আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাসুদখোর মহাপুরুষ -- পারভেজ মোহিতের প্রশ্ন --- আমার মন্তব্য

যে কোন লড়াই শেষ পর্যন্ত লড়তে পছন্দ করি।

মহাসুদখোর "মহাপুরুষ" -- পারভেজ মোহিতের প্রশ্ন --- আমার মন্তব্য দেশে এবং প্রবাসে হাজার হাজার মানুষ আছেন যারা বাংলাদেশের এক মহা সুদখোর "মহাপুরুষ"-কে দেশ ও জাতির গৌরব হিসেবে মনে করেন এবং প্রচার করতে ভালবাসেন। ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রো ক্রেডিটের বুজরুকি নিয়ে কতনা মহাত্ব্য প্রচার! তবে বেশীর ভাগ মানুষ এটা, আমার মতে, না বুঝেই করেন। তারা ভুলে যান, স্বাধীনতার সময় আমাদের দেশে ভূমিহীন ছিল সাত কোটি ত্রিশ লক্ষের ৩৭% (এ্যাবসলিউট টার্মে ২,৭০,১০,০০০), ২০০০ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েঁছিল চৌদ্দ কোটির ৫৯% (৮,২৬,০০,০০০), বিশ্ব ব্যাংকের কোন কোন হিসেবে তখন ভূমিহীনতা ৬৪% দেখানো হয়েছিল। উন্নয়ন কার্যক্রম এবং ক্ষুদ্র ঋণের যদি এতই সাফল্য, তাহলে দেশে ২৯ বছরে ভূমিহীনের যে সংখ্যা যে পাঁচ কোটি পঞ্চান্ন লাখ নব্বই হাজার (৫,৫৫,৯০,০০০) বেড়েগেল, সেটা কি ভাবে? ক্ষুদ্র ঋণের ফেরীওয়ালারা এর কি জবাব দেবেন? ঢাকা শহরের বর্তমার লোকসংখ্যা এক কোটি বিশ লক্ষ।

এর ৪৫% বস্তিবাসী, অর্থাৎ চুয়ান্ন লক্ষ(৫৪,০০,০০০)। এরা এল কোথা থেকে? শুধুই নদী ভাঙ্গন? বহু "দাতা" ভূয়া গবেষণার মাধ্যমে তা প্রমাণের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ এই দারিদ্র্যকরণ (Pauperization - ধনী গরীবের ব্যবধান বৃদ্ধি) প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। ঢাকা শহরে বহুতল ভবন বৃদ্ধির তুলনায় বস্তিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। ক্ষুদ্র ঋণের ফেরীওয়ালাদের কাছে এর ভিন্ন কোন জবাব আছে কি? আসলে আমাদের দেশে গৌরব করার মত জিনিসগুলি আমাদের কেউ দেখিয়ে দেন না, হাতে তুলে দেন না।

ফলে গৌরব করার মত বিষয় বা জিনিস গুলি সম্পর্কে আমরা যথার্থ ও যথেষ্ট সচেতন নই। কিন্তু পশ্চিমারা তাদের স্বার্থে বা তাদের প্রয়োজনে হঠাৎ করেই আমাদের হাতে কোন "গৌরবের ঝান্ডা" তুলে দেয়। আমরা ঠিক না বুঝেই সেই ঝান্ডা হাতে নিয়ে উল্লসিত হয়ে পড়ি। যে আমেরিকার "কনজিউমার ক্রেডিট"-কে অনুসনরণ করে আমাদের মাইক্রো ক্রেডিট, সেই আমেরিকার অবস্থা ইতিমধ্যে আমরা কি দেখিনি? তো এই যে, হাজার হাজার মানুষ যারা এক মহা সুদখোর "মহাপুরুষ"-কে দেশ ও জাতির গৌরব হিসেবে মনে করেন তাদের একজন (যিনি ব্যাক্তি হিসেবে চমৎকার) প্রবাসী, যার জন্ম চিত্রা, নবগঙ্গা, কপোতাক্ষ, মুক্তেশ্বরী, ভৈরব, মধুমতি বিধৌত বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলে, তাকে ভুল ও ভ্রান্তিবিলাসের প্রতীক হিসেবে নিয়ে আমি ফেস বুকে কয়েকাট ষ্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, তার মত অরও অনেকের এই ভ্রান্তিবিলাস কাটানোর প্রচেষ্টা হিসেবে, কারণ আমার মনে হয়েছে তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে লাভ নেই এবং ব্যাক্তিগত ভাবে কাউকে কিছু বলে লাভ নেই। ষ্ট্যাটাস: ১ প্রতিজ্ঞা করেছি, তাকে আর কিছু বলবো না।

