"লেখা কম, পড়া বেশি" ব্লগার
আজ আমি উইকিপিডিয়ায় ব্লাগারদের যুক্ত হওয়ার একটি প্রজেক্ট নিয়ে লিখব।
নিতান্তই নতুন না হলে আমরা সবাই ব্লগার রাগিব হাসান কে চিনি। তিনি মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার ইংরেজি সংস্করনের একজন প্রশাষক। তাঁর হাত ধরেই উইকিপিডিয়ার বাংলা সংস্করণের পথচলা শুরু হয়েছিল। তিনি উইকিপিডিয়ায় স্বেচ্ছাসেবী কর্মী সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ব্লগও ফোরামে দীর্ঘ দিন ধরে লিখে আসছেন।
ব্লগ জগতে তিনি মূলত সামহয়ারইন এবং সচলায়তনে বেশি লিখে থাকেন।
১২-০৯-২০০৯ তারিখে তিনি সচলায়তন ব্লগে “উইকিপিডিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের কালো থাবা -- প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই!” শীর্ষক লেখায় জানান যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামাত-শিবির সুকৌশলে ইংরেজী উইকিপিডিয়ায় কুখ্যাত রাজাকারদের জীবনী নিবন্ধে তথ্য বিকৃতির চেষ্টা করছে। তারা সেখানে ঐসকল রাজাকারদের নামে নতুন নিবন্ধ তৈরি করছে এবং এতে এমন ভাবে তথ্য দিচ্ছে যাতে করে কোন পাঠকের কাছে মনে হয়—“এই রাজাকারগুলো খুব একটা খারাপ মানুষ নন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় তেমন বড় মাপের নেতা ছিল না এবং তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তার অধিকাংশই রাজনৈতিক মতবিরোধের কারনে অপপ্রচার”। যেহেতু বিশ্বজুড়ে উইকিপিডিয়া মোটামুটি নির্ভরযোগ্য তথ্য সম্ভার হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই কোন ভিন দেশি মানুষ এই নিবন্ধগুলো পড়ে সহজেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। আর সেটাই এই অপশক্তির মূল লক্ষ্য।
উইকিপ্রশাসক এবং এর কর্মী বাহিনী অতন্দ্র প্রহরীর মত পাহারা দিয়ে এসব বদমাশদের বিকৃত তথ্য অপসারন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিষয়ে অসংখ্য নিবন্ধের নিয়মিত দেখভাল করা এবং তথ্য বিকৃতি থেকে মুক্ত রাখা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এই কাজটিই খুব সহজ হয়ে যায় যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিত অল্প করে সময় দিয়ে নিবন্ধগুলোর উপর নজর রাখবে এবং বিকৃত তথ্য অপসারন করে। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে এমন স্বেচ্ছসেবক বা উইকিপিডিয়ানদের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। এ কারনে রাগিব হাসান ব্লগারদের আহবান করেন যাতে তারা ইংরেজি উইকিতে স্বাধীনতা বিরোধীদের জীবনী নিবন্ধগুলোকে পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এবং সেগুলোর তথ্য বিকৃতি ঠেকাতে নিয়মিত নজরদারি করেন।
তাঁর এই ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক ব্লগার উইকিতে তথ্য প্রমাণ সহ স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে নিবন্ধ লেখেন। এছাড়া রাগিব হাসানের ঐ পোস্টে ব্লগাররা মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংবলিত বিভিন্ন রেফারেন্সের অসংখ্য লিংক এক জায়গায় জমা করেন।
পরবর্তীতে তিনি সচলায়তন ব্লগে “উইকিযুদ্ধ” নামে একটি প্রকল্প হাত নেন। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং কার্যপদ্ধতি তিনি সেখানে দুইটি ভিন্ন পোস্ট দিয়ে বর্ননা করেন ( উইকিযুদ্ধ - মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার সমবেত প্রয়াস পর্ব-১ এবং পর্ব-২)। সংক্ষেপে বলতে গেলে তিনি এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্লগারদের সহযোগিতায় বাংলা উইকিপিডিয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেন।
তিনি সেই পোস্টে মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর শিরোনাম দিয়ে বাংলা ও ইংরেজি উভয় উইকিপিডিয়াতেই সে বিষয়ে নিবন্ধ সৃষ্টি, পরিবর্ধন, পরিমার্জন এবং ছবি সংযোজন করার জন্য ব্লগারদের অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সচলায়তন এবং বিভিন্ন ব্লগের ব্লগাররা উইকিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কোন শিরোনামের নিবন্ধ কতটুকু উন্নয়ন করা হল, তিনি তা রঙিন কালিতে দেখার ব্যবস্থা করেন। শিরোনামের রং লাল হলে বুঝতে হবে এই শিরোনামে এখনো কোন নিবন্ধ সৃষ্টি করা হয়নি, তৈরি করা প্রয়োজন। হালকা সবুজ দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে এই নামে উইকিতে একটা নিবন্ধ আছে, তবে তা তেমন একটা তথ্যবহুল নয়, এতে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন প্রয়োজন।
