আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হতাশাঃ কুরআন-সুন্নার ‘নিরাময় কেন্দ্রে’ তার চিকিৎসা

---
ইঁদুর-দৌড় প্রতিযোগিতার এই সমাজে আমাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার স্বার্থে মানুষের সাথে মানুষের আত্মিক বন্ধন এখানে মূল্যহীন। এখানে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক স্বার্থপরতার বরফজলে ডুবানো। তীব্র প্রতিযোগিতার এ সমাজে একজন আরেকজনের জন্য পথের কাঁটা ও প্রতিদ্বন্দ্বী। এখানে বন্ধু নেই, ভাই নেই, কোন বোন নেই, স্নেহভরা মায়ের শর্তহীন আদর নেই, নেই নিঃশর্ত পিতার ভালবাসা,।

কেবল স্বার্থপর মানুষ আর প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভীড় এখানে। এখানে মানুষকে বিচার করা হয় বিনিময় মূল্য দিয়ে, তার উপযোগিতা দিয়ে। পুঁজিবাদী সমাজের বাস্তবতা এটাই। তাই হিংসা বিদ্বেষ পরশ্রীকাতরতার প্রতিযোগিতায় মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা খুব-ই স্বাভাবিক। আর এই হতাশা বহুবিধ পাপের মূল কারণ।

আত্মহত্যা, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ছিনতাই, নির্যাতন ইত্যাদি সব অপরাধ কোন না কোনভাবে হতাশার সাথে জড়িত। ইবলিসের আভিধানিক অর্থ “চরম হতাশ। ” তাই তার প্রধান কাজও মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে পুরো সমাজকে অপরাধ প্রবণ করে তোলা। যখনি কারও মধ্যে হতাশা আসবে তখন বুঝতে হবে শয়তান তাকে কাবু করতে পেরেছে। অচিরেই সে অপরাধের দিকে পা বাড়াবে।

আল্লাহ তাআলা রাসূল স. এর উপর অহী অবতীর্ণ মানুষকে কিভাবে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিবেশে সৎ হয়ে টিকে থাকতে হয় তার চমৎকার শিক্ষা দিয়েছেন । জীবনের যে উত্থান পতন তাঁর রহস্য আমাদের সামনে তিনি তুলে ধরেছেন। কোরআনের মূল বক্তব্যের দিকে ফিরে যাই। وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, খিদে, সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতি ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে। এবং সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের (যারা এসব বিপদে ধৈর্যধারণ করে)।

বাকারা-১৫৫ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, খড়া, রোগে অথবা অত্যাচারী শোষকের অত্যাচার, নির্যাতন আর নিপীড়নে মানুষের যে ধনসম্পদ ও প্রাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়, উপরের আয়াতটিতে সেসবের কথা বলা হয়েছে। আসলে এ ক্ষতিগুলো পরীক্ষা। এ দিয়ে মানুষের সততাকে আল্লাহ যাচাই করছেন। আরাম কেদারায় বসে ঘি মাখন খাওয়া যে কেউ-ই সৎ থাকতে পারে। এর মধ্যে মহত্মের কিছু নেই।

কিন্তু সততার পরিচয় তখন-ই পাওয়া যাবে যখন কেউ কঠিন সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তেও নিজেকে সততার উপর দৃঢ় ও অবিচল রাখতে পারে। চরম দারিদ্রতা ও অনটনের মধ্যে থেকেও যে ব্যক্তি ঘুষ না খেয়ে থাকতে পারে সেই ব্যাক্তি সত্যিকার অর্থেই একজন সৎলোক। আমরা কমবেশি সবাই নিজেদের সৎ ভাবি। কিন্তু দারিদ্রতা, অভাব, বিপদ ও চরম সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে অগ্নিপরীক্ষা হয়। এমন কঠিন অবস্থায় যে সৎ থাকতে পেরেছে সেই মুমিন, সেই সালেহ (সৎ)।

সেই সব সত্যিকার সৎ লোকদের আল্লাহ খুঁজে বের করে তার সীমাহীন সুখপূর্ণ জান্নাত উপহার দিতে চান। এ জন্য বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়। ভয় দিয়ে, দারিদ্রতা দিয়ে, সম্পদের ক্ষতি দিয়ে। এসব দেখে ঘাবড়ে গিয়ে হতাশ হলে ভুল পথে পা বাড়াতে হবে। ধৈর্য নিয়ে নিজের সততাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গেই আয়াতের এই অংশটি “এবং সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের (যারা এসব বিপদে ধৈর্যধারণ করে)”। ধৈর্য ধারণ হচ্ছে ,আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ না হওয়া , ভেঙে না পড়া, উত্সাহ উদ্দীপনা নিয়ে সৎকাজ চালিয়ে যাওয়া। يَا بَنِيَّ اذْهَبُوا فَتَحَسَّسُوا مِنْ يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلَا تَيْأَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ বৎসগণ! যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের (বিন ইয়ামেন) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে অবিশ্বাসীরা ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হয় না। ইউসুফ:৮৭ হযরত ইয়াকুব আ.।