তার জন্য শুধু দুঃখ হয়, নিষেধ অমান্য করে যে বিপথে পা বাড়ায়! ষ্ট্যাটাস: ২ যে সুন্দর তাকে অসুন্দর বলি কি করে? তfর জন্য শুধু দুঃখ হয়, পিতার চোখের পানি পায়ে মাড়িয়ে যে কিশোরী নষ্টের হাত ধরে বিপথে পা বাড়ায়, তার মত যখন ভ্রান্তিকে সত্য ভেবে বুকে জড়ায়, নিও লিবারাল পণ্যের হাটে নিজের অজান্তে বিক্রি হয়ে যায়, হীরক রাজার দেশে সিনেমার মত “বাকী রাখা খাজনা, মোটে ভাল কাজনা” বলতে গাইতে ক্লান্ত হয়ে যায়, তার জন্য শুধু দুঃখই হয়!! ষ্ট্যাটাস: ৩ প্রতিজ্ঞা করেছি তাকে আর কিছু বলবো না। মহাজন কে মহাপুরুষ ভেবে পদধুলি নিক, কদমবুচি করুক! হাজার সংসারের সুখ কেড়ে নেয়া মহাজন আরো সুখী হোক, আর সে পূঁজার নৈবেদ্য সাজিয়ে মন্ত্র জপ করুক তার ভুল ঈশ্বরের, আমি তাকে কিছুই বলবো না। ষ্ট্যাটাস: ৪ যুদ্ধক্ষেত্রে সহযোদ্ধার গুলিবিদ্ধ লাশ পিছনে ফেলে শত্রুর পিছু ধাওয়া করতে সামনে এগিয়ে যাওয়াকে কি ত্মসমর্পন বলে? আমি কোন অভিধানে এই রকম দেখিনি। এই যুদ্ধ ঝঞ্ঝার মধ্যেও সহযোদ্ধার যে লাশটি পিছনে ফেলে এলাম, তার জন্য শুধু দুঃখ হয়! ষ্ট্যাটাস: ৫ প্রতিজ্ঞা করেছি তাকে আর কিছু বলবো না! তার সমস্ত বুদ্ধি আর মেধা যদি সারা জীবন অন্ধ হয়ে থাকে, থাক, সে অন্ধত্ব ঘুচাতে যাব না। মঙ্গল কামনায় যদি তার কিছু উপকার হয়, সে টুকু করতে পারি, তার বেশী নয়! ষ্ট্যাটাস: ৬ ঘোড়ার ছানাটি বিক্রি হয়েগিয়েছিল।

এখন আর আমার আস্তবলে থাকে না। তাতেও উদ্বিগ্ন হই না। কিন্তু প্রতিদিন তাকে ঘাস ভর্তি মাঠে চরতে না দেখলে, লেজ উচিয়ে ছুট দিতে না দেখলে বিমর্ষ হই। কোন দিন তাকে মঠে না দেখলে মনটা আই ঢাই করতে থাকে। তার দুলকি চালে চলাটা খুব উপভোগ করি।

অথচ, কি আশ্চর্য, সে আর এখন আমার আস্তাবলের ঘোড়া নেই! ষ্ট্যাটাস: ৭ তাকে আর কিছু বলবো না। ব্রিটিশ ভারত আর পাকিস্তানে মেহনতি মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার, চিত্রা, নবগঙ্গা, মধুমতি বিধৌত প্রান্তরে প্রস্ফূটিত ফুল, তিল গুজী রাই সরিষা খেসাড়ী, ছোলা কালাই মটর মুগ মশুড়ী, সব তেমনি আছে, সুলতানের তুলির টান, শাহ লতিফের বাউল গান, যশ হরণের ললাট চিহ্ন, খেজুরের গুড়, নলীন সন্দেশ, সব আজও তেমনি সগৌরবে উপষ্থিত আছে, শুধু ঘোড়ার ছানাটি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সে আর এখন আমাদের অস্তাবলে নেই। ষ্ট্যাটাস: ৮ (এই নোট লেখার আগে শেস ষ্ট্যাটাস) সবুজের প্রতি যার এত ভালবাসা, এত টান, নিজে সবুজ হয়ে যার মিশে যেতে ইচ্ছে করে সবুজের সাথে সবুজ মাঠে, সবুজ প্রান্তরে, প্রকৃতির আঁচল বিছানো সবুজ মখমলে, প্রকৃতি ও নারীর অপূর্ব সমাহারে, কি বলবো আমি তাকে- যদি সে নির্বুদ্ধিতার খাঁচায় নিজেকে বন্দী রাখে? আমার স্ট্যাটাসে পারভেজ মোহিতের প্রশ্ন ছিল: এই সেই কি আপনার সেই কিশোরী? যে আপনার বারন শোনে নি..... আমার মন্তব্য: পারভেজ মোহিত, আপনাকে আমি যথেষ্ট প্রাজ্ঞজন বলে মনে করি। একটু চিন্তা করলে বুঝবেন, আমার বারণ বলতে, বিবেকের নিষেধ।

