আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন : প্রেক্ষাপট বাঙালি ও আদিবাসী ক্ষুদ্র জাতিসত্তা

আমার অহংকারে, অহংকারী হয়ে , উষ্ণতার আগুন মেখে, পোড়াও আমাকেই : অচেনা দহনে... বাংলাদেশ বহু জাতির, বহু ভাষার, বহু সংস্কৃতির দেশ। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলটির অপর নাম ছিল ‘সমতট’ । এই সমতটের লোকেরাই পরবর্তীকালে ‘বাঙালি’ বলে পরিচিতি পেয়েছে। এ অঞ্চলে বৃহত্তর বাঙালি জাতি ছাড়াও ৪৫টি আদিবাসী জাতি বসবাস করেছে। এসব জাতিসমূহ যুগ যুগ ধরে নিজস্ব সমৃদ্ধ সমাজ, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, ধর্ম-ভাষা ও স্বতন্ত্র নৃ-তাত্ত্বিক পরিচিতি নিয়ে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে।

তাদের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাস, সামাজিক রীতিনীতি, ভৌগোলিক পরিবেশ, দৈহিক-মানসিক গঠন, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনযাত্রা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। সম্প্রতি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ভূ-খন্ডের সকল অধিবাসীকে বাঙালি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অস্বীকার করা হয়েছে সকল আদিবাসী সম্প্রদায়কে। আদিবাসীদের সংজ্ঞা হিসাবে জোসে মার্টিনেজ কোবো’র ১৯৮৪ সালে প্রদত্ত সংজ্ঞা-যা জাতিসংঘ ‘ওয়ার্কিং ডেফিনিশন’ হিসেবে গ্রহণ করেছে তা বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। এ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, ‘আদিবাসী সম্প্রদায়, জনগোষ্ঠী ও জাতি বলতে তাদেরকে বুঝায় যাদের ভূখন্ডের প্রাক-আগ্রাসন এবং প্রাক-উপনিবেশিক কাল থেকে বিকশিত সামাজিক ধারাসহ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রয়েছে যারা নিজেদেরকে ওই ভূখন্ডের কিয়দাংশে বিদ্যমান অন্যান্য সামাজিক জনগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র মনে করে।

বর্তমানে তারা সমাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীভুক্ত এবং নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও আইনি ব্যবস্থার ভিত্তিতে জাতি হিসাবে তাদের ধারাবাহিক বিদ্যমানতার আলোকে তারা তাদের পূর্ব-পুরুষদের ভূ-খন্ড ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ভবিষ্যত বংশধরদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ’ অর্থাৎ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী বলতে তাদেরকে বুঝায় যারা বহিরাগত দখল বা বসতিস্থাপনের পূর্ব থেকে নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের মূল অধিবাসীর বংশধর। ১৯৮৯ সালের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ১৬৯নং কনভেশনে আদিবাসী বলতে কাদের বুঝানো হয় তা বিধৃত হয়েছে। ওই কনভেনশনে বলা হয়েছে যে, ‘স্বাধীন দেশসমূহের জাতিসমূহ Õ যারা এই মর্মে আদিবাসী হিসেবে পরিগণিত যে, তারা ওই দেশটিতে কিংবা দেশটি যে ভৌগলিক ভূ-খন্ডে অবস্থিত সেখানে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপন কিংবা বর্তমান রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্ধারণ কাল থেকে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর বংশধর, যারা তাদের আইনসংগত মর্যাদা নির্বিশেষে নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর অংশ বিশেষ বা সম্পূর্ণ লালন করে চলেছে। ’ বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম নীতিমালায় ‘আদিবাসী’ শব্দটি সার্বিক অর্থে স্বতন্ত্র, ঝুঁকিগ্রস্ত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এক জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে যাদের মধ্যে বিভিন্ন মাত্রায় নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান থাকে : ‘(ক) যারা নিজেদের মনে করে একটি স্বতন্ত্র আদিবাসী সংস্কৃতির অধিকারী জনগোষ্ঠী হিসেবে এবং অন্যরাও এই পরিচিতির স্বীকৃতি দেয় (খ) প্রকল্প এলাকায় ভৌগলিকভাবে পৃথক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আবাসভূমি অথবা পুরুষানুক্রমিকভাবে ব্যবহৃত ভূখন্ড এবং এতদঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে যাদের যৌথ সম্পৃক্ততা রয়েছে (গ) তাদের প্রথাগত সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের প্রধানত সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে আলাদা (ঘ) একটি আদিবাসী ভাষা রয়েছে যা সচরাচর দেশের সরকারি ভাষা বা ওই অঞ্চলের প্রচলিত ভাষা থেকে পৃথক।

