আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবজগতের বিবর্তন সংক্রান্ত কিছু স্থূল ভুল-ধারণা

কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস

বিবর্তন যদিও কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা পরমানুর পর্যায় সারণীর মতই তত্ববিদ্যা বা ধর্মতত্বের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কবিহীন তাও পরের দুইটা নিয়ে ধর্মতাত্বিকদের কোন গাঁইগুই না থাকলেও বিবর্তন নিয়ে সবার চুলকানি বেশ উপভোগ্য পরিমাণেই আছে । আমার ব্যক্তিগত মত, জীবজগতের বিবর্তন ধর্মভিত্তিক দর্শণের উপর যতটা ক্ষয়কারক, তার তুলনায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং এর অনুস্বিদ্ধান্তগুলা আরো বেশি । কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে সাধারণত মোল্লা পাদ্রিদের দেখা যায় না ঝাড়ু হাতে আগায়া আসতে । অবশ্য এর কারণ যে জীবন-জিজ্ঞাসার সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কোন সম্পর্ক নাই তা না, বরং কোয়ান্টাম মেকানিক্স বুঝতে যেই পরিমাণ হার্ডকোর গণিত বুঝতে হয়, তার ধারেপাশের জ্ঞান ধর্মতাত্বিকদের তো দূরের কথা সাধারণ ইন্জিনিয়ারদেরও নাই । এই দিক দিয়ে জীববিজ্ঞানীরা বরং সাধুবাদ পাইতে পারেন, তারা বিবর্তনের মত এমন জটিল বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন যে, কওমি মাদ্রাসার মোল্লাও মাঝে মাঝে কিছু বৈধ প্রশ্ন করে ফেলতে পারে ।

সে যাই হোক, বিবর্তন নিয়া আমার নিজের জ্ঞানও শূণ্যের কোঠায়, এইজন্য বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন তো সম্ভবই না বরং সেইসব প্রমাণ পড়েও বেশিরভাগেরই মাথামূন্ড কিছুই বুঝি না । তবে বিবর্তন নিয়া কিছু স্থূল ভুল ধারণা এবং সেখান থেকে উৎপন্ন কিছু নিতান্তই আবালীয় প্রশ্ন বা সমালোচনা প্রায়ই শুনা যায় । সেইগুলার উত্তর দেয়ার জন্য খুব গভীর বোঝার দরকারও হয় না । এইধরণের কয়েকটার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি । ১ ভুল ধারণা : বিবর্তনবাদ বলে যে পাথর পানি গ্যাস এইসব জড় বস্তু থেকে জীবের মত এমন জটিল জিনিসের উৎপত্তি হয়েছে ।

উত্তর : জীবের বিবর্তনবাদ প্রথম এককোষী জীবের উৎপত্তি কিভাবে হইলো সেটা নিয়া কিছু বলে না । বিবর্তনবাদের সীমা কেবলমাত্র সরল এককোষী প্রাণী থেকে কিভাবে জটিল বহুকোষী ও বিভিন্ন অংগপ্রত্যঙ্গওয়ালা জীবের উৎপত্তি হইলো সেটা নিয়া । জীবের উৎপত্তি যদি অন্য গ্রহের কোন প্রাণীর মাধ্যমে হয় বা কোন ঈশ্বরের হস্তক্ষেপেও হয়, সেটাতেও বিবর্তনবাদের বিন্দুমাত্র এদিকসেদিক হবে না । যেমন পৃথিবী সূর্যের চারপাশে মহাকর্ষের টানে ঘুরে এই নীতির সাথে পৃথিবী কিভাবে আসলো, কেউ তৈরী করলো নাকি নিজে নিজেই হইলো এর কোন সম্পর্ক নাই । কেউ তৈরী করলেও যেই হিসাব অনুসারে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময় ঠিক হবে, নিজে থেকে তৈরী হৈলেও সেই একই হিসাব থাকবে ।

