আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোমেনার বিয়ে

রোমেনার বিয়ে। শুনে মুন্সিপাড়ার লোকেরা হতভম্ব। তারা বলে, কালিয়া বেইন্নার মাইয়ারে বিয়া দি ফ্যালাদ্দে চও! রোমেনার হয়তো ঠিক আগের দিন সকালেই জন্ম হয়নি। সে আইএ পড়ে এবং সামনের বছর পরীক্ষা দিলে তার বিএ পড়ার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। আর আইএ, বিএ কিছু না পড়লেও তার বিয়ে কোথাও ঠেকে থাকার মতো ব্যাপার নয়।

যারা তার বিয়ের কথা শুনে অবাক হয়, মাত্র কদিন আগে সেই তারাই মন্তব্য করেছিল, এরিম্মা আগুন’র ডইল্লা মাইয়ারে বিয়া গরিবার লাই পক্কল জান দি ফ্যালাইব! তাদের সেই যুবকদের কথা মনে পড়ে যারা রোমেনাকে বিয়ে না করতে চেয়েও প্রায় মরতে বসেছিল। একজন গেটে দাঁড়ানো রোমেনাকে অপলক দেখতে গিয়ে তার হোন্ডা না ইয়ামাহা নিয়ে সরাসরি নালায়। এক শিশি-বোতলঅলা কলেজফেরত রিকশা থেকে নামা রোমেনাকে স্থির দৃষ্টিতে গাঁথতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে তার শিশি-বোতলের সম্ভার ভেঙে একশেষ। এক রংমিস্ত্রি কলেজগামী রোমেনাকে একদৃষ্টিতে দেখতে গিয়ে শেষে মই থেকে পিছলে পড়ে কোমর ভেঙে শয্যাশায়ী। রোমেনার বিয়েকে কেন্দ্র করে মুন্সিপাড়ার লোকেরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

এক পক্ষের ধারণা, রোমেনার বাবা চাইলে আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে পারত। মেয়ের বিয়ের জন্য তার কাঠের ব্যবসায় একটুও ক্ষতি হচ্ছিল না। সে কেন অন্তত মেয়েটার আইএ পর্যন্ত অপেক্ষা করে না, তা নিয়ে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। অন্য পক্ষের ধারণা, হয়তো রোমেনার বিয়ের ঘটনাটির জন্য সে নিজেই দায়ী। ম্যাট্রিক পাস করতে না-করতেই এবং আইএর দ্বিতীয় বর্ষে উঠতে না-উঠতেই তিনজন যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্কের গল্প ছড়িয়ে পড়ে নানা দিকে।

তারা একে একে আসে এবং চলে যায়; কিন্তু রোমেনার জীবনীর উপাদান হিসেবে তারা থেকেই যায়। পাড়ার লোকেরা অবশ্য যুবকদের সঙ্গে রোমেনার সম্পর্কবিপর্যয়ের জন্য যুবকদেরই দায়ী করে। কারও কারও ধারণা, এ ক্ষেত্রে পাড়ার লোকেরা খানিকটা পক্ষপাতদুষ্ট হয়েই রোমেনার পক্ষ নেয়। তারা অন্য পাড়ার যুবকদের নীতিগতভাবেই সমর্থন জোগায় না। কারণ, রোমেনা তাদের পাড়ারই কন্যা।

এ রকম সম্পর্কবিপর্যয়ের ঘটনা-পরম্পরায় তারা রোমেনার জন্য একটুও উদ্বিগ্ন হয় না—হয় যুবকদের জন্য। একে একে যুবকেরা এভাবে রোমেনাশূন্য হয়ে পড়লে তাদের মধ্যে নেমে আসবে প্রবল হতাশা এবং তখন তারা বেপথু হয়ে তাদের নিজ নিজ জীবনের ঠিকানাই হারিয়ে ফেলবে। তখন তারা রোমেনা বা তার পরিবারের কারও নয়, বস্তুত দেশ ও জাতির সমূহ বোঝায় পরিণত হবে। ফলে রোমেনার বিবাহ-সংস্থিতি তাদের জন্য অসংখ্য যুবকের রক্ষাকবচ হয়ে দেখা দেয়। তবে তারা খানিকটা করুণার বশেই ভাবে যে রোমেনার বাবা চাইলে সম্পর্কবিপর্যয়ের শিকার সেই তিনজন যুবকের মধ্য থেকে একজনকে কি রোমেনার বর হিসেবে পছন্দ করতে পারত না? শুনে অন্য পক্ষ বলে, প’অল নি কনো! ওরা তো চ্যাংড়া ছেলে, বিয়েরই কী বোঝে, আর সংসারেরই বা কী বোঝে, বেকার যুবকেরা প্রেমিক হিসেবে যত ভালোই হোক না কেন, স্বামী হিসেবে ঠিক ততটাই অযোগ্য।

বিয়ে করে তারা খাওয়াবে কী রোমেনাকে!।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.