আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ুন আজাদ: আমাদের আগামী গড়ার গান# মোমিন মেহেদী



হুমায়ুন আজাদ: আমাদের আগামী গড়ার গান মোমিন মেহেদী আদিকবি ব্যাস-বাল্মীকি, হোমার থেকে শুরু করে আজকের একজন কবির পরিচিতি শুধু কবিতার বৃত্তে বৃত্তাবদ্ধ নয়। তার আসল পরিচয়টা শিল্পী সত্তার উৎকর্ষতার পাশাপাশি সত্যের সাহসী অবস্থানে পাওয়া যায়। স্বাধীনতা-স্বাধীকারের সাথেসাথে স্থানকালের উত্তরণেও কবির অবদান অনন্য। ব্যাস-বাল্মীকি, হোমার, শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভিঞ্চি, পিকাসো, ভ্যান গঁগকে আমাদের সাহসী হবার চেতনা। সেই চেতনার আরেক আগুন তিনি।

মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেও শিখিয়ে গেছেন, বাঁচতে হলে বীরের মত; মরলেও ঠিক বীরের মত মরতে হবে। শুধুমাত্র শিল্পকর্মের ঐশ্বর্যে আর পরিবার পরিজনের আনন্দে আনন্দিত হলেই হবে না। দেশ, মানুষ আর আগামী গড়ার কথাও ভাবতে হবে। চিরন্তন এই সত্য কথার উচ্চারক আমাদের অনন্য সাহস মানুষ হুমায়ুন আজাদ। একদিকে লিখেছেন, অন্যদিকে প্রতিবাদ করেছেন।

প্রতিবাদে প্রতিবাদে কেটেছে তার জীবনের পুরোটা সময়। সমসাময়িক অন্য সবার চয়ে ছিলেন অধিক সাহসী। যে পারে সে সব পারে। তিনিও পারতেন। লিখতেন, পড়তেন, গাইতেন আবার আন্দোলনে রাজপথে থাকতেন।

হয়তো একারনেই বড় অসময়ে চলে যেতে হলো । একজন কবি ও শিল্পীকে স্থান ও কালের সীমা কখনো আটকিয়ে রাখতে পারে না। কবির মরদেহকে তড়িঘড়ি করে সমাধিস্থ করে নাম কুড়োবার কাঙালিপনার এদেশে হুমায়ুন আজাদ এসেছিলেন ভুল করে। যদি তাই না হবে, তাহলে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো কেন তাকে? প্রনিয়ত প্রশ্নের জাল বুনি আর উচ্চারন করি- লকলকে চাবুকের আক্রোশে আর অজগরের মতো অন্ধ শেকলের মুখোমুখি আমরা তুলে ধরি আমাদের উদ্ধত দর্পিত সৌন্দর্য আদিম ঝর্নার মতো অজস্র ধারায় ফিনকি দেয়া টকটকে লাল রক্ত আর আকাশের দিকে হাতুড়ির মতো মুষ্টি। (বাঙলা ভাষা; তপন বাগচী সম্পাদিত একুশের নতুন কবিতা) যে দেশে কবির মৃত্যু হয় রাজপ্থে।

সে দেশে আর যাই হোক গুনিজনের কদর নেই। শোকে, দুঃখে ও অপমানে একবার এথেন্সবাসীরা মহান নাট্যকার অ্যাউরিপিদেস এর সম্মানার্থে এথেন্সের রাজকীয় চৌরাস্তায় একটি নান্দনিক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। এই স্মৃতিস্তম্ভ চারিদিকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছিল এথেন্সসহ সমগ্র গ্রিকে এবং গ্রিকের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অ্যাউরিপিকদেসের উজ্জ্বল অবস্থানের কথা। ম্যাসিডনের মাটিতে অ্যাউরিপিদেস নেই। কবরের মধ্যে পড়ে আছে শুধু ক’খানা অস্থি, যেগুলো ক’দিন পরেই ক্ষয় হয়ে মাটিতে মিশে যাবে।

কিন্তু ইতিহাস কথা বলবে বর্তমানের মত ভবিষ্যতেও। সুতরাং সহজেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীর সম্মান আমাদের দেশে সত্যিকার্থেই দেয়া হয় না। বরং এ দেশে দেশবিরোধী জামাত-শিবির-জঙ্গীচক্র সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মী সেজে এসে সাহিত্যিকদেও উপর হামলা করছে। সুযোগ পেলে হত্যার মত জঘন্য কাজটিও করছে এরা। এইসব হামলাকারীকে সহায়তা করছে দৈনিক সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত, দিগন্ত টিভিসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত জঙ্গী ইন্ধনদাতা, কথিত সাহিত্য প্রেমিরা।

