বিনা অপরাধে যারা শাস্তি পায়, তাদের কষ্ট শেয়ার করা যায় না।
মহানবী (সঃ) হিজরী দশ সালে হজ্জ পালন করেন। এটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ হজ্জ। ইসলাম ইতিহাসে এটি বিদায় হজ্জ হিসাবে খ্যাত। সেবার ৯, জিলহজ্জ, শুক্রবার দুপুরের পর আরাফাত ময়দানে সমবেত লাখো সাহাবীর উদ্দেশ্যে মহানবী (সঃ) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
পরম করুনাময় আল্লাহতায়ালার প্রশংসার পর মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন : আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা'বুদ নাই। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করছেন। আর তিনিই একাই বাতিল শক্তিগুলো পরাভূত করেছেন।
হে আল্লাহর বান্দাগন! আমি তোমাদের আল্লাহর 'ইবাদত' ও তাঁর বন্দেগীর ওসীয়ত এবং এর নির্দেশ দিচ্ছি।
হে লোকসকল! তোমরা আমার কথা শোন। এরপর এই স্হানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কি না জানি না।
হে লোকসকল! আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে মানব জাতি! তোমাদেরকে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী হইতে পয়দা করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পার। তোমাদের মধ্য সেই ব্যাক্তি আল্লাহর দরবারে অধিকতর সন্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সকল বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে।
ইসলামে জাতি, শ্রেণীভেদ ও বর্ণ বৈষম্য নেই। আরবের উপর কোন আজমের, আজমের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার উপর কালোর বা কালোর উপর সাদার শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদার ভিত্তি হল কেবল তাক্ওয়া।
আল্লাহর ঘরের হেফাযত, সংরক্ষন ও হাজিগণের পানি পান করার ব্যবস্থা পূর্বর ন্যায় এখনও বহাল থাকবে।
হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকগণ! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের গাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাজির না হও। আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোন উপকারই করতে পারব না।
শুনে রাখ, সকল জাহিলী বিষয় ও প্রথা আজ আমার পায়ের নিচে। জাহেলী যুগের রক্তের দাবী রহিত করা হল। সর্বপ্রথম আমি আমার কাবীলার রক্তের অর্থাৎ রবী'আ ইবনুল হারিসের পুত্রের রক্তের দাবি রহিত ঘোষনা করছি।
বনু সা'দ গোত্রে থাকাকালে হুযাইলীরা তাকে হত্যা করেছিল।
জাহিলী যুগের সুদও রহিত করা হল। সর্বপ্রথম আমি আমার কবীলার দাবী অর্থাৎ চাচা আব্বাসের সুদ মাফ করে দিলাম। সুতরাং সকল সুদ আজ রহিত করা হল।
হে লোকসকল! তোমাদের রক্ত, তোমাদের ইজ্জত, তোমাদের সম্পদ পরপস্পরের জন্য চিরস্থায়ীভাবে হারাম করা হল, যেমন আজকের এই দিনে, আজকের এই মাস, তোমাদের এই শহর সকলের জন্য হারাম ( পবিত্র ও নিরাপদ)।
তোমরা শীঘ্রই আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। তিনি তোমাদের সকলকেই তোমাদের আমল সম্পর্ক জিঞ্জাসাবাদ করবেন।
জেন রাখ, অপরাধীর দায়িত্ব কেবল তার ঘাড়েই বর্তায়। পিতা তার পুত্রের জন্য এবং পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়।
হে লোকসকল! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি।
এদের প্রতি নির্মম ব্যবহার করার সময় আল্লাহর দন্ড সম্পর্কে নির্ভয় হয়ো না। নিশ্চই তাদের তোমরা আল্লাহর জামিনে গ্রহন করেছ এবং তাঁরই বাক্যের মাধ্যমে তাদের সাথে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক হয়েছে। জেনে রাখ, তাদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের প্রতি তাদেরও আধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণ সাধনের বিষয়ে তোমারা আমার নসীহত গ্রহণ কর।
তোমরা তোমাদের অধীনস্থদের সম্পর্কেও সতর্ক হও।
নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তা খাওযাবে; নিজেরা যা পরবে, তাদেরও তা পরাবে।
হে লোকসকল! শুনে রাখ, মুসলমানরা পরস্পর ভাই। সাবধান! আমার পরে তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মত কুফরী কাজে লিপ্ত হয়োনা। হে লোকসকল! আল্লাহ্ প্রত্যেকেই তার যথাযথ অধিকার দিয়েছেন। সুতরাং উওরাধিকারীর জন্য কোনরূপ ওসীয়ত কার্যকর হবে না।
সন্তান হল বিবাহিত দম্পত্তির। ব্যাভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই। আর সকল হিসাব নিকাশ আল্লাহর উপর ন্যস্ত। যা ব্যাক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয়, তার উপর আল্লাহর লা'নথ।
ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।
প্রত্যেক আমানত তার হকদারের নিকট আবশ্যই আদায় করে দিতে হবে। কারো সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয়। সুতরাং তোমরা একজন অপরজনের উপর জুলুম করবেনা। এমনিভাবে কোন স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর সম্পত্তির কোন কিছু তার সম্মতি ব্যতিরেকে কাউকে দেওয়া হালাল নয়। যদি কোন নাক-কান কাটা হাবশী দাসকেও তোমাদের আমীর বানিয়ে দেওয়া হয় তবে সে যতদিন আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদেরকে পরিচালিত করবে, ততদিন অব্যশ্যই তার কথা মানবে, তার প্রতি অনুগত্য প্রদর্শন করবে।
শোন, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমযানে রোযা পালন করবে, স্বেচ্ছায় ও খুশী মনে তোমাদের সম্পদের যাকাত দেবে, তোমাদের রবের ঘর বায়াতুল্লাহর হজ্জ পালন করবে আর আমীরের ইতা'আত করবে; তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।
হে লোকসকল! আমার পর আর কোন নবী নেই, আর তোমাদের পর আর কোন উম্মত ও নেই।
আমি তোমাদের নিকট দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দুটোকে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গুমরাহ হবে না।
সে দুটো হল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত।
তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বারাবারি থেকে বিরত থাকবে কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দ্বীনের ব্যাপারে এই বারাবারির দরুন ধ্বংস হয়েছে।
এই ভূমিতে আবার শয়তানের পূজা হবে- এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা তার অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে। এতে সে সন্তুষ্ট হবে।
সুতরাং তোমাদের দ্বীনের বিষয়ে শয়তান থেকে সাবধান থেকো। শোন, তোমরা যারা উপস্থিতি আছ, যারা উপস্থিতি নেই তাদের কাছে আমার পয়গাম পৌঁছে দিও। অনেক সময় দেখা যায়, যার কাছে পৌঁছানো হয় সে পৌঁছানেওয়ালার তুলনা অধিক সংরক্ষনকারী হয়।
তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিঞ্জেস করা হবে। তখন তোমরা কি বলবে?
সমবেত সকলে সমস্বরে উত্তর দিলেন: আমরা সাক্ষ্য দেব, আপনি নিশ্চয় আপনার উপর অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, রিসালতের দায়িত্ব যথাযথ আনজাম দিয়েছেন এবং সকলকে নসীহত করেছেন।
[রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে পবিত্র শাহাদাত অঙ্গলী তুলে আবার নিচে মানুষের দিকে নামালেন। ]
হে আল্লাহ্ ! তুমি সাক্ষী থাক। হে আল্লাহ্ ! তুমি সাক্ষী থাক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।