সূত্রঃ বিডিস্পোর্টসনিউজডটকম
প্রতিবারই এমন সম্ভাবনা থাকে। কোন পক্ষটি এগিয়ে যাবে, লাতিনরা নাকি ইউরোপিয়ানরা। উরুগুয়ের বদান্যতায় লাতিনরাই এগিয়ে গিয়েছিল প্রথমবার। এরপর ইতালি টানা দু’বার জিতে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ইউরোপকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে আট বছর বিরতি থাকার পর বিশ্বকাপ আবার ১৯৫০ সালে শুরু হলে উরুগুয়েই সমতায় আনে লাতিনদের।
যে আসরটা স্মরণীয় হয়ে আছে একমাত্র বিশ্বকাপ হিসেবে যেবার কোন ফাইনাল ম্যাচ হয়নি। ১৬ দলের সেবারের আসরে গ্রুপ পর্বের সেরা চার দল নিয়ে ফাইনাল রাউন্ড রবিন লীগের মাধ্যমে শিরোপা নির্ধারিত হয়। লীগের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ে ২-১ গোলে স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে ব্রাজিল, সুইডেন ও স্পেনকে পেছনে ফেলে বিকল্প ফরম্যাটের ওই আসর জিতে নেয়। পরের আসর জিতল ইউরোপিয়ান শক্তি পশ্চিম জার্মানি। ’৫৮ ও ’৬২-এর টানা দুই বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল আবারও এগিয়ে দিল লাতিন আমেরিকাকে।
১৯৬৬’র বিশ্বকাপ জিতে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ইউরোপকে সমতায় আনার পরের আসরেই ব্রাজিল শুধু লাতিনদের এগিয়েই দিল না, প্রথম দল হিসেবে তিনবার বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে ট্রফিটাও চিরকালের জন্য নিয়ে গেল নিজ দেশে। এরপরের পালায় আবার জার্মানি। এলো সমতা। ১৯৭৮ সালে স্বাগতিক আর্জেন্টিনা প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতায় লাতিনরা এগিয়ে গেল আবার। ’৮২-এর স্পেন বিশ্বকাপে ইউরোপের সমতায় ফেরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সেমিফাইনালিস্ট চার দল ইউরোপিয়ান হওয়ায়।
শেষে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে আসর জিতল পাওলো রসির ইতালি। ’৮৬-তে তো সেই ম্যারাডোনা মহাকাব্যের সুবাদে আবারও উপরে উঠে গেল লাতিন আমেরিকা। পরের আসর জিতে দুই ঘরের ব্যবধানে এগিয়ে যেতে পারত লাতিনরা। কিন্তু আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে আগেরবারের ফাইনালে হারার প্রতিশোধ নেয় পশ্চিম জার্মানি। জার্মানির বদৌলতে ইউরোপ-লাতিন সমান সমান হওয়ার পর ব্রাজিল পরের আসরে নিজেদের চতুর্থ শিরোপা জিতে লাতিন ঝান্ডাকে উপরে তুলে দিল।
’৯৮-এর স্বাগতিক ফ্রান্স যখন ‘কিছুতেই ব্যবধানটা দুই করতে দেব না’ প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নেমেছিল তখন কিইবা করার ছিল তৎকালীন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের ? ব্রাজিল লাতিন গৌরব ফিরিয়ে আনল পরের এশিয়া আসরেই। কিন্তু ২০০৬ আসরে আর কিছুই করার থাকল না লাতিনদের। কেননা গতবারের ওই আসরের সেমিফাইনালটা যে হয়ে গিয়েছিল ইউরোপময়। এবার আফ্রিকার প্রথম আসরে প্রথমবারের মতো লাতিনময় সেমিফাইনাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লাতিন দলগুলো এবার একটা সমম্বিত ‘লাতিন হাওয়া’ ছড়িয়ে দিতে পেরেছে।
তাই হয়তো কোয়ার্টার ফাইনালে এবার তিন ইউরোপিয়ান দল জার্মানি, হল্যান্ড, স্পেনের বিপরীতে লাতিন দল চারটি- উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে। বাকি এক- আফ্রিকার ঘানা। লাতিন দলগুলোর কারও সঙ্গেই কারও কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হবে না। ব্রাজিল হল্যান্ডের বিপক্ষে, উরুগুয়ে ঘানার বিপক্ষে, আর্জেন্টিনা জার্মানির বিপক্ষে ও প্যারাগুয়ে স্পেনের বিপক্ষে জিতলে লাতিনদের সেই লালিত স্বপ্ন অপহরণ হবে। ৯-৯-এর শিরোপা সমতা আলতো করে ফাইনালের আগেই হেলে যাবে লাতিনদের দিকে।
আর এমনটা যদি দৈবচক্র ঘটে যায়, তখন সবার আগ্রহ থাকবে প্রথম সেমিফাইনালে ব্রাজিল উরুগুয়েকে এবং দ্বিতীয়টিতে আর্জেন্টিনা প্যারাগুয়েকে হারাতে পারে কি-না সেদিকে! তাহলেই তো বিশ্বকাপ ফুটবলের ৮০ বছরের ইতিহাসে ঘটে যাবে সেই ‘মহাস্বপ্নে’র ফাইনাল। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল। তবে যদি সেমিফাইনাল দুটো লাতিনময় না-ও হয়, লাতিনরা অবশ্য সেটা কোনদিনই চাইবে না, ফুটবল বিশ্বের আবেগ কিন্তু আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল মহারণের ক্ষেত্রে কস্মিন কালেও ‘না-হয়’কে প্রশ্রয় দেবে না। সব সত্যি হলে এ দু’দলের ফাইনালের আগে দেখা হবে না। বিশ্ব ফুটবলের দুই জননন্দিত দলের একে অপরের বিপক্ষে ফাইনালে লড়ার সে সম্ভাবনা যথেষ্টই আছে।
তারা খেলছেও তাদের ছন্দেই। ছন্দটা যদিও ধীরলয়ে আগুয়ান হয়েছে। তারপরও, দেখা যাক সময় কী বলে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।