আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি অনেক আঁধার আমাকে ছিন্নভিন্ন করেছে। নীল হয়েছে আমার শিরা উপশিরা । তবু - তবু, আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি । তোমাকেই শুধু তোমাকেই -
আজ ঐতিহাসিক আসাম রেফারেন্ডাম দিবস। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ জুলাই ঐতিহাসিক গণভোটের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চল আসাম থেকে বাংলায় যুক্ত হয়।
ওই গণভোটের অনেক পূর্ব থেকেই সিলেটকে বাংলার সাথে যুক্ত করার আন্দোলন চলে আসে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে গণভোটের আয়োজন করা হয় এবং অভিন্ন সংস্কৃতির কারণে সিলেট অঞ্চলের জনগণ আসাম ত্যাগ করে বাংলায় চলে আসে। বিভিন্ন কারণে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিশেষ করে ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারতবর্ষকে ২টি রাষ্ট্রে বিভক্ত করে স্বাধীনতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিলে প্রস্তাবিত দুটি রাষ্ট্রের এলাকা ও সীমানা নিয়ে বিরাট জটিলতার সৃষ্টি হয়। দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে দেশ বিভক্তির যে ফর্মুলা সেই অনুযায়ী মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো পাকিস্তানে এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলো ভারতের সাথে যুক্ত রাখার জন্য মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস দাবি পেশ করে।
মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি অনুযায়ী সমগ্র আসাম, বাংলা পূর্ব পাকিস্তানে পড়ার প্রস্তাব ছিল। সমগ্র ভারতবর্ষে বেশকিছু এলাকা নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতিবিরোধ চলে আসলে ওই সমস্ত এলাকার সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের পছন্দমত রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার দাবি ন্যায় সঙ্গত বিধায় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সম্মতিক্রমে ১৯৪৭ সালের ৩ জুন পাঞ্জাব ও বাংলার জন্য ২টি বাউন্ডারী কমিশন গঠন করেন তৎকালীন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। সেই কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল সিলেট জেলার ভবিষ্যত নির্ধারণে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং বাংলার জন্য গঠিত কমিশনই আসাম প্রদেশের সীমা নির্ধারণে কাজ করবে। উল্লেখ্য যে, ছিল যে, সিলেট জেলার অনুষ্ঠিতব্য গণভোটের ফলাফল যদি সিলেটকে পূর্ব বাংলার সঙ্গে একত্রিভূক্ত করার পে যায় তবে বাংলার জন্য গঠিত সীমানা কমিশন সিলেট জেলা ও তৎস¤প্রতি জেলা সমূহের সীমানা চিহ্নিত করে ওইসব এলাকার ভারত বা পাকিস্তান অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। গণভোটের জন্য আসামের গভর্ণর মি. এইচসি ব্লাক'কে রেফারেন্ডাম কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
রেফারেন্ডাম কমিশনার ৬ ও ৭ জুলাই সোম ও মঙ্গলবার ১৯৪৭ সালে গণভোটের তারিখ নির্ধারণ করেন। নির্বাচনী প্রচার শুরু হলে সমগ্র জেলায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনী প্রচারে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ নেতাদের এক বিরাট দল সিলেটে আসেন। নেতাদের মধ্যে মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মৌলানা আকরাম খান, পীর বাদশা মিয়া, এইচএম ইস্পাহানি, ইউসুফ আলী চৌধুরী, আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, ফজলুর রহমান কাদের চৌধুরী, শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য। সমগ্র জেলায় মুসলমানদের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্টতা সত্তে¡ও গণভোটের ফলাফলে অনিশ্চিতা ছিল।
এর কারণ আসামের মতায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু ৬ ও ৭ জুলাইর গণভোটে সিলেট পূর্ব বাংলার পইে জনগণ রায় প্রদান করে। সামান্য ও বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই গণভোট সম্পন্ন হয়। ভোটারদের শতকরা উপস্থিতি ছিল ৭৮.৩ শতাংশ। মোট ভোট প্রয়োগ করে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৫২ জন।
পূর্ব বাংলার পে ভোট দেয় ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৯ জন এবং আসামের পে ভোট পায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৪ জন। সেই সময় সমগ্র সিলেট জেলার লোকসংখ্যা ছিল ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৫২৩ জন। অর্থাৎ মোট জনসংখার ১৭.৫৬৫ শতাংশ। এর কারণ হল যারা জমির খাজনা বা অন্য কোন প্রকার কর প্রদান করতেন কেবল তাদেরই ভোট দেয়ার অধিকার ছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।