প্রিয় ছেলে ইউসুফ ও বিন-ইয়ামিন কে হারিয়ে যখন ভিষণ দুঃখ ভারাক্রান্ত তিনি, কষ্টে যখন বুক ভেঙে যাচ্ছে তাঁর তখনও তিনি উপদেশ দিচ্ছেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হতে। একজন নবীর উপদেশ এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে? وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। ইমরান: ১৩৯ মক্কার কাফেররা আগুনে উত্তপ্ত করা পাথরের উপর হযরত বিলালকে শুইয়ে রাখত। বিলালের শরীর থেকে গলে যাওয়া চর্বিগুলো শুষে নিত মরুভূমির উত্তপ্ত বালি।

ক্ষুদ্র একটি বিশ্বাসী মুমিন দলের উপর এমনি রকমের ভয়াবহ নির্যাতন চলছিল সমগ্র মক্কা জুড়ে। মুমিনদের চতুর্দিক থেকে বনু মাখজুম (আবু জাহেলের উপজাতি) একটা জনমানবহীন উপত্যকায় কোণঠাসা করে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করলো, তখন আমাদের প্রিয় নবী ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেটে দিনের পর দিন পাথর বেধে রাখতেন। সে সময় আল্লাহ মুমিনদের ওয়াদা করলেন “যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে”। তাই হল। এর পর তের বছরের মাথায় সমগ্র আরব ভুখণ্ডে এমন একটি জায়গাও ছিল না যেখানে মুসলিমদের বিজয়ী অবস্থায় পাওয়া যায় নি।

আমাদের প্রিয় নবী ও সাহাবীরা এমন কঠিন বিপর্যয়ের মুখেও ভেঙে পড়তেন না। পূর্ণ সাহস আর উত্সাহ নিয়ে সৎকাজ করে যেতেন। তাহলে আমরা কেন সামান্য কারণে হতাশ হবো? পরীক্ষায় পাশ করতে পারে নি বলে অনেককেই আত্মহত্যা করতে শুনি। সত্যি দুঃখজনক। কত সামান্য কারণে আমরা ভেঙে পড়ি।

একজন বিশ্বাসী মুসলিম কখনো হতাশ হতে পারে না কোরআনে আল্লাহ আরো স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন: قَالَ وَمَنْ يَقْنَطُ مِنْ رَحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ তিনি বললেনঃ পালনকর্তার রহমত থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয় ? আল-হিজর: ৫৬ قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছ তোমরা আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। জুমার:৫৩ হতাশার আরেকটি উৎস পাপ বোধ। অনেকেই নিজের মানবিক দুর্বলতার কারণে এমন পাপ করে ফেলে যা তার বিবেককে অনবরত দংশন করতে থাকে।

সে মনে করে বোধ হয় এ পাপের ক্ষমা নেই। এভাবে হতাশ হয়ে , নিজেকে নিজে শাস্তি দেওয়ার জন্য সে পাপের পথে আরো অগ্রসর হয়। তবে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন, আল্লাহ মাফ করবেন। আল্লাহ চান আমাদের ক্ষমা করে দিতে।

কিন্তু শর্ত হচ্ছে আমরা জেনে শুনে ঠান্ডা মাথায় যেন পাপের পুনরাবৃত্তি না করি। وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا তবে এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। ........... নিসা:১৮ وَالَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ وَلِقَائِهِ أُولَٰئِكَ يَئِسُوا مِنْ رَحْمَتِي وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ যারা আল্লাহর আয়াত সমূহ ও তাঁর সাক্ষাত অস্বীকার করে, তারাই আমার রহমত থেকে নিরাশ হবে এবং তাদের জন্যেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

আনকাবুত:২৩ আল্লাহ তাঁর বান্দার হতাশাকে কোনভাবেই পছন্দ করেন না। তাই তিঁনি বলেছেন হতাশ হওয়াটা আল্লাহকে অবিশ্বাস করার নামান্তর। আর শয়তান বারে বারে আমাদের হতাশা আর পাপের দিকে ঠেলে দিতে চায়। ধৈর্যহীনতা: হতাশার অন্যতম কারণ যখন আমরা পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা না করতে পেরে ধৈর্যহীন হয়ে যাই, তখন হতাশা আমাদের জাপটে ধরে। তাই ইসলামে ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

