আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্যবন্টনের রাত বা বাজেট রজনী

হট নিউজ

ভাগ্যবন্টনের রজনীতে খুলে যাক সবার ভাগ্যের দুয়ার। দূরিভূত হোক হিংসা বিদ্বেষ। যে হিংসার আগুনে দাউ দাউ করে পুড়ছে আমাদের জীবন বিশেষত জাতীয় জীবনে রাষ্ট্রীয় শক্তি। দেশে আজ হত্যা গুম রাহাজানি টেন্ডারবাজি সহ সকল প্রকার অপকর্মের লাইসেন্স যেন সরকার দলীয় কর্মীদের অপেন দেওয়া হচ্ছে। এসব দমনে সরকার মুখে বুলি উড়ায় কিন্তু বাস্তবে বিরোধীদলের উপর চড়াও হয়ে আক্রমন চালাচ্ছে।

এই আক্রমনে মানবাধিকার হতবাক হয়ে যাচ্ছে। সরকার যেন আইনে উর্ধ্বে। সরকার যা করে কোর্টও অনেক সময় তা করতে বাধ্য। যা সাধারন জনগনকেও সংকিত করেছে। এমন দূর্দিনে আমরা শবে বারাত পালন করছি, আল্লাহ যেন এই সংকট থেকে আমাদের উত্তরনের সুযোগ দেন।

শবে বারাতকে অনুধাবন করার তৌফিক দেন। এর কল্যান যেন মুসলিম উম্মাহ লাভ করতে পারে। ১৪ শাবান দিবাগত রাতকে শবে বারাআত বলা হয়। শব ফারসি শব্দ, অর্থ রাত। এক আরবীতে লাইল বা লাইলাতুল বলা হয়।

বারাআত অর্থ অব্যাহতি। তাই লাইলাতুল বারাআত অর্থ দাঁড়ায় অব্যাহতি তথা মুক্তির রাত। মানুষ জীবনের চলার পথে বিভিন্ন লোভ-প্রলোভন ও ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়ে যে সব অপরাধে লিপ্ত হয় ভবিষ্যতে একই অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত হবে না এরূপ দৃঢ় সংকল্প সহকারে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি যেকোন সময় বান্দার অপরাধ মার্জনা করতে পারেন। এছাড়া সারা বছরের বিভিন্ন সময়-ক্ষণের মধ্যে এমন কিছু মুহূর্ত রয়েছে যেগুলোতে তিনি বান্দার কাতর ফরিয়াদ মিশ্রিত দোয়া অধিক শুনে থাকেন। তন্মধ্যে পবিত্র রমযান মাসের মহান সংযম প্রশিক্ষণের পূর্ব প্রস্তুতির মাস শাবান মাস একটি।

হাদীস শরীফে এ মাসের যথেষ্ট গুরুত্ব ও মাহাত্ম বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে যে-- ‘‘আমি রাসূলুল্লাহকে রমযান মাস ছাড়া শাবান মাসের মতো অন্য কোন মাসে এত অধিক রোযা রাখতে দেখিনি। তিনি দু'একদিন ছাড়া কোন সময় শাবানের পুরো মাসই রোযা রাখতেন। তবে মহানবী নিজে তা করলেও উম্মতকে এ মাসের প্রতিদিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। মহানবী পবিত্র রমযানের আগের দু'মাসে অধিক পরিমাণে এ দোয়া করতেন যে-- ‘‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজব ও শাবান ও বাল্লিগনা রামাযান’’; অর্থাৎ- ‘‘হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং (এমতবস্থায়) রমযান-এ নিয়ে পৌঁছান।

’’ শাবান মাসের এ গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করলে ১৪ শাবান দিবাগত রাতের গুরুত্বও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ‘আইয়ামে বীয' তথা প্রতি মাসের ১৩ ও ১৫ তারিখ দিবাগত রাতের মর্যাদা এমনিতেও স্বীকৃত। তার ওপর শাবানের মাস হওয়াতে সে গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। এছাড়া মহানবী (সাঃ) এ রাতে নির্জনভাবে গুণাহমা'ফির জন্যও আল্লাহর কাছে অধিক কান্নাকাটি করেছেন বলে হাদীসে উল্লেখ পাওয়া যায়। সুতরাং, এসব গুরুত্বের প্রেক্ষিতে এ রাতকেও শবে বারাআত বা মুক্তির রাত বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

