আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদায় মহিউদ্দিন স্বাগত মঞ্জুর

দেশকে ভালবাসা

বিদায় মহিউদ্দিন স্বাগত মঞ্জুর* ভোটের ব্যবধান ৯৫ হাজার ৫২৮ * ভোট পড়েছে ৫৪.৫০ শতাংশ রফিকুল বাহার, চট্টগ্রাম৬৬ বছর বয়সী গুরু ও তিন মেয়াদের মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ৯৫ হাজার ৫২৮ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দিলেন ৫৬ বছর বয়সী শিষ্য এম মঞ্জুর আলম মঞ্জু। হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র বা চট্টগ্রামের নতুন নগরপাল। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার আগের দিন মঞ্জু নাটকীয়ভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। অনেকটা 'আন্ডারডগ' হিসেবেই তিনি তাঁর নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেছিলেন। সে কারণে তাঁর কাছে মহিউদ্দিনের এই পরাজয় সব মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

বিএনপি থেকে মঞ্জু সমর্থন পাওয়ার পর গত ১৯ মে কালের কণ্ঠে 'গুরু-শিষ্যের লড়াই' শিরোনামে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল এই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর। সেখানে মঞ্জু মহিউদ্দিনকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, 'তিনি এখনো আমার নেতা। ' একইভাবে মহিউদ্দিন মঞ্জুর উদ্দেশে বলেছিলেন, 'বাসায় গিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাব। ' মূলত মহিউদ্দিনের হাত ধরেই রাজনীতিতে মঞ্জুর উত্থান। গত বৃহস্পতিবারের নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পর ভোটের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা জেসমিন টুলীর অনমনীয় দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত পরদিন অর্থাৎ গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামের নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকলেও ছিল না সরকারি দল আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীরা। সরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে সর্বাধিক চার লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট পেয়েছেন বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মঞ্জুর আলম মঞ্জু (আনারস প্রতীক)। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী (জাহাজ প্রতীক) পেয়েছেন তিন লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ ভোট। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৭।

এর মধ্যে বৈধ ভোট পড়েছে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬৪, যা মোট ভোটের ৫৪.৫০ শতাংশ। ২০০৫ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৩১৮ ভোটের মধ্যে গৃহীত ভোটের পরিমাণ ৫৫.৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে বিজয়ী প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরী পেয়েছিলেন তিন লাখ ৫০ হাজার ৪৯১ ভোট। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেসমিন টুলী সবার উদ্দেশে বলেন, 'সংবেদনশীল এই নির্বাচনী ফলাফল যার বিপরীতে যাবে তিনিই এর বিরোধিতা করবেন। অল্প কিছু ভুলত্রুটি নিয়ে হালকাভাবে তাড়াতাড়ি ফলাফল ঘোষণা করতে হলে অনেক আগেই করতে পারতাম।

কিন্তু সবকিছু গুছিয়ে করায় একটু দেরি হলো। আমি আশা করব, এই নির্বাচনী ফলাফলের মাধ্যমে রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন দেখা যাবে। ' এ সময় তিনি তাঁর স্বাক্ষর করা নির্বাচনী ফলাফল মেয়র পদে বিজয়ী প্রার্থী এম মঞ্জুর আলমের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন। ফলাফল হাতে পেয়ে জেসমিন টুলীকে উদ্দেশ করে উচ্ছ্বসিত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি যেভাবে সামলালেন, তাতে আমি অভিভূত। আমি নিজে হলে এটি কখনোই পারতাম না।

আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। আপনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। ' ফলাফল হস্তান্তরের পর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে উপস্থিত বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা হাততালি দিয়ে স্লোগান শুরু করলে আমীর খসরু তাদের থামিয়ে দেন। তারপর বলেন, 'কেউ মিছিল করবেন না, স্লোগান দেবেন না, ধৈর্য ধরেন। শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে এলাকার মসজিদে মসজিদে শোকরানা আদায় করুন।

' এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল্লাহ-আল নোমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীসহ অন্য নেতারা। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ফল ঘোষণা নিয়ে বেধে যায় লঙ্কাকাণ্ড। ঠিক ১৯৯৪ ও ২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে যে টালবাহানা হচ্ছিল তার উল্টো ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কাছাকাছি এসে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছিল। ঘটনাস্থলের বাইরে এসে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

পরে দলের শীর্ষপর্যায়ের নির্দেশে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে উত্তেজনা কমে আসে। ঘোষিত সরকারি ফলাফলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠের টেলিভিশন প্রতীক পেয়েছে দুই হাজার ৮৩ ভোট। বাকি পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া (হেলিকপ্টার প্রতীক) আট হাজার ৮১৩, মোহাম্মদ রফিকুল আলম (তালা প্রতীক) ছয় হাজার ৫২১, মোহাম্মদ ইব্রাহিম (মোটরসাইকেল) দুই হাজার ২৬৭ ও জানে আলম (দোয়াত-কলম) এক হাজার ৯৫১ ভোট পেয়েছেন। ফলাফল ঘোষণার সময় তাঁদের কাউকেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বা এর আশপাশে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.