কোরআন শরীফে কতবার যে ধৈর্যের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে তা সবিস্তারে উল্লেখ করা একটি পোস্টে সম্ভব নয়। إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا ۖ وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের (মুনাফিক, মুশরিক এবং কাফেরদের) খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে। ইমরান: ১২০ আমরা যখন আপোষহীনভাবে সৎ হয়ে চলার চেষ্টা করি, তখন দুষ্টু লোকেরা আমাদের উপর চড়াও হয়।

তাঁদের ষড়যন্ত্রে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে, ক্ষণিকের জন্য হলেও আমাদের বিপদগ্রস্ত হতে হয়। আমাদের এ বিপদ দেখে দুষ্টু লোকেরা তখন হাসি ঠাট্টা করে। টিটকারি দিয়ে বলতে চায় “ তোমরা না সৎ লোক তাহলে তোমাদের উপর এত আযাব কেন?”। সঙ্কটাপন্ন মুহুর্তে এসব ঠাট্টা বিদ্রুপ তার উপর গালিগালাজ, অশ্রাব্য ভাষায় অপমান ইত্যাদি তো আছেই। মুমিনরা এতে অনেক সময় ভেঙে পড়ে।

হতাশ হয়ে দুষ্টু লোকদের দলে ভিড় জমায়। অনেকে তার জবাব দিতে যেয়ে সীমালঙ্ঘন করে। কিন্তু আল্লাহ এখানে মুমিনদের তা না করে ধৈর্য ধরতে বলেছেন এবং সততার উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন। “আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না”। ধৈর্য ধরে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করলে এই সব দুষ্টু লোক মুমিনদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আল্লাহ নিজে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

মনে রাখতে হবে কোরআনের প্রতিশ্রুতি “যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে”। অফিস আদালত প্রশাসনে ঘুষখোর আর অসৎ লোকদের চাপে পড়ে অনেক সময়-ই আমরা হতাশ হয়ে খারাপ পথে পা বাড়াই। তাই আল্লাহ আমাদের হতাশা থেকে সাবধান করে দিচ্ছেন। প্রত্যেক যুগে অসৎ আর দুষ্টু লোকদের প্রচণ্ড চাপের মুখে নবীরা কখনো অসৎ হয়ে যায় নি অথবা শয়তানের সাথে আপস করেনি। ।

তারা কখনো ভেঙে পড়েনি, হতাশ হয়নি। দুষ্টু লোকদের অত্যাচার আর ঠাট্টা কৌতুকের ব্যাপারে তাঁরা ছিল ড্যাম কেয়ার। وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ [٣:١٤٦] আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। ইমরান:১৪৬ হাদীস: "আল্লাহ যার ভাল চায় তাকে বিপদগ্রস্ত করেন।

" বুখারি , মিশকাত হাদীস ১৪৫০ অনেকেই বিপদ আপদে সাহস হারিয়ে ফেলে। একজন মানুষ সৎ কিন্তু তারপরও বিপদের পাহাড় তাঁর উপরে আছড়ে পড়ছে, এ দেখে কারও হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আল্লাহ তার ভাল চান বলেই তাকে বিপদগ্রস্ত করছেন। "মুসলমানের প্রতি পৌছে না কোন বিপদ, রোগ, চিন্তা ভাবনা, কোন কষ্ট বা কোন দু:খ এমনকি তার শরীরে কাটা ফুটলেও যা দিয়ে আল্লাহ মাফ করেন না তার পাপগুলো। " বুখারি মুসলিম, মিশকাত:১৪৫১।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। বিপদ দিয়ে কীভাবে আল্লাহ তাআলা আমাদের পবিত্র করতে চান। বিপদ দুঃখ কষ্ট, রোগ-জড়া হঠাৎ জাপটে ধরলে তাই হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। পাপের কারণেও আমাদের অনেক সময় বিপদ আপদ আসে। যেমন একজন লোক মদ খেয়ে খেয়ে যকৃত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।

তাতে তার হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। ধৈর্য ধরে আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নিলে তা সে সমস্ত পাপের কাফ্ফারা হয়ে যাবে। এমন পর্যায়ে শয়তানের প্ররোচনায় হতাশ হয়ে অনেকেই পীর অথবা কবরের কাছে প্রার্থনা করে বড় ধরনের শিরক করে ফেলে। মানুষকে পথভ্রষ্ট করার শয়তানের বিরামহীন যুদ্ধে হেরে যায়। "মুমিনের উদাহরণ সেই কোমল তৃণের মত যাকে বাতাস এদিক ওদিক ঘুরায়।

