মাঝে মাঝে মনে হয় ওই দূর আকাশে ভেসে যেতে পারতাম, তাহলে আর ফিরতাম না।
জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করা হয়েছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টেই। পাসপোর্টে কভারের পরেই স্থান পাওয়া জাতীয় সঙ্গীত ভুল ছাপা হয়েছে। পরপর ছয়টি জায়গায় বানান ভুল, শেষ লাইনে একটি শব্দও বাদ দিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ নামটিও রাখা হয়নি।
এছাড়া দাড়ি-কমা ব্যবহারের নির্দেশও মেনে চলা হয়নি। যেখানে ড্যাশ-এর ব্যবহার রয়েছে সেখানে তা না দিয়ে অন্য লাইনে দেয়া হয়েছে। যেখানে কমার ব্যবহার রয়েছে সেখানে কমাও বাদ দিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত স্বরবিতান অনুযায়ী ৬টি/৭টি জায়গায় কমার ব্যবহারও করা হয়নি। এটি বাংলাদেশের কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন।
তবে আইন লঙ্ঘনের চাইতেও জাতীয় সঙ্গীতের এই বিকৃত রূপ বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছাবে - এটিই লজ্জার বিষয়।
কপিরাইট আইন অনুযায়ী রবীন্দ নাথ ঠাকুরের রচনা এখন জনসম্পত্তি। কিন্তু যখন সৃষ্টিশীল কাজ উদ্ধৃতি করা হবে তখন রচয়িতার নাম অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এটা হচ্ছে রচয়িতার অধিকার। এছাড়া তার লেখা অবিকৃতভাবে উদ্ধৃতি করতে হবে।
কিন্তু পাসপোর্টে কবি লিখিত বানানের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।
জাতীয় সঙ্গীতের নবম লাইন থেকে দ্বাদশ লাইনে ‘কী’ শব্দটি রয়েছে ছয়বার। এর মধ্যে ছয়বারই শব্দটি ‘কি’ হিসাবে ছাপা হয়েছে। যেমন ‘আমি কী দেখেছি মধুর হাসি। ।
’ এখানে রবীন্দ নাথ লিখিত বানান বদলে লেখা হয়েছে ‘কি’। এছাড়া সঙ্গীতের সবশেষ লাইনে ‘ওমা’ শব্দটি পুরোপুরি বাদ দিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কপিরাইট বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি কপিরাইটের লঙ্ঘন। রাষ্ট্রীয় কাজে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বকারী বই বা কাগজপত্রে অবশ্যই কপিরাইট আইন মেনে এবং যথাযোগ্য সম্মানের সাথে জাতীয় সঙ্গীতের ব্যবহার করা উচিত। রাষ্ট্রই যদি জাতীয় সঙ্গীতকে সম্মান না দেয় তবে দেশের মানুষও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে না।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেফায়েতুল্লাহ জানান, এই পাসপোর্টের যাবতীয় বিষয় যখন সরকার থেকে অনুমোদন পেয়েছে, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। কিন্তু তারপরও এই ভুল হয়ে যাবার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এই ভুল সংশোধন করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। খুব দ্রুতই এটা ঠিক করা হবে।
এই ‘কি’ ও ‘কী’ ব্যবহার আপাতদৃষ্টিতে খুব হালকা মনে হলেও তা নয়।
‘কি’ ও ‘কী’র দ্যোতনা পৃথক, প্রয়োগক্ষেত্রও পৃথক।
এদিকে, গত রবিবার সরকার জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় প্রতীকের অবমাননা করলে শাস্তির বিধান রেখে এ সংক্রান্ত সংশোধন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যান্থেম, ফ্ল্যাগ ও অ্যামব্লেম সংশোধন আইনের এই খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। এটি জাতীয় সংসদে পাস হলে তা আইনে পরিণত হবে। এ আইনে আগে এ সংক্রান্ত অবমাননায় শাস্তির বিধান ছিল না।
নতুন খসড়ায় সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা একসঙ্গে উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
View this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।