শেষ বলে কিছু নেই
তুমি যদি কিছুকে ভালোবাস, তবে তাকে মুক্ত করে দাও; যদি তা তোমার কাছে আসে তবে তা তোমার আর যদি না আসে তবে তা কোনদিন তোমার ছিল না। কথাটি শেক্সপিয়রের।
কথাটিতে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বিশ্বাস করেছি এবং ঠকেছি। কৈশোরে ঠকেছি। যৌবনে ঠকেছি।
আহ্ কবিরা যাকে বলে সোনালি যৗবন- বালিশের তলায় লুকানো স্বামী-স্ত্রীর মিলনকথা- নারীর ৬৪ কলার পাঠ নিতে নিতে- একলা বন্ধ রুমে যৌবনের সাথে খুনসুঁটি করতে করতে অবাক বিস্ময়ে দেখেছি সোনালি যৌবনের মহাপ্রপাত। ...এক একটা ধোঁয়াটে শ্বেতাভ স্খলনের মত এক একটা ঠকে যাওয়া। কী এক অলৌকিক সুখের মত, মরে যাওয়ার মত। এভাবে মরে যেতে যেতে আমি পথ হেঁটেছি; হাঁটতে হাঁটতে দেখেছি মেঘের কোণা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে দুধের মত মসৃণ চন্দ্রাংশ। প্রথমে অবোধ বালকের মত অগাধ বিস্ময়, পরে যৌবনের বেয়োনেট খোঁচা; মনে মনে নিপুন সন্ত্রাসী।
ইচ্ছে হয় মেঘগুলোকে হ্যাচকা টানে ছিড়ে ফেলে ছড়িয়ে দেই সূর্যের উপর; বাষ্পীভূত হয়ে যাক পোশাকি আড়াল। কিন্তু তার আগেই টেবিলে দুঃসংবাদ। বিবাহের ইনভাইটেশন কার্ড, সাথে রাবার আটকানো একগুচ্ছো শুকনো ফুলের মত আমারই লেখা কবিতা, যা আমি তাকে উপহার দিয়েছি দীর্ঘ দেড় বছর ধরে। আরে বাবা, আমার শরীর খেয়ে, ব্রেন খেয়ে যে কবিতার জন্ম, সে কি নিবারণ করতে পারে আমার ছ্যাঁকার উত্তাপ? পূরণ করতে পারে মহাশূন্যের মত বে-বহা শূন্যতা? যে কবিতা তুমি ধারণ করতে পারো নি তারে আমি কি করে ধারণ করি। মুখ থেকে ছুড়ে দেওয়া থুতুতে আমার আর কোন অধিকার থাকে না।
একগাদা কবিতার চিতা সাজালাম সেদিন; জ্বলে গেল আমার কবিতা। একটা অদ্ভূত যোগাযোগও আবিষ্কার করলাম সেদিন। সকালে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে তিথি- যাকে আমি আমার হৃদপিণ্ডের বাম-অলিন্দে ঢুকিয়ে রেখেছিলাম- তার তরঙ্গ-কম্পনের সাথে সিঙ্ক্রোনাইজ করছিরাম আমার আসন্ন কবিতার শরীর; মাথার উপর ঘড়ঘড় করে ঘুরে যাচ্ছে ফ্যান। একটা প্রজাপতি উড়ে এল হঠাৎ এবং আমার কবিতার চিত্রকল্প হয়ে ওঠার আগেই ঘুরন্ত ফ্যানের সাথে বাড়ি খেয়ে সুতো ছেড়া ঘুড়ির মত গোত্তা খেতে খেতে পড়ল মেঝেতে; লাশ, প্রজাপতির লাশ। আমার কবিতায় তিথি এলোচুলে বসে রইল প্রজাপতির লাশের পাশে।
এবং ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ঐদিন দুপুরে রিসিভ করলাম সেই ইনভাইটেশন কার্ড। তখন আমার ইন্টারমিডিয়েট।
কিন্তু ঠকে যাওয়ার ঘটনা ওটাই আমার প্রথম নয়। আগেও আছে। কেন মাধুরীদিকে মনে নেই?
তখন কবিতা লিখতে শিখি নি; মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ ছিনতাই এর নেশা মাথা মাথাচাড়া দেয় নি; ভাল লাগে সূর্য, চাঁদও ভাল লাগে- আরো ভাল লাগে চাঁদের সাথে সমান্তরালে হেঁটে যেতে।
তখন কৈশোর না! মাধুরীদি তখন অষ্টাদশী- দূরন্ত বেনী আর দোলে না; ধুমকেতুর মত ভ্র“র নিচে কী বিশাল দুটি আয়ত চোখ ধীরে ধীরে প্রশান্ত মহাসাগরের স্নিগ্ধতা পাচ্ছে। আমি শহরে গিয়ে সুচিত্রা সেনের সিনেমা দেখে এসেছি। মাধুরীদি সুচিত্রার ছায়া-সংস্করণ। কী যে ভাল লাগে। তার হাতের বরইয়ের আচার খেতে গিয়ে হাতে হাতে ছোঁয়াছুঁয়ি- একেবারে মরমে মরে যাওয়া।
প্রজাপতি-ফড়িঙের পেছনে ছুটতে ছুটতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ভাবতে বসি, বড় হয়ে মাধুরীদিকে বিয়ে করব। শ্লা! রামছাগল হয়ে জন্মালে ভাল করতাম। মাধুরীদি কি ঊর্বশীর মত অনন্ত-যৌবনা? তার শরীরে-মনে প্রবহমান লজ্জাধারার সমান্তরালে পুঁইলতার লকলকে উন্মুখতা...কানে দূরাগত ট্রেনের শব্দ...অচিনপুরের রাজপুত্তুর এসে নিয়ে যাবে তাকে।
এবং নিয়ে গেল।
চোখের জলে ভিজে গেল বালিশ; হ্যাফপ্যান্টের নিচে ঘুমিয়ে পড়ল প্রেমের আনাড়ি পতঙ্গ।
ঐদিন অবশ্য চোখের সামনে কোন পতঙ্গ মারা পড়েছিল কি না মনে নেই, মারা পড়লেও অদ্ভূত যোগাযোগটা তখনও আবিষ্কার করতে পারি নি...
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।