একবার তাকে নিচে ফেলে আবার তাকে সোজা করে। যতক্ষণ না তার মৃত্যু আসে। আর মুনাফিকের উদাহরণ শক্ত করে দাঁড়ানো পিপল গাছের মত। যার প্রতি কোন বিপদ পৌছে না যতক্ষণ তা মাটিতে কাত হয়ে পড়ে। " বুখারি; মুসলিম; মিশকাত: ১৪৫৫ অন্য একটি বর্ণনায়: "মুমিনের উপর সর্বদা বিপদ আপদ পৌছে এবং মুনাফিকের উদাহরণ হচ্ছে পিপল গাছের মত যা স্থির থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত তাকে কেটে ফেলা হয়।

" বুখারি; মুসলিম; মিশকাত ১৪৫৬ এখানে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, সৎলোকরা আজীবন উত্থান পতনের সময় পরিক্রম করে। তাদের টানা নিশ্চিন্ততার জীবন নেই। তাদের সততার দাবীর সত্যতা অনবরত বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে যাচাই বাছাই হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তারা শিশুর মত বিশুদ্ধ ও নিষ্পাপ আত্মায় উপস্থিত হয়। হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।

অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। সূরা: ফযর: শেষ আয়াত। অসৎ, কপট, ভণ্ড ও মুনাফিকদের আল্লাহ ছাড় দিয়ে রাখেন। তারা আরাম আয়েশের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে আরো বেশি পাপাচারে লিপ্ত হয়।

কিন্তু হঠাৎ করেই এই বদমাইশ, অসৎ লোকদের আবর্জনার বোঝাকে পৃথিবী থেকে উৎখাত করে দেয়া হয়। তার সমূলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অসৎ লোকদের এই আরাম আয়েশের জীবনও অনেকের মধ্যে হতাশার আরেকটি কারণ। শয়তান তাদের ক্রমাগত অসৎ লোকদের আরাম আয়াশের দৃষ্টান্ত দেয় আর বলে " তুমি ওদের মত অসৎ হয়ে যাও, তাহলে তোমাকে এসব ঝামেলা আর পোহাতে হবেনা"। তাই অসৎ লোকদের এ ভোগ বিলাসিতা কখনো যেন আমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে।

আমরা যদি কোরআন ও সুন্নার অনুসরণ করি তাহলে অবশ্য চরম হতাশ ইবলিসের হাত থেকে বাঁচতে পারব। এছাড়া এ থেকে বাঁচার আমাদের আর কোন পথ নেই। কেউ যত বড় দার্শনিক আর মনস্তাত্ত্বিকদের দাঁড়ে দাঁড়ে ধর্ণা দিক না কেন, হতাশার ইবলিস তার কাছে চক্রাবর্তে ফিরে আসবেই। এ ব্যাপারে কোরআনে সু্ন্নাহ আমাদের যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তার অনুসরণ করতে পারি আমরা। এভাবে আমাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারব ইনশাল্লাহ।

হতাশা থেকে মনের যে সব রোগের উৎপত্তি তার সবকটির সমাধান কুরআন আর সুন্নাহর মধ্যে রয়েছে। হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, কৃপণতা, পরচর্চা, মানুষের মাথায় কাঠাল ভেঙে ক্যারিয়ার চাঙা করার প্রবণতা, মারমুখি মনমানসিকতা এ গুল সব-ই হতাশা সৃষ্ট মানসিক রোগ। কুরআন হলো তার সমাধান। আল্লাহ তাআলা বলেন: وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা (মানসিক) রোগের চিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। পাপীদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।

বনি ইসরাইল: ৮২ يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ [١٠:٥٧] হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবাণী এসেছে তোমাদের সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে এবং তা অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত যে বিশ্বাস করে তার জন্য। ইউনুস:৫৭ وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ ۖ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ۖ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُولَٰئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَكَانٍ بَعِيدٍ [٤١:٤٤] ...........বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। ......... মুমিনুন: ৪৪ তাই সৎ ও অসতের এ চিরন্তন যুদ্ধে আমাদের হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। এখানে প্রতিটি বিপদ, হতাশ হওয়ার প্রতিটি কারণ আমাদের উদ্দীপনা ও উৎসাহ শুধু বাড়িয়েই দিতে পারে।

তাই খারাপ ও ভাল’র মধ্যে এ চিরন্তন যুদ্ধে আমরা যদি হতাশ না হই তা হলে চরম হতাশ ইবলিসকে ও তার এম্বাসেডরদের আমরা পরাজিত করতে পারব, ইনশাল্লাহ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.