২ ভুল ধারণা : বিবর্তনবাদ অনুসারে মানুষ বাঁদর থেকে হৈছে, তাহলে এখনকার বাঁদরগুলা কেনো মানুষ হয়ে যাচ্ছে না । উত্তর : প্রথম কথা, বিবর্তনবাদ কোথাও বলে না যে গাছের কিছু বাঁদর একদিন হঠাৎ করে গাছ থেকে লাফ দিয়ে দুপায়ে হাঁটা শুরু করছে । বরং বিবর্তনবাদ বলে যে, অনেক মিলিয়ন বছর আগে বাঁদরজাতীর কিছু প্রাণীর মধ্যে এমন কিছু সংকর হৈলো যারা অন্য বাঁদরদের থেকে আলাদা । এরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতো, ফলে গাছের বাঁদরদের সাথে একই পরিবেশে এরা টিকতে না পেরে অন্য পরিবেশে চলে গেলো । কারণ গাছে চড়া বাঁদর যে পরিবেশে থাকে সেখানে পাঁয়ে হাঁটতে পারার চাইতে গাছে চড়তে পারারাই বরং বেশি সুবিধা পাবে ।

এই অন্য পরিবেশে চলে যাওয়ার পরে নতুন পরিবেশে যেহেতু শুধু হাঁটতে পারা বাঁদররাই আসছে সেহেতু তাদের সন্তান সন্ততি সবাই এই রকমের, এরা এই পরিবেশে বংশবিস্তার করা শুরু করলে, গাছের দের চাইতে এরা একটু আলাদা হয়ে গেলো । এইরকম নানান বার আলাদা হৈতে হৈতে একসময় দেখা গেলো এমন একটা গ্রুপ আসলো যারা গাছের বাঁদরদের তুলনায় সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি । এইটারে একটা অবৈজ্ঞানিক উদাহরণ দিয়া ব্যাখ্যা করা যাক । ধরা যাক অনেক শতাব্দী আগে এক লোকের দুই ছেলে ছিলো । বড় ছেলে অলস, কাজ করতে চায় না ।

ছোট ছেলে কর্মঠ, সে গিয়ে রাজার দরবারে কাজ জুটায়ে ফেললো । ফলে তার ছেলেমেয়েরা শিক্ষিৎ হয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইলো । আর বড় ছেলের ছেলেমেয়েরা গ্রামেই বিভিন্ন কম লাভজনক কাজ কৈরা গ্রামেই থাকলো । বড় ছেলে যেহেতু অলস সে তার ছেলেমেয়ের শিক্ষাদীক্ষা নিয়াও তেমন কিছু করলো না । এইভাবে ছয়,সাত দশ প্রজন্ম পার হওয়ার পরে দেখা যাবে, সেই আদ্যি ছোট ছেলের বংশধররা একেকজন দেশের প্রধানমন্ত্রী বড় বড় শিল্পপতি বিজ্ঞানী গবেষক ।

অন্যদিকে সেই আদ্যি বড় ছেলের বংশধররা হৈলো ছিঁচকা চোর, মেথর এইসব । এখন দুইদলের আদি উৎপত্তি এক জায়গায়, মানে এই কথা না যে ছিঁচকা চোর মেথররা হঠাৎ কেরে দেশের বড় বড় শিল্পপতি বিজ্ঞানি এইসব হয়ে গেছে । ৩ ভুল ধারণা : বিবর্তনবাদ নিষ্ঠুরতা অনৈতিকতা এইসব শিক্ষা দেয় । উত্তর : অন্যসব প্রকৃতিবিজ্ঞানের মতই বিবর্তনবাদ কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা কিভাবে ঘটে সেটার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে । এর বেশি কিছু না ।

এটাকে কে খারাপ ভাবে ব্যবহার করলো আর কে ভালোভাবে ব্যবহার করলো এর সাথে বিবর্তনবাদের সত্যাসত্যের কোন সম্পর্ক নাই । যেমন ধরা যাক কেউ একজন আবিষ্কার করলো গুটিবসন্ত রোগ অমুক ভাইরাসের কারণে হয় । এখন গুটিবসন্তে কোটি কোটি লোক মারা যায় বলে তার আবিষ্কার মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে বললে যেইরকম উদ্ভট হয় বিবর্তনবাদ অনৈতিকতা শিখায় বললেও একই পরিমাণ উদ্ভট হয় । এমনকি কোন জঘণ্যলোক যদি এই জীবাণু দিয়ে অস্ত্র তৈরী করে হাজার হাজার লোকের দুর্ভোগ মৃত্যু এইসবও ডেকে আনে, তবু অমুক ভাইরাসের কারণে গুটিবসন্ত হয় এই সত্যের বিন্দুমাত্র হেরফের হবে না । ---- আপাতত এই কয়টা ।

আর কারো কোন ধারণা থাকলে বৈলেন । সাধ্যমত চেষ্টা করবো, জবাব দেয়ার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।