা উপবৃত্ত তৈরি করেছে; আর উপবৃত্তের ঠিক মাঝখানেএকটি পতঙ্গ; একটি বহুরঙা প্রজাপতি। ডানার রংগুলোকে আলাদা করার চেষ্টা করে অবশেষে হাল ছেড়ে দিলাম। একটি রং অন্যটির সাথে কোন সীমান্ত রচনা না কvvরে পরস্পরের সাথে মিশে গেছে। দুর্বোধ্য প্রজাপতিকে পড়তে পড়তে আমার অনেকটা মসৃণ সময় কেটে গেল মশারীর ভেতর। গ্রীষ্মের সকাল।

বনবন করে ঘুরছে ফ্যান; বিমোহিত আমি একটি জীবন্ত চিত্রকল্পের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রজাপতি হঠাৎ উড়ল; নাচতে নাচতে চলে এল ফ্যানের নিচে; উপরে ওঠার চেষ্টা করছে নিম্নমুখী বায়ুর স্রোত ঠেলে... আমার স্নায়ুতন্ত্র বিপদ-সংকেত পেয়ে আমাকে ঘা মেরে বসিয়ে দিল বিছানায়। পতঙ্গটাকে বাঁচাতে হবে অপঘাতে মৃত্যু থেকে; মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা? সে চিন্তা পরে, হাত খুঁজছে ফ্যানের সুইচ। পতঙ্গের নিয়তির সাথে আমার নিয়তি বাঁধা। আমার অবচেতন মন বুঝে গেছে, ওর কিছু হলে আমার চরম কোন সর্বনাশ ঘটে যাবে।

সুইচ অফ। কিন্তু, গতিজড়তা...হায়রে নিয়তি...প্রজাপতি প্রথম ধাক্কায় গিয়ে পড়ল উপবৃত্তাকার রৌদ্র-খণ্ডের ভেতর; সেখান থেকে গড়াতে গড়াতে মেঝেতে। লাশ, প্রজাপতির লাশ। আমার অন্তর্গত অন্ধকারে কে যেন শিস দিয়ে যায়। সেবার এই মেসরুমে একটা গুবরে-পোকা মরে গেল; অফিসে গিয়ে শুনি আমাদের কোম্পানির একটা পণ্য বোঝাই জাহাজ ইন্ডিয়ান ওসেনে তলিয়ে গেছে।

ব্যস, ২ মাস বেতন বন্ধ। আজ আবার অফিসে বড় রকমের কোন গোলমাল নয় তো? নাশতা টাশতা না করেই বেরিয়ে পড়লাম- সোজা দিলখুশা- দিলে আমার খুশবুশ করছে অশুভ খুশবু। অফিসের প্রতিটি সেকশনে গিয়ে খবর করলাম; সব ঠিকঠাক। তবে কি লীলামনির কিছু হল? অফিসের প্রতিটি ফ্লোর চষে ফেলেও কম্পিউটার এনালিস্ট লীলামনিকে পাওয়া গেল না। লীলামনি অফিসেই আসে নি।

ঘড়িতে ১১ টা। লীলামনির বাসার উদ্দেশে রিক্সায় চাপলাম। মনে মনে বললাম, লীলামনি লীলামনি, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপন গড! আপনারা বিশ্বাস করুন, আমি এই ত্রিশোর্ধ কম্পিউটার এনালিস্টকে ভালোবসি। আর ভালবেসে মুক্ত করে দিই নি তাকে; জোরসে টেনে রেখেছি সুতো শক্ত মুঠির মধ্যে।

কবিতা নয়, গোলাপ দিচ্ছি তাকে; অফিস ব্রেকে হেঁড়ে গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতও শোনাচ্ছি। লাঞ্চ-আওয়ারে অফিস ক্যান্টিনে বসে আমরা চিটির পিটির আলাপ করি; নদীর তৃতীয় পর্যায়ের গতির মত প্রেমের সমভূমিতে মৃদুমন্দ বয়ে যায়; বিয়ের প্রস্তাব দিলে অবশ্য লীলামনি হেসে গড়িয়ে পড়ে, বলে, মাথা খারাপ! আর ক’দিনই বা বাঁচব? আমি বাপু কাউকে ঠকাতে পারব না... চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.