তবে তাই বলে কুরআনে বর্ণিত ‘লাইলাতুল কদর' বা শবে কদরের মতো শবে বারাআতে গুরুত্ব দেয়ার দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ কুরআন-হাদীসে অনুপস্থিত। শবে বারাআত মুসলমানদের মনে ইবাদত ও নেক কাজের স্পৃহাকে জাগিয়ে তোলে। এ উপলক্ষে সমবেত মুসলমানদের মনের বিশেষ ভাবগত ধর্মীয় অন্যান্য বিষয়াদি পালনের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিরাট সহায়ক হয়। বিশেষ করে জুমার দিনের তুলনায় শবে বারাআতে মুসল্লীদের উপস্থিতির সংখ্যা অধিক থাকে বিধায়, সকলে সামনে রমযানের সিয়াম সাধনা সংক্রান্ত মাছলা-মাছায়েল সিয়ামের উদ্দেশ্য লক্ষ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে তাদের অবহিত করার বিরাট সুযোগ ঘটে। এমনকি অনেকে সাধারণভাবে মসজিদে বড় একটা না গেলেও যেহেতু ঐ রাতে মসজিদে যায়, তখন বিজ্ঞ আলেম-ইমামদের ওয়াজ-নসীহতের দ্বারা এ শ্রেণীর লোকের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে কোন বিভ্রান্তি থাকলেও তা দূরীভূত হয়ে যায়।

অতঃপর দেখা গেছে, ঐ ব্যক্তিই ওয়াজের তাসীরে নিয়মিত নামাযী হয়ে যায়। এজন্য শবে বারাআতের শরয়ী গুরুত্বের প্রশ্ন তুলে দ্বীনের যথার্থ শিক্ষা আদর্শকে কুরআন হাদীসের আলোকে তুলে ধরার এ সুযোগকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা কিছুতেই সঙ্গত নয়। বিশেষ করে পাশ্চাত্য বস্তুবাদী শিক্ষা, জীবনবোধের প্রভাবে বর্তমান ধর্মবিমুখিনতা এমনকি ধর্মদ্রোহিতার এ যুগেও আমাদের দেশের মুসলমানদের অন্তরে এ রাতটি যে মর্যাদার আসন করে নিয়েছে তা দ্বীনি চিন্তা-কর্মের উন্নতি বিকাশ ও প্রচারের এক বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। এদিক থেকেও এ দৃষ্টিভঙ্গীতে আহত করা অনুচিত। ইমাম গাযালীর দর্শন অনুযায়ী নেক ভাববর্ধক কাজও নেকের কাজ।

বিশেষ করে যেখানে এই দৃষ্টিভঙ্গীতে মুহাদ্দিসীনে কেরাম ফযীলতের হাদীস বর্ণনায় যেখানে মৌলিক কোনকিছুর সাথে সাংঘর্ষিক না হলে সনদে তার চুলচেরা বাছ-বিচারে শিথিলতার অবকাশ রেখেছেন, সেখানে বিষয়টিকে প্রান্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা মানুষের কাছে ইসলামী শিক্ষা-আদর্শ উপস্থাপনের একটি মাধ্যমকে নিষ্ক্রীয় করার নামান্তর হবে। শবে বারাআত তথা শাবান মাসের মধ্যরজনী কুরআন তিলাওয়াত নফল নামায ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-আযকার করা, মুর্দাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, কবর যিয়ারত করা সকলের বাঞ্ছনীয়। এ রাতে আল্লাহর বরবারে নিজের পূর্ববর্তী সিয়াম সাধানার জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ একান্ত জরুরি। তবে এ রাতের নফল ইবাদত-গুজারি যাতে ফজরের ফরয নামাজ হারাবার নিমিত্ত হয়ে না দাঁড়ায়, তাহলে সবই বরবাদ। সেজন্য ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

শবে বারাআত উপলক্ষে বাজি পুড়ানো, মাযারে গিয়ে কবর সিজদা করা, কবরে বাতি দেয়া ইত্যাদি বিদায়াত-শিরকী কাজ যাতে না হয়, সেদিকে মসজিদের ইমাম সাহেবগণ ও এলাকার মুরুববী শ্রেণীর লোকদের বিশেষ লক্ষ্যদান কর্তব্য। অন্যথায় কল্যাণের বদলে তা অকল্যাণই বয়ে আনবে। খানাপিনার আয়োজন ও ব্যস্ততা অনেক সময় শবে বারাআতের ও শবের কদরের ইবাদত নষ্ট করে। খানাপিনার প্রতি সকলের মনোযোগ আকৃষ্ট করে শয়তান ঐ রাতের ফজিলত থেকে মানুষকে বঞ্চিত রাখে। সেদিকেও সকলের লক্ষ্য রাখা কর্তব্য।

এ উপলক্ষে সম্মিলিতভাবে খাবারের আয়োজন করতে চাইলে, ঐ দিনটির আগের বা পরের দিন তা করা গেলে উভয় দিকই রক্ষা পেতে পারে। পবিত্র রমযানের পূর্ব প্রস্তুতির এই মাস এই রাত আমরা যেন আল-কুরআন ও সুন্নাতে রাসূলের অনুসরণে নিজেদের যথার্থ আত্মশুদ্ধিতে এগিয়ে যেতে পারি, আল্লাহ আমাদের তওফীক দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.