আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরাষ্ট্রমন্ত্রীর বচনসুধা আর জনগণের সঙ্গে চলতে থাকা তামাশার একচিলতে ব্লগর ব্লগর!

''সংবাদপত্র যা ছাপে তার একটা বড় অংশই হলো 'লর্ড জোনস মারা গেছেন' ধরণের তথ্য। অথচ সেটি যাদের জানানো হয় সেই জনগণ খবরই রাখে না যে লর্ড জোনস বেঁচে ছিলেন''

এই বঙ্গ দেশে এক মন্ত্রী আছেন। তিনি অতি বড় মুখরা। নানান সভা-সমাবেশ-মাহফিলে তার বাণী গোলাপজলের মতো চারপাশটা মৌ মৌ করে তোলে। রাজ্যসভায় আলোচিত হয় তার কথা।

মহান সাংবাদিকরা দরজায় তাকে ঘিরে ধরে অমৃত বচনের জন্য। তিনি যতটা খ্যাত খোদ খালেদা-হাসিনাও যেন প্রতিযোগিতার বাজারে ততটা না। কথামালার আশ্বাসে তার নাই কোন যোগ্য উত্তারাধিকার। তিনিই শুরু তিনিই শেষ। একেবারে যেন খতমে নবুয়ত।

অবাক হলেও মেনে নিতে হয়, বাতচিতের এই ধরণটা সরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রজাতিদেরই মনে হয় বেশি মানায়। রাজ্যনীতি ঠিক ঠাক দেখভালের জন্য বোধ হয় কথার ওস্তাদ হওয়ার বিকল্প নাই। তাকে দেখলে অন্তত তাই মনে হয়। বচনই তার হাতিয়ার, বচনই ভরসা, বচনই নিয়েই তার কারবার। যার বাণীগুচ্ছ একসঙ্গে রাখলে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের থেকেও খাসা লাগে।

‘এমনতো ঘটতেই পারে’ এটা তার সুমিষ্ট রসবোধের অতি সাধারণ এক বাতচিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় সোনার কর্মীদের ভার্তৃঘাতি হানাহানির পর তো তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকে বলেন, ছাত্রলীগে শিবির ঢুকেছে। আমি জানিয়ে দিয়েছি, ছাত্রলীগের নাম করে যে যাই করুক না কেন, তাকে গ্রেফতার করুন। কেউ বলতে পারবে না, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করলে আমি কোনও আপত্তি জানিয়েছি কিংবা ছাড় দিয়েছি। এমন নির্দেশের পরও কিছু ঘটে গেলে কী করার আছে?’ মাননীয় রাজ্যরক্ষামন্ত্রী সর্বংসহা হিসেবেও পরিচিত আছে।

তার আরেকটি অসাধারণ ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার মতো বেহিসাবি কথামালাকে একেবারে ডালে-চাইলে খিচুড়ির মতো সহজপাচ্য করে প্রকাশ করতে পারা। একেবারে যে সে কম্ম নয়! রাজ্যনীতিতে কিসে কি হয় এটা তার মতো কেউ বোঝে বলে মনে হয় না। সঙ্গী সোহেল তাজ পদত্যাগ করার বিষয়টি নাকি তিনি দুই মাস পর্যন্তও জানতেন না। আর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল আছে’ এই তো সার। আমরাতো এই হপ্তাখানেক আগেও শুনেছিলাম ‘এই সরকারের সময়ে কোন ক্রস ফায়ারের ঘটনা ঘটে নাই’।

জনগণ কি ভুলেই গেছেন বিডিআর বিদ্রোহের সময়ে তার বক্তব্যসমূহ এবং আচরন ছিলো অসংলগ্ন, প্রশ্নবোধক, পরস্পরবিরোধী এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত রহস্যজনক। রাজ্য অসন্তোষের মূলে যে আসলে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের চক্রান্ত তা বারবার মনে করিয়ে দেয় এই মন্ত্রী। অভিনব তার আবিষ্কার। হরতালে মির্জা আব্বাসের বাসায় হামলার ভিডিও ফুটেজ তিনি তিনদিন পরও দেখতে পাননা। হায়রে পোড়া কপাল, তিনি আসলে যেখান থেকে কথাগুলো বলেন, সেখান থেকে জনজীবনকে হয়তো এরকমই দেখায়।

এজন্যই তা সত্যি লাগে। মনের মধ্যে জ্বালা-ছ্যাঁকা খেয়েও আমরা আমোদ পাই। আমরা খুশি হই মুখরা খাতুনকে নিয়ে। বর্তমান সরকার একদিকে অতীতের অন্ধকারের দিকে অনবরত ঢিল ছুড়ছে। অন্যদিকে অতীতের ধারাবাহিকতায় একই পথে হাঁটছে।

যে কারণে সমস্যার বিশাল পাহাড় অতিক্রম করার পথ না পেয়ে এখন অলঙ্ঘনীয় এক বাধার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যেরা কত খারাপ সে তুলনায় নিজেরা কত ভালো তা প্রমাণ করতে গিয়ে কর্তব্যকর্মের বদলে এই রাজ্যমন্ত্রী এমন একটা ছু মন্তর মাতম তুলে দিয়েছে, যাতে সরকারেরই দায় এড়ানো মুশকিল। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তা নিয়ন্ত্রণে থাকার অব্যাহত দাবি করার একমাত্র কারণ হতে পারে তিনি নিজে কখনো তো আহত হননি। তিনি কোনো ছিনতাইকারীর কবলে পড়েননি। তাতে তার কাছে এটাই প্রমাণ করে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।

গতকাল ১০ জন খুন হয়েছিল। আজ ৬ জন খুন হয়েছে। এটাকে কি অবস্থার উন্নতি বলা যাবে না? এভাবে ভাবতে যারা অভ্যস্ত তাদের দায়িত্বহীনতার সঙ্গে অযোগ্যতা যুক্ত হলে যা হয় তাই মানুষ দেখছে। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবির প্রকৃতি কি নতুন কিছু? ভারতবর্ষের অধিবাসীদের মানুষ হিসেবে স্বীকার করতে নাকি ইংরেজের লেগেছিল দুইশ বছর। আমাদের রাজ্যমন্ত্রীর হয়তো দেশের মানুষকে চিনতে-মানতে একশ বছরের বেশি লাগবে না- এই আমাদের আশা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।