|এখনো মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভবনধস আর আগুনে পুড়ে মৃত্যুর পর এবার পাহাড়ধসে ৫৩ জন মানুষের মৃত্য দেখতে ও সইতে হলো। দৃশ্যত দুর্যোগটা প্রাকৃতিক হলেও এত মানুষের প্রাণহানির জন্য মানুষের কার্যকলাপই দায়ী। একের পর এক বিপর্যয় আমাদের জানিয়ে যাচ্ছে, ‘দিনে দিনে যত বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’। বহুদিনের উদাসীনতা আর দায়িত্বহীনতারই খেসারত হচ্ছে বহু মানুষের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু।
নির্বিচারে পাহাড় কাটা, কাটা পাহাড়ের তলে অবৈধ ও অপরিকল্পিত বসত করানোর জন্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো এক ধরনের মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। নরম মাটি থেকে তৈরি হওয়া এই পাহাড়গুলো এমনিতেই নাজুক, তার ওপর কেটে কেটে মাটি সরানোর ফলে এর ঢাল খাড়া হয়ে ধসে যাওয়ার অবস্থায় উপনীত হয়েছে। পাহাড়ের ওপর থেকে গাছ কাটা, এর ওপরকার ঘাসের আচ্ছাদন নষ্ট করাসহ নানাবিধ ক্ষতিকর কাজ ঝুঁকির মাত্রাকে বাড়িয়েছে। এ রকম অবস্থায় বৃষ্টির পানি পাহাড়ের নরম পাথরকে গলিয়ে ধসের সৃষ্টি করে। এ রকম মর্মান্তিকভাবেই ঝরে গেছে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী ৫৩টি প্রাণ।
ভোররাতে সবাই যখন বিছানায় ঘুমন্ত, ট্র্যাজেডিটি ঘটে তখনই।
এর আগে ২০০৭ সালেও চট্টগ্রাম শহরে পাহাড়ধসে ১২৮ জনের করুণ মৃত্যু ঘটেছিল। এর পর সরকার-নিযুক্ত কমিটির তদন্তে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছিল। তাতে পাহাড় কাটা বন্ধ, পাহাড়ের তলে বসবাস নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন করণীয় নির্দেশ করা হয়েছিল। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়দায়িত্বের প্রশ্নটিও তখন উঠেছিল।
কিন্তু বাস্তবে সুপারিশগুলো পালিত হয়নি। এ ধরনের করণীয় কেবল চট্টগ্রাম নয়, দেশের সব পাহাড়ি অঞ্চলের জন্যই কমবেশি প্রযোজ্য। কিন্তু যা প্রয়োজন তা উপযুক্ত সময়ে করা হয় না। অনেক সময় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের কাছেও তাদের জিম্মি থাকতে দেখা যায়। তাই পাহাড়প্রমাণ মৃত্যুর জন্য দায়ী বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাহাড়প্রমাণ গাফিলতি।
আজও যখন পাহাড়ের গায়ে ও নিচে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ অনন্যোপায় হয়ে বসবাস করছে, তখন জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মৃত্যুর এই মিছিল সংশ্লিষ্ট সবার বিবেককে পীড়া দেবে, তাদের দায়িত্বশীলতাকে জাগাবে, এটাই প্রত্যাশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।