আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি ও বাঘারু (৯-১২) : আহমেদ মুনির

চন্দ্রবিন্দু ও আরও অনেকে, হেঁটে হেঁটে, প্রতিটি শব্দ আমাদের, পার হয়ে যায়...
৯ আমরা মৃত্যু থেকে কতদূরে আছি বলতে পারিস, বাঘারু? মাটি ও লবণ থেকে আমরা যা পাইনি এই শালগাছ তার থেকে বেশি কিছু পেয়েছে। ধূর্ত শেয়াল মাটি খুঁড়ে খেয়ে গেছে কত মেঠো কাছিমের ডিম। তবু এই পৃথিবীতে তিনশ বছর আয়ু সে পায়নি। পাহাড়ের ওপাশে আছে মহানগর। বাবার লাল চোখের মতো তার আলো।

হ্যা, শহর আমাকে মনে পড়িয়ে দেয় বাবার মস্ত কড়া-পড়া হাতের কথা। দ্যাখ, দূরে তার বিবর্ণ মুখ। আর পিঠে গালে বাঘের থাবার মতো মারের চিহ্ন। ১০ মেয়েরা আমাদের কাছে দূরাগত নক্ষত্রের আলোর মতো। মন্থর, বিশীর্ণ এক একটি রাতের নদী পার হয়ে আমরা দেখতে পাই তাদের।

এখন ঘুমের ভিতর পাশ ফিরে শুয়ে বাঘারু স্পর্শ করে আছে স্বপ্নের উল্টো পিঠ। আর এই পৃথিবীতে যেসব মানুষ শ্রীদেবীদের নকল দেহ ছুঁয়ে বেঁচে থেকে আহ্লাদিত, তাদের কথা ভেবে হাসছিলো সে। চাঁদ উঠবে একটু পরেই, গ্রাম্য প্রসাধনহীন সরল একখানা মুখ নিয়ে। এই চাঁদটাই রয়ে গেছে শেষমেশ আমাদের জন্য। আমরা যারা কখনও কোনো মেয়ের হাত ধরিনি।

১১ নিছাপুরের ফ্যাক্টরির বাঁশিতে দিগ্বিদিক ছড়িয়েছে রাত্রিশেষের কবিতা, ঘন চা-বাগানের রঙিন মেয়েদের পায়ের কাছে আছড়ে পড়বে বলে। তেল চিকচিকে বাবরি আর খাকি প্যান্টের মরদেরা তখন বারঘরিয়ার ঢাল থেকে গড়িয়ে পড়া বাঘারুর সামনে। ওদের রঙিন ছাতাগুলোর কথা ভাবছিলো বাঘারু। দেখছিলো হাসিতে লুটিয়ে পড়া ইজের, খোঁচা দেওয়ার জন্য তৈরি মনের ভিতরে লুকিয়ে রাখা ঝকঝকে কথার বল্লমগুলোকে। তবু চুপ থাকতে জানে না বাঘারু।

কারও কারও রেডিও আছে জেনেও শুরু করে বেলা ঠাকুরের গান। চাইলেও এ-গান থামবে না এখন। এতদূর চলে এসেছে খোঁপায় গুঁজে দেওয়া লাল করবীফুলের পিছু পিছু, নিজেই নিজের শিশু হয়ে। ১২ মেঠো ইঁদুরের গর্তের পাশে পড়ে আছে আমাদের প্রেম। ভীরু শেয়াল আর রাত্রির জানোয়াররা কতবার শুঁকে দেখে বুঝতে চেয়েছে ওটা আদৌ বেঁচে আছে কি না! তবু প্রতিরাতে ওটা এক ইঞ্চি করে বাড়ে।

আর সকালের ফিকে আলোর ভিতরে মুখ গুঁজে থাকে অলস বেড়ালের মতো। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকি আমরাও। ভাবি বাঁশঝাড়ের গাড় ছায়ার নিচে জড়িয়ে ধরা যায় এমন কোনো মেয়ের কথা।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।