আর এই নিষেধ যে শোনে নি সে তো কিশোরী নয়! রূপক অর্থে ঘোড়ার ছানা বলা হলেও, তা কার্যতঃ ব্যক্তি হিসেবে তার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য এবং তার কাছ থেকে সমাজের প্রত্যাশা প্রকাশের জন্য। ব্যাক্তি হিসেবে প্রকৃত পক্ষে তিনি কিশোরী নন । তবে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা বিকাশের স্তর বিন্যাসে মনস্তাত্বিক অবস্থা বিচারে তাকে কিশোরী বলা যেতে পারে, যেমন আমরা অনেক সময় রূপক অর্থে রাতের একটি বিশেষ ক্ষণ, মুহূর্ত ও অবস্থাকে "কিশোরী রাত" বলে থাকি। তবে ভ্রন্তি ও ভুলকে "সঠিক" বুঝে বিপথে যাওয়া কিশোরীর সাথে আমি তাকে তুলনা করেছি। বলেছি, "পিতার চোখের পানি পায়ে মাড়িয়ে, যে কিশোরী নষ্টের হাত ধরে, বিপথে পা বাড়ায় তার মত, যখন ভ্রান্তিকে সত্য ভেবে বুকে জড়ায়"।

তার অর্থ তিনি নিজেই কিশোরী নন। যিনি "নিও লিবারাল পণ্যের হাটে, নিজের অজান্তে বিক্রি হয়ে যান, হীরক রাজার দেশে সিনেমার মত, “বাকী রাখা খাজনা, মোটে ভাল কাজ না” বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে" যান তিনি তো কিশোরী নন! বরং তাকে ম্যাচিউরড এবং ধীশক্তি সম্পন্ন স্বত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আমার আক্ষেপ প্রকাশ করেছি, "সমস্ত বুদ্ধি আর মেধা যদি সারা জীবন অন্ধ হয়ে থাকে, থাক সে অন্ধত্ব ঘুচাতে যাব না"। একটি কমেন্টে আমার আশাবাদও দেখতে পাবেন--- এ তার ভ্রম মায়ার ইন্দ্রজাল ফিরবে সে একদিন চিনবে নিজের অস্তাবল! একজন প্রতিকী ব্যাক্তি, যিনি একজন মহা সুদখোরকে "মহাপুরুষ" বানাতে চেষ্টা করছেন ভ্রান্তিবশতঃ, তাকে কিশোরীর অবস্থানে দেখতে চেষ্টা করছেন কেন? ভাই চিন্তা ভাবনা এবং অন্তর্দৃষ্টি আর একটু সম্প্রসারিত করুন না! এটা কোন কিশোরী কাহিনী নয়। প্লীজ এটাকে কিশোরী কাহিনী বানাতে চেষ্টা না করলে ভাল হয়। পাদটীকাঃ (প্রত্যেককে পৃথক পৃথক কমেন্ট না দিয়ে এই পাদটীকাটি যোগ করাই শ্রেয় মনে করলাম)।

হায় এমনি অন্ধ আমরা। হাজার হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ অর্জনের ব্যবসা গ্রামীন ফোন বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে জাতির কত বড় ক্ষতি করলো সেটা কেউ দেখলো না। আমাদের জাতীয় পতাকার লাল সবুজ এবং মেধার প্রতীক মানুষের মাথাসমৃদ্ধ যে লোগো তা বাদ দিয়ে নরওয়ের টেলিফোন কোম্পাণী টেলিনর - এর হাইড্রার ছবি গ্রামীন ফোনে লাগিয়ে দিয়ে অতি নীচু স্তরের দালালী আর চাটুকারীতার পুরস্কার হিসেবে তাদের নোবেল (খোদ ইউরোপে এই পুরস্কার "লেভেল" পুরস্কার খেতাব পেয়েছে) পুরস্কার পেয়েছেন। এসবও বাংলাদেশের সরল প্রাণ মানুষেরা দেখতে পায় না। ".....রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি"।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।