যাদের মুল লক্ষ্য অরাজকতা। মহাকবি গ্যায়টে তাঁর বন্ধু এমারসনকে একটি চিঠিতে (৩১.০১.১৮৩১ খ্রি.) জানান, বিশ্বের নাগরিক হবার ও বিশ্ব সাহিত্যের যুগ এসে গেছে। এ যুগকে দ্রুত এগিয়ে আনবার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই চেষ্টা করা উচিত। একই উচ্চারণ উত্থাপিত হতে পারে। বোদলেয়ার, ভার্লেন, মালর্মে ও রিলকে আমাদেও সামনে রেখে বৃত্ত ভেঙ্গে বের হয়ে আসা প্রয়োজন।

তা না হলে হয়তো আগামীকাল কবি হুমায়ুন আজাদের মত অবস্থা হতে পারে আমাদেরও। আর এ কারনেই বেড়িয়ে এসেছিলেন শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিনা হোসেন, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখ কবি, লেখকগণ। আঙ্গিকে, প্রকরণে, কাঠামো ও চিন্তা চেতনায় তারা নতুন দরজা খুলেছেন। তাদের শিল্প সত্তা প্রোথিত করেছেন এই দেশ, মাটি ও মানুষের হৃদয়ের গভীরে। হুমায়ুন আজাদ ছিলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কবি – কথাশিল্পী।

একজন মৌলিক কবির যা যা থাকে সব ছিল তার। তিনি চেয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। তার জীবনদর্শনে ছিল তারই প্রতিফলন। যার জন্য তাকে ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের প্রবল রোষের শিকার হতে হয়েছিল বার বার। ক্লান্তিহীনভাবে বিশ্বাসী ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতি ও জীবননীতিতে।

উপরন্তু তার বিশ্বাস ছিল ব্যক্তি-স্বাধীনতায়। মত প্রকাশের, নিজস্ব ভাবনা-চিন্তা ও লেখার স্বাধীনতায়। তার বিশ্বাসের উচ্চারণ ছিল চর্যাপদ আর বৈষ্ণব পদাবলী থেকে শুর ু করে সকল সাহসের কথা। আর এসবকেই মনে করতেন সাহসের হাতিয়ার। আদ্যপান্ত কবি হলেও জীবিকায় অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আর এখানেই আমাদের সক্রেটিস শিকার হয়েছিলেন জামাত-জঙ্গীদের রোষানলের। আমার ছেলেবেলায় তার কবিতা ও প্রবন্ধের সাথে পরিচিয় ঘটে আমার। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে সে কালের সাহিত্য জগতে সবিশেষ চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ছিলেন সাহসমাঝী হুমায়ুন আজাদ। দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত তার কবিতা ছিল আমার আনন্দ। কবিতাতো বটেই সেই সঙ্গে তার অন্যান্য লেখাও আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।

এরপর তো তিনি বানের তোড়ের মতো অজস্র লিখে গেছেন। জীবনের শেষাবধি পর্যন্ত। মানুষের মননশীলতার কবি কী আর অমনি অমনি হওয়া যায়। হৃদয়ের গভীরে কোনও কোণে কবিতার বীজ উপ্ত না থাকলে কি আর অনলসভাবে বিশুদ্ধ এই কবি অনলসভাবে জীবনের পুরোটা সময় সৃষ্টিশীল নির্মাণের কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। যার জন্য একবার কবি নিজেই বলেছিলেন যতদিন বেঁচে থাকবেন তার শেষ অবধি লিখে যেতে চান।

‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ লেখার কারনে তিনি চক্ষুশুল হয়েছিলেন ওদের। ওই পাষন্ডরা কবি শামসুর রাহমানের মত তার উপরও হামলা করেছিল দফায় দফায়। মধ্যরাতে ঢাকা সেই হায়েনারা রহস্যের আড়াল থেকে বেড়িয়ে হামলা চালায়... না আর বলতে পারছি না। লজ্জায় ঘৃনায় নুয়ে আসছে মুখ। আমরা বিচারও করতে পারিনি সেই হায়েনাদের।

দীর্ঘ ৩ বছরেও হয়নি। এ লজ্জা রাখার জায়গাও নেই আমার। প্রিয় সক্রেটিস আপনাকে লাল সালাম। যাতে করে অন্তত প্রতিবাদী হতে পারি আপনার মত। অনবদ্য আগামীর জন্য... মোমিন মেহেদী: সাংবাদিক,সংগঠক ও কবি সাউন্ডবাংলা,২১/এ তোপখানা রোড(কনিকা)ঢাকা ১০০০;০১৭১২৭৪০০১৫


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.