’ বাংলাদেশ হাইকোর্টের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় যেমন চাকমা বনাম কাস্টমস কমিশনার ও অন্যান্য (৫ বিএলসি, এডি, ২০০০, ২৯) মামলায় এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র ইত্যাদি আইনে ও সরকারি দলিলে ‘আদিবাসী’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত আইন যেমন ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি, ১৯৫০ সালের পূর্ববঙ্গ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাতন্ত্র আইন, ১৯৯৫ সালের অর্থ আইন ইত্যাদি আইনে এসব জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রের ২৬ (২) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ঐতিহ্যগত মালিকানা কিংবা ঐতিহ্যগত ভোগদখল, ব্যবহার, এবং একই সাথে অন্যথায় অধিগ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত ভূমি, ভূ-খন্ড ও সম্পদের উপর তাদের মালিকানা, ব্যবহার, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশের সংবিধানে আদিবাসীদের পরিচয়, অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও অধিকারের স্বীকৃতি আছে। ভারত, নেপাল, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, বলিভিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা প্রভৃতি দেশে সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি ভূমি অধিকার ও মালিকানাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

কিন্তু আমাদের দেশে সংবিধানে শাসকগোষ্ঠীর জাত্যাভিমান ও জাতিগত বৈষম্যের প্রতিফলন ঘটেছে। ‘সংবিধানের ৬। নাগরিকত্ব। (১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। (২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিতি হইবেন।

’ ‘সংবিধানের ২৩ক। উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি। রাষ্ট্র বিভিন্ন উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বেশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। ’ অর্থাৎ ‘আদিবাসী’ শব্দের পরিবর্তে ‘উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে যা আদিবাসীদের জাতিগত পরিচিতির ক্ষেত্রে অসম্মানজনক ও বিভ্রান্তিকর। উপজাতি বলাটা সেই জাতিকে অসম্মান করা।

কেননা উপজাতি অর্থ হল, পুরোপুরি জাতি নয়, জাতির কাছাকাছি। কিন্তু যাদের উপজাতি বলা হচ্ছে তারা লোকসংখ্যা ও এলাকা বিচারে ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু জাতি হিসাবে তারা একটি পূণার্ঙ্গ জাতিই। তাদের রয়েছে আলাদা ভাষা, আলাদা ইতিহাস, আলাদা জাতিসত্তা এবং আলাদা চেহারাও। আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রত্যেক জাতির আত্মপরিচয়ের সহজাত অধিকারকে খর্ব করে অসম্মানজনক ও বিভ্রান্তিকর পরিচিতি চাপিয়ে দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি উপনিবেশিক, সাম্প্রদায়িক, জাত্যাভিমানী ও আগ্রাসী মানসিকতারই প্রতিফলন। আদিবাসীরা নাগরিক হিসেবে অবশ্যই বাংলাদেশি, কিন্তু জাতি হিসেবে কোনোভাবেই বাঙালি নয়।

তারা জাতি হিসেবে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, খাসি, সাঁওতাল, মুন্ডা, মাহাতো, বর্মন ইত্যাদি। ৪৫টি স্বতন্ত্র জাতি। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে জোরেশোরে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। দেশে ভাষাগত সংখ্যালঘু যারা বাস করে তারা উপজাতি। আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনোভাবেই তাদের আদিবাসী বলা যায় না।

কারণ উপনিবেশিক শাসনামালের কারণে তারা কোনোভাবেই আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো উচ্ছেদ হয়নি। বাংলাদেশে সে পরিস্থিতি নেই। আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ায় ‘আদিবাসী জাতি’ বলতে যে অর্থে বুঝানো হয় সেই অর্থে কেবল ‘প্রথম বা আদি অধিবাসীদের’ বুঝায় না। সেই বৈশিষ্ট্য ছাড়াও যাদের সমাজব্যবস্থা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেশের মূলস্রোতধারার জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি হতে পৃথক, যারা রাষ্ট্রীয় আইনের চেয়ে প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে পারিবারিক আইন পরিচালনা ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি করে ভূমির সাথে যাদের নিবিড় সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে এবং যারা সাধারণভাবে মূলস্রোতধারার জনগোষ্ঠীর চেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে সেই অর্থে আদিবাসী হিসেবে বুঝানো হয়ে থাকে। শেষোক্ত বৈশিষ্ট্যের আলোকে বাংলাদেশের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশে যেমন ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, জাপান, নেপাল প্রভৃতি দেশেও এসব ক্ষুদ্র জাতিসমূহকে ‘আদিবাসী জাতি’ হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।

