মহলদার
আজ সকালটা ছিল মেঘাচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ফিল্ডে বের হতে হল এর মধ্যেই। হাওরের পাশ দিয়ে গ্রামের রাস্তায় হাঁটছি। একজন মৎস্যজীবী ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরছে।
থামলাম। উদ্দেশ্য কি মাছ ধরা পড়ে তা দেখা।
-কতক্ষন পর উঠাবেন?
-এইতো অক্ষনি।
-উঠান দেখি, মাছ দেখে যাই।
বলতেই লোকটা ভেসাল জাল উঁচু করল।
দেখলাম কিছু পুঁটি ও কিছু চান্দা মাছ উঠেছে। সব মিলিয়ে ১০০ গ্রাম ও হবে কিনা সন্দেহ। সাথে উঠেছে একটা বোয়াল মাছের বাচ্চা, ওটার ওজন ও হবে প্রায় ১০০ গ্রাম। দেখলাম লোকটা বোয়াল মাছের বাচ্চাটা বাইরে ফেলে দিল।
-ওটা ফেলে দিলেন যে?
-এইডা বড় হইলে আবার আমরাই ধরতাম।
এইডা আমাদের সংগঠনের শিক্ষা।
কথাচ্ছলে জানতে পারলাম লোকটি একটি প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত একটি মৎস্যজীবী সংগঠনের একজন সদস্য। জিজ্ঞেস করে আরো জানতে পারলাম সারাদিন মাছ ধরে সে ১০০/১৫০ টাকা পায়। কথা বলতে বলতে সে আবারো তার জাল তুলল। খেয়াল করলাম এবারও একটা বোয়ালের বাচ্চা উঠেছে এবং লোকটি বোয়ালের বাচ্চাটি বাইরে ফেলে দিল।
আমি আমার ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে তার একটা ছবি তুলব কিনা জানতে চাইলাম। লোকটা একটা হাসি দিয়ে সদয় অনুমতি দিল। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং তার কাজের প্রশংসা করে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে আবার হাঁটা শুরু করলাম। মনটা শ্রদ্ধায় নত হয়ে গেল এই মৎস্যজীবীর প্রতি। এমন মানুষ এখনো আমাদের সমাজে আছে।
সারাদিনে ওই লোকটার জালে যতগুলো বোয়াল মাছের বাচ্চা ধরা পড়ে তা যদি রেখে দিত তাহলে তার আয় হয়ত আরো অনেক বেশী হতে পারত। কিন্তু গরীব মানুষ হয়েও ঐ লোকটা একটা ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং সেটা রক্ষা করে চলেছে। অভাব ও লোভ হার মেনেছে তার সততার কাছে। আমাদের সমাজে আজ এমন লোকেরই যে বড় বেশী প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।