পৃথীবিতে কিছু নীল মানুষ আছে যাদের জন্য পৃথীবি কখনও কাঁদেনা। অথচ পৃথীবিটা কেবল বেঁচে আছে ওই নীল মানুষদের ভালোবাসায়। যারা নীরবে নি:স্বার্থভাবে পৃথীবি সাজাতে গিয়ে একসময় নিজেরাই হারিয়ে যায়। আমিও হারাতে চাই ও নীল মানুষদের দলে।
১.
একদিন এক চায়ের স্টলে হোজ্জা সবাইকে বললেন, ‘আমি একজন অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি।
’
‘বেশ, তাহলে আজ দুপুরে আমাদের সবাইকে খাওয়ান’, সবচেয়ে চতুরজন কথাটা বলল।
হোজ্জা তাদের নিয়ে নিজ বাসার দিকে রওনা দিলেন।
বাড়ির কাছে এসে হোজ্জা বললেন, ‘আমি আগে আগে বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে বলি আর তোমরা আসতে থাকো। ’
খবরটা শোনার পর স্ত্রী রেগে আগুন, ‘ঘরে কোনো খাবার নেই, ওদের ফিরে যেতে বলো। ’
‘তা পারব না, আমি যে অতিথিপরায়ণ, তার একটা সুনাম আছে।
’
‘বেশ, তাহলে তুমি ওপরের তলায় গিয়ে বসো; আমি ওদের বলছি তুমি বেরিয়ে গেছ, বাড়িতে নেই। ’
এক ঘণ্টা পর অতিথিরা এসে দরজায় ধাক্কা দিল আর বলতে লাগল, ‘আমাদের ভেতরে ঢুকতে দাও হোজ্জা। ’
হোজ্জার স্ত্রী দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন।
‘হোজ্জা তো বাড়ি নেই। ’
‘সেকি আমরা তো তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি আর দরজার দিকে লক্ষ রেখেছি তার ঢোকার পর থেকে।
বের তো হয়নি। ’
স্ত্রী চুপ করে গেলেন।
ওপরতলার জানালা দিয়ে হোজ্জা পুরোটাই দেখছিলেন। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে জানালা দিয়ে ঝুঁকে বললেন, ‘আমি কি পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে যেতে পারি না?’
২.
হোজ্জাকে একদিন একজন রাস্তায় থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আজকে সপ্তাহের কোন দিন?’
‘বলতে পারব না’, জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমি এই এলাকায় নতুন। জানি না এখানকার মানুষেরা সপ্তাহের কোন দিনটি মেনে চলে।
’
৩.
একরাতে হোজ্জার প্রতিবেশী হোজ্জার বাসা থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেল।
পরদিন সকালে তাদের দেখা হলে প্রতিবেশী হোজ্জাকে জিজ্ঞাস করলেন।
‘ভাই সাহেব, গতকাল আপনার বাসা থেকে ভারী কিছু পতনের শব্দ শুনলাম, কি হয়েছে?’
‘আর বলবেননা, কালকে আমার বিবি রাগ করে আমার কুর্তা উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়’।
‘কুর্তা ফেলে দিলে এত শব্দ হয়’। প্রতিবেশী অবাক।
‘কুর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম’, হোজ্জার ত্বরিত উত্তর।
৪.
বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একটা গরু কিনল। কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায়, একটা ঘুমাইলে আরেকটাকে দাঁড়ায় থাকতে হতো। প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করছে:
“হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে”
পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে। প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যুতে হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকায়ে বলল:
“কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!”
৫.
একবার এক লোক হোজ্জার কাছে একটা চিঠি নিয়ে এসে পড়ে দেওয়ার অনুরোধ করল।
হোজ্জা পড়ার চেষ্টা করে বিফল হয়ে বলল, ‘লেখাটা দুষ্পাঠ্য তাই পড়া যাইতেছেনা। ’ লোকটা খেপে গিয়ে বলল, ‘একটা সাধারণ চিঠি পড়তে পারনা আবার মাথায় পাগড়ি পরছ’। হোজ্জা তাড়াতাড়ি নিজের পাগড়ি খুলে লোকটার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলল, ‘এইযে এখন তোমার মাথায় পাগড়ি আছে, এইবার তুমি দেখোতো চিঠিটা পড়তে পারো কীনা?’
৬.
এক তুর্কোমানের ষাঁড় হোজ্জার বাগানের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে তছনছ করে দিয়ে মালিকের কাছে ফিরে গেল। হোজ্জা পুরো ব্যাপারটা লক্ষ করলেন, তারপর একটা বেত নিয়ে বেরিয়ে এসে ষাঁড়টাকে পেটাতে শুরু করলেন।
‘কোন সাহসে আমার ষাঁড়কে আপনি পেটাচ্ছেন!’ তুর্কোমান চেঁচিয়ে বলল।
‘কিছু মনে করবেন না আপনি’, হোজ্জা বললেন, ‘ও পুরো ব্যাপারটা জানে। এটা ওর আর আমার ব্যাপার!’
৭.
‘আমি যখন মরুভূমিতে গিয়েছিলাম তখন আমার কারণে একটি বেদুইন গোষ্ঠী দৌড়ের ওপর ছিল। ’ একদিন হোজ্জা বললেন সবাইকে গর্বের সঙ্গে।
‘কিন্তু কীভাবে?’
‘একেবারে সহজ। হঠাৎ ওদের সামনে দিয়ে যেই দৌড় লাগিয়েছি, অমনি পুরো দলটা আমার পিছু পিছু দৌড় লাগাল, ব্যস।
’
৮.
একদিন বাদশা হোজ্জাকে বললেন, ‘হোজ্জা, কাল থেকে আমি আর আয়নায় নিজের চেহারা দেখব না। আমার চেহারা যে এত বিচ্ছিরি, তা এত দিনে জানলাম। ’
জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘হুজুর, মাফ করবেন, আয়নায় নিজেকে দেখে বলছেন আপনি দেখতে বিচ্ছিরি। কিন্তু এই এত দিন সবাই আয়না ছাড়াই আপনাকে দেখতে বাধ্য হয়েছে। ’
৯.
হোজ্জা একটা স্টল খুলে ওখানে নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন।
‘যেকোনো বিষয়ে দুই প্রশ্নের জবাবের বিনিময়ে পাঁচ পাউন্ড। ’
একজন পথচারী হন্তদন্ত হয়ে তাঁর কাছে এসে টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, ‘দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ পাউন্ড, একটু বেশি নয় কি?’
‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন’, হোজ্জা বললেন, ‘এর পরের প্রশ্ন?’
"রেটটা একটু কমানো যায় না?"
"না, কমানো যায়না। আপনার দুটো প্রশ্ন করা হয়ে গেছে। আপনি এবার আসুন। "
১০.
একদিন হোজ্জা তাঁর বাড়ির চারপাশে শুকনো খাবারের টুকরো ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।
‘কী করছেন হোজ্জা?’ একজন জিজ্ঞেস করল।
‘বাঘকে দূরে সরিয়ে রাখছি। ’
‘কিন্তু এ এলাকায় কোনো বাঘ তো নেই। ’
‘ঠিক বলেছ, খুবই কার্যকর পদ্ধতি, তাই না?’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।