দেশের শাসকগোষ্ঠী কেবল আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দেখান কিন্তু তারা জাত্যাভিমানী ও সাম্প্রদায়িক দর্শনের কারণে এশিয়ার প্রেক্ষাপটে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি উল্লেখিত উদাহরণগুলি দেখতে আগ্রহী নন। আরো উল্লেখ্য যে, আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার মতো আদি বাসিন্দাদের পদানত করে দখল করার কোনো বিষয় বাংলাদেশে ঘটেনি বলে যা বলা হচ্ছে তাও সর্বাংশে সঠিক নয়। আইএলও বিধান অনুযায়ী ‘স্বাধীন দেশসমূহের জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, যাদের আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয় এই বিবেচনায় যে তারা রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনের কালে অথবা বর্তমান রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের কালে এই দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখ-ে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীর বংশধর ...’। ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনকাল অথবা বর্তমান রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ-কাল থেকে আদিবাসীরা এই ভৌগোলিক ভূ-খন্ডে ( বর্তমানে বাংলাদেশ ) বসবাস করে আসছে। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাবের যখন পরাজয় ঘটে তখন বাংলায় প্রতিবেশী রাজ্য হিসেবে কোচ রাজ্য, অহোম রাজ্য, গারো ও খাসিয়া রাজ্য, ত্রিপুরা রাজ্য, চাকমা রাজ্য ও আরাকান রাজ্য ইত্যাদি ছিল।

কালক্রমে এ সব রাজ্য ব্রিটিশ ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগকালে ব্রিটিশ ভারতকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তান হতে স্বাধীনতা লাভ করে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়টি সুস্পষ্ট ও ঐতিহাসিকভাবে সমর্থিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণ ‘ভূমিপুত্র’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

দেশ বিভাগের সময়কালে চল্লিশ দশকেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯৮.৫% লোক ছিল আদিবাসী বংশোদ্ভূত। বাকি ১.৫% ছিল বাঙালি জনগোষ্ঠী যারা চাকুরী ও ব্যসায়িক উদ্দেশ্যে সেখানে সাময়িক অবস্থান করছিল। ১৯৭৯ সাল থেকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার বাঙালি পরিবারকে (বিশেষ করে নদীভাঙনের এলাকার মানুষ) আদিবাসী জনগণের রেকর্ডিয় বা ভোগদখল এবং আদিবাসীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। ময়মনসিংহের আদিবাসী অধ্যুষিত শেরপুর, শ্রীবর্দী, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা এই ছয়টি অঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাসমূহকে ‘আংশিক শাসন-বর্হিভূত এলাকা’ হিসেবে চালু ছিল যা আদিবাসী অঞ্চলেরই সাক্ষ্য বহন করে। উত্তরবঙ্গের শ্বাপদ-সঙ্কুল বরেন্দ্র অঞ্চলকে বা মধুপুর গড় অঞ্চলকে কর্ষণযোগ্য ও বাসযোগ্য করেছে খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী এই আদিবাসীরা।

কিন্তু তাদের জায়গা-জমি, পাহাড়-বন, আবাসস্থল শক্তির জোরে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারা বর্তমানে নিজবাসভূমিতে পরবাসী একশ্রেণীর অসহায় মানুষে পরিণত হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের সময় থেকে তাদের উপর এই বঞ্চনা ও বৈষম্য আরো জোরদার হয়েছে। জাতিগত সমস্যার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য ও বঞ্চনা যতই অধিকারভিত্তিক গঠনমূলক সমাধানের পথ গ্রহণ করা হয় ততই সংখ্যালঘু জাতিসমূহের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে উঠে এবং সাথে সাথে ততই জাতীয় সংহতি ও অখন্ডতা অধিকতর সুদৃঢ় হয়ে উঠে। এসব জাতিসমূহকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী হবে এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র অধিকতর সম্প্রসারিত হবে।

এতে করে এদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও নৃতাত্ত্বিক বহুমাত্রিকতা অধিকতর সমৃদ্ধশালী হবে। তথ্যসূত্র : ১. কারা বাঙালি কেন বাঙালি - ড. মোহাম্মদ হাননান ২. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ কমিটির সুপারিশের উপর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিবৃতি। ছবি- আদিবাসী ব্লগ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.