আর গাঢ় সবুজ রং দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে এই শিরোনামের নিবন্ধটি বেশ তথ্যবহুল।
এভাবে পরবর্তী মাসগুলো জুড়ে দারুন দ্রুততার সাথে “উইকিযুদ্ধ” চলতে থাকে। ২৪-১২-২০১০ তারিখে সচলায়তন ব্লগার হিমু তার একটি লেখায় উইকি যুদ্ধ প্রজেক্টের সাথে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেন। এরই মাঝে গৌতম নামে একজন ব্লগার তার একটি লেখায় বলেন যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উইকিযোদ্ধাদের যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করবে। এভাবেই ব্লগারদের সহযোগীতায় উইকিযুদ্ধ এগিয়ে যেতে থাকে।
সচলায়তন ব্লগ কতৃপক্ষ তাদের হোম পেজে উইকি যুদ্ধ নামে আলাদা একটি লিংক যোগ করেন, যাতে ক্লিক করলে ব্লগাররা রাগিব হাসানের সেই উইকিযুদ্ধ সংক্রান্ত পোস্টটিতে চলে যেতে পারেন।
আপনিও নিচের লিংকগুলোতে গিয়ে উইকিযুদ্ধের কর্মযজ্ঞ দেখতে পারেন এবং তাতে অংশ নিতে পারেন।
• উইকিপিডিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের কালো থাবা -- প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই!—রাগিব হাসান
• উইকিযুদ্ধ - মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার সমবেত প্রয়াস পর্ব-১ এবং পর্ব-২। —রাগিব হাসান
• উইকিযুদ্ধে শামিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। --গৌতম
আমরা যারা ব্লগ ব্যবহার করি, তারা হচ্ছি দেশের অগ্রসর জনগোষ্ঠীর একাংশ।
আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদ ইন্টারনেট রয়েছে আমাদের নাগালের মাঝে। উইকিতে আমাদের অবদান রাখা যতটা সহজ, অন্যদের জন্য ততটা সহজ নয়। আমরা যদি সেই সুযোগ ব্যবহার করে দেশের মানুষের জন্য একটি মুক্ত জ্ঞানভান্ডার গড়ার কাজে হাত লাগাই, তবে কিছুটা হলেও দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কমবে। আর সামহয়ারইন হল বাংলায় সবচেয়ে বড় ব্লগ। এই বিশাল কমিউনিটি ব্লগের একজন ব্লগার হয়ে আমরা কি পারিনা এমন এক মহতি উদ্যোগে আমাদের হাত লাগাতে? আর এজন্য বেশি কষ্ট করার দরকার নেই।
দিনে মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় দিয়েই আমরা উইকির উন্নয়নের অংশীদার হতে পারি। আপনি এখানে যেসব কাজ করতে পারেন সেগুলো হল—
• পর্যাপ্ত তথ্যসূত্র সহ নতুন নিবন্ধ লেখা।
• পূর্বে লেখা নিবন্ধগুলোর মানোন্নয়ন করা ( যেমনঃ- বানান ঠিক করা, প্রয়োজনীয় আরও তথ্য সংযোজন করা, কারন বর্ননা সাপেক্ষে ভূল তথ্য অপসারন করা, পর্যাপ্ত তথ্যসূত্র সংযোজন করা ইত্যাদি। )
• কোন নিবন্ধে নিয়মিত নজর রাখা। কেউ তথ্য বিকৃতির চেষ্টা করলে তা আবার সংশোধন করা।
• যে গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধগুলো বাংলা উইকিতে আছে কিন্তু ইংরেজি উইকিতে নেই, সেগুলো ইংরেজি উইকিতে অনুবাদ করে দেওয়া। একই ভাবে ইংরেজি উইকির গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধগুলো বাংলা উইকিতে অনুবাদ করে দেওয়া।
• নিবন্ধ সংশ্লিষ্ট ছবি আপলোড করা। ( এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে ছবিটি যেন কপি রাইট ফ্রী হয় এবং এর মালিক যেন অবগত থাকেন যে তার ছবি অন্য কেউ মালিকের নাম প্রকাশ সাপেক্ষে যেকোন অবাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। বিস্তারিত এখানে দেখুন ।
)
উইকিতে কেমন করে কাজ করতে হয়, তা উইকির টিউটোরিয়ালে জানতে পারবেন। আর উইকিতে কোন সাহায্য প্রয়োজন হলে কি করবেন তা জানতে এই পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেন।
ব্লগার রাগিব হাসান সময়ের অভাবে উইকিযুদ্ধ সংক্রান্ত পোস্টগুলো সামহয়ারইনে দিতে পারেন নি। আমি তার কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে এই সামারাইজড পোস্টটি দিলাম। কোন তথ্য আমার চোখ এড়িয়ে গেলে বা কোন ভুল আপনার চোখে পড়লে এখানে মন্তব্য আকারে জানালে